বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই গদ্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বাংলা গদ্যের এ বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারে সাময়িকপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলা গদ্যের এবং এর বহুমুখী প্রয়োগ করার পিছনে সাময়িক পত্রিকাগুলোর দান অপরিসীম। সাময়িক পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বহু লেখকের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এসব লেখকের একদিকে যেমন সৃষ্টি এবং অনুশীলনের যেমন সুযোগ ঘটেছে তেমনি পত্রিকার সংস্পর্শে পাঠকদের মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ হয়েছে। সুতরাং সাহিত্যের উন্নতি, লেখক ও পাঠক সমাজের সম্প্রসারণ এবং গদ্যের স্বচ্ছতা প্রভৃতি সবকিছুই সাময়িক পত্রিকার প্রত্যক্ষ ফল। সাময়িক পত্রিকার এ উৎকর্ষের ফলাফল পেয়েছে গদ্য সাহিত্য’।

বাংলা গদ্যের বিকাশে যেসব সাময়িক পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে সেসব পত্রিকার মধ্যে দিগদর্শন, সমাচার, দর্পণ, বাঙালা গেজেট, সম্বাদ কৌমুদী এবং সমাচার চন্দ্রিকা অন্যতম। ঈশ্বরগুপ্তের সংবাদ প্রভাকর প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকা। এর মাধ্যমে শুধু বাংলা গদ্যরীতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি বরং এ পত্রিকার পাতায় সাহিত্য ক্ষেত্রে নতুন পরীক্ষার সূত্রপাত এবং বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখকের আবির্ভাব ঘটে। অক্ষয়কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় সুষমা, গাম্ভীর্য, বাকসংযম প্রভৃতি গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য ছিল। প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘মাসিক পত্রিকা’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতী’ এবং প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্র পত্রিকা বাংলা গদ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়া দীনেশ রঞ্জন দাসের ‘কল্লোল’ পত্রিকাটি বাংলা গদ্যের বিকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। এ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ কবিদের উদ্ভব ঘটে। কল্লোল পত্রিকাকে কেন্দ্র করে আধুনিক কবি সাহিত্যিকরা রবীন্দ্র বিরোধিতা শুরু করেন।

পরিশেষে একথা বলাই যুক্তিযুক্ত যে, বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূত্রপাতে বিভিন্ন প্রবন্ধ নিবন্ধ ও গদ্যের বিকাশে সাময়িকপত্রের দান ও বিচিত্র দিকনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।