বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইপাে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত চিত্রশিল্পী ছিলেন বলেই তার গদ্যের মধ্যে ছিল চিত্রধর্মিতা। বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক অনুসারে তার রচনাকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
রূপকথামূলক রচনা: ‘শকুন্তলা’ (১৮৯৫), ‘ক্ষীরের পুতুল’ (১৮৯৬), নালক’, ‘বুড়াে আংলা’ গ্রন্থগুলি শিশুমনের কল্পনার উপযােগী করে লেখা। তাঁর লেখা ‘রাজকাহিনীতে (১৯০৯) রাজপুত বীরদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
স্মৃতিচারণামূলক রচনা: অবনীন্দ্রনাথের দুটি স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ হল ‘ঘরোয়া’ ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ (১৯৪৪)।গ্রন্থ দুটিতে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির আভিজাত্য, সংস্কৃতি, রুচি, শিল্পসাধনা ইত্যাদি প্রসঙ্গ বিবৃত হয়েছে।
শিল্প-সংক্রান্ত রচনা: ‘ভারতশিল্প’ (১৯০৯), ‘বাংলার ব্রত’ (১৯১৯), ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৪)। বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী (১৯২৯) হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত উনত্রিশটি বক্তৃতার বই আকারে প্রকাশ।
পুথি ও পালাজাতীয় রচনা: ‘চাইবুডাের পুথি’, ‘মারুতির পুঁথি’, লম্বকর্ণপালা’, ‘গােল্ডেন গুজ পালা’।
অবনীন্দ্রনাথের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য: তাঁর গদ্য লেখার ভঙ্গি মজলিশি ধরনের। এর ফলে শ্রোতাও তাঁর গল্পের মধ্যে নিজেকে খুব সহজেই এক করে ফেলে। তার গদ্যের মধ্যে চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যায়। সংগীতধর্মিতা তাঁর গদ্যের একটি বড় গুণ। শব্দ, ছন্দ ও চিত্রকল্প রচনার সাহায্যে শিশুমনের উপযােগী কল্পনারাজ্য নির্মাণে বিশেষ দক্ষতাই তার গদ্যরীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বাংলা কাব্যসাহিত্যে, বিশেষত আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্যে, মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব এক বিস্ময়কর ঘটনা।
মধুসূদন বাংলা পয়ারের কাঠামাের মধ্যে অন্ত্যমিল তুলে দিয়ে অমিত্রাক্ষর ছন্দ বা অমিল প্রবহমান পয়ারের প্রথম প্রয়ােগ করেছিলেন ‘পদ্মাবতী’ নাটকের একটি জায়গায়। তারপর এই ছন্দে তিনি রচনা করেন চারটি সর্গে বিভক্ত একটি সম্পূর্ণ আখ্যানকাব্য— তিলােত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ)। সুন্দ উপসুন্দ বধের জন্য তিলােত্তমা নামের অপ্সরা সৃষ্টির পৌরাণিক কাহিনিকে নিজের মনের মতাে করে সাজিয়ে মধুসূদন দত্ত পরিবেশন করেন তাঁর এই কাব্যে।
মধুসূদন দত্তের সর্বাধিক পরিচিত কাব্য এবং শ্রেষ্ঠ কীর্তি নয়টি সর্গে বিন্যস্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ)। ‘তিলােত্তমাসম্ভব কাব্য’-এর অমিত্রাক্ষর ছন্দ ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এ আরও পরিণত হয়ে উঠেছে। মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম ও একমাত্র শিল্পসার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য (Literary Epic)। এই কাব্যে মধুসূদন ভারতীয় মহাকাব্যের আদর্শকে বর্জন করে পাশ্চাত্য আদর্শকে গ্রহণ করতে চাইলেও ভারতীয় আদর্শকে পুরােপুরি অস্বীকার করতে পারেননি। রামায়ণের কাহিনি ও চরিত্রগুলিকে তিনি নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে দ্বিধা করেননি। তাঁর এই কাব্যে রাম বা লক্ষ্মণ নন, রাবণ এবং মেঘনাদই নায়ক-সহনায়কে পরিণত হয়েছেন। কাব্যটির প্রশংসা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, ‘…the most valuable work in modern Bengali literature’ I
মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা অত্যন্ত উল্লেখযােগ্য দুটি কাব্যগ্রন্থ হল—’ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬২)। ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ হল গীতিকাব্য এবং ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ হল পত্রকাব্য।
বীরাঙ্গনা কাব্য: এই কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে সার্থক পত্রকাব্য রচনার দৃষ্টান্ত মধুসূদনই প্রথম স্থাপন করেন। রােমান কবি ওভিদের Heroides-এর অনুসরণে লেখা তাঁর ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এ আছে এগারােটি পত্র, যেমন-দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা, সােমের প্রতি তারা, দশরথের প্রতি কৈকেয়ী, নীলধ্বজের প্রতি জনা, দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী, পুরুরবার প্রতি উর্বশী ইত্যাদি। পুরাণ-মহাকাব্য ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত নারীচরিত্রগুলির মধ্য দিয়ে নারীত্বের বিচিত্ররূপকে ধরতে চেয়েছেন কবি। আলােচ্য পত্রকাব্যগুলিতে কাব্যরসের সঙ্গে নাট্যরসেরও সার্থক সমন্বয় লক্ষ করা যায়।
ব্রজাঙ্গনা কাব্য: মধুসূদনের অপর একটি উল্লেখযােগ্য কাব্য হল ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’। কাব্যটির নায়িকা হলেন রাধা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা এই কাব্যে রাধা একজন সাধারণ মর্ত্যমানবীরূপেই অঙ্কিত হয়েছে। কবির নিজস্ব স্বীকৃতি বা দাবি অনুযায়ী এটি ‘ওড’ (Ode) জাতীয় রচনা হলেও গীতিকবিতার মেজাজ কাব্যটিতে লক্ষ করা যায়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বাংলা কাব্যগুলি হল ‘তিলােত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০), ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬১), ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬২) এবং ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ (১৮৬৬)। এগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
মেঘনাদবধ কাব্য: নয়টি সর্গে বিন্যস্ত মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা সাহিত্যের একমাত্র শিল্পসার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য। অমিত্রাক্ষর ছন্দ এই কাব্যে সর্বোৎকৃষ্ট রূপ লাভ করেছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মহাকাব্যের যুগপৎ আদর্শে রচিত এই মহাকাব্যে রামায়ণের মাত্র তিন দিন ও দুরাত্রের ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনিটি রচিত হয়েছে। কিন্তু এই কাব্যে রাম-লক্ষ্মণ-বিভীষণ নন, রাবণ-মেঘনাদই নায়ক-সহনায়কে পরিণত হয়েছেন। আলােচ্য কাব্যটিতে রাজমহিষী চিত্রাঙ্গদার উক্তির মধ্যে দিয়ে নারীমুক্তির যে জাগরণ লক্ষ করা যায়, তা একান্তভাবেই মধুসূদনের অন্তরের ইচ্ছা। কবির এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নবজাগরণেরই অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি। মধুসূদনের এ কাব্যে উদাত্ত বীররস যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তাকে অতিক্রম করেছে করুণরসের সুর-মূর্ছনা। ভাব, বিষয় ও আঙ্গিকে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নতুন দিগন্তের বার্তাবহ। কাব্যটির প্রশংসা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, ‘.. the most valuable work in modern Bengali Literature’.
বাউল ধর্ম ও বাউলগানের স্বরূপ সম্পর্কে যা জান লেখাে।
লালন ফকিরের রচিত বাউলগান বিষয়ে যা জান লেখাে।
বাংলাদেশে প্রচারিত নাথ সাহিত্য সম্পর্কে যা জান লেখাে।
বাংলা সাহিত্যে পূর্ববঙ্গ গীতিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
সংক্ষেপে উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের পরিচয় দাও।
উনিশ শতকের নবজাগরণ বাঙালির সমাজজীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল সংক্ষেপে তা আলােচনা করাে।
উনিশ শতকের নবজাগরণ বাংলা সাহিত্যে কী প্রভাব ফেলেছিল সংক্ষেপে তা আলােচনা করাে।
‘দিগদর্শন’ থেকে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পর্যন্ত বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাস সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
সম্বাদ প্রভাকর থেকে ‘বঙ্গদর্শন’ পর্যন্ত বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাস সংক্ষেপে লেখাে।
সম্বাদ প্রভাকর সাময়িকপত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব লেখাে।
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব লেখাে।
বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে তত্ত্ববােধিনী পত্রিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
বাংলা সংবাদ ও সাময়িকপত্রের ইতিহাসে পরিচয় পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
‘সবুজপত্র’ পত্রিকার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ‘কল্লোল’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
সমালােচনা সাহিত্যধারার ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকাটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।
বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘ভারতী’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
‘সাধনা’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
‘প্রবাসী’ পত্রিকার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
বাংলা গদ্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা সম্পর্কে আলােচনা করাে।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগােষ্ঠীর মধ্যে প্রধানদুজনের নাম উল্লেখ করে বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশে এঁদের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।
বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘হুতােম প্যাঁচার নক্সা’র অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
বাংলা গদ্যসাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবদান সম্পর্কে লেখাে।
বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্যের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
প্রমথ চৌধুরীর দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখাে এবং তাঁর গদ্যরচনার বৈশিষ্ট্য বিচার করাে।
Leave a comment