প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভারতীয় সাহিত্য তাে বটেই, সমগ্র বিশ্বের সাহিত্যই পুথিনির্ভর। পুথির আনুষঙ্গিক বহু উপাদানের মধ্যে রয়েছে গ্রন্থপাটা, গ্রন্থচ্ছদ, গ্রন্থসূত্র, গ্রন্থচ্ছদসূত্র বা লেভি ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গ্রন্থপাটা বা পুথিপাটা।

সংস্কৃত পুট শব্দ থেকে ‘পাটা’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ— আবরণ। পুথির আবরণ বা ঢাকনাই হল গ্রন্থপাটা। পুথিকে ধুলাে, বালি, জলীয় বাতাস থেকে বাঁচানােই এর উদ্দেশ্য। আধুনিক পরিভাষায় গ্রন্থের মলাটই হল গ্রন্থপাটা। প্রাচীনকালে দু-খণ্ড কাঠ দিয়ে পুথিপাটা তৈরি হত। তুলােট কাগজের পুথির পাটা হিসেবে নিম, কাঁঠাল, সেগুন, শালকাঠের টুকরাে ব্যবহার করা হত। পুথির মাপের উপরে পাটার মাপ নির্ভর করত। গ্রন্থপাটাকে অনেকসময় আধুনিক ছাপা বইয়ের মলাটের প্রচ্ছদচিত্রের মতােই নানান রঙে, রেখায় বা খােদাই করা কাজের মাধ্যমে অলংকৃত করা হত। গ্রন্থপাটা ছাড়াও পুথির পৃষ্ঠায় নানা বর্ণের বিষয়ানুগ চিত্র ও অলংকরণও চোখে পড়ে। এর মধ্যে দিয়ে চিত্রকলাচর্চার এক বিশেষ ঐতিহ্য ধরা পড়ে, যা গ্রন্থমালিক ও শিল্পীর রুচিরও পরিচায়ক।

শিল্পশৈলীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাটাচিত্রকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- (১) রাজস্থান ও পাহাড়ি শৈলী, (২) ওড়িশি শৈলী, (৩) স্থানীয় লােকায়ত শৈলী— যার মধ্যে রয়েছে বিয়ুপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি, বীরভূম, মেদিনীপুর, মুরশিদাবাদ ও কোচবিহার জেলায় প্রাপ্ত পাটাচিত্র।