ব্রাহ্মধর্ম প্রচারে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ভূমিকা অপরিসীম আলোচনা কর

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন এর সম্পাদক। এ পত্রিকাটি বাংলা গদ্যের ইতিহাসে নবযুগের সূত্রপাত করতে সক্ষম হয়েছিল। তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র হিসেবে এর প্রকাশ। সভার দূরবর্তী সদস্যদের ব্রহ্মজ্ঞানের অনুশীলন ও উন্নতি সাধন, রাজা রামমোহন রায়ের গ্রন্থে বিধৃত ব্রহ্মজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের প্রচার, ব্রহ্মের উপাসনা পদ্ধতি অবহিতকরণ, ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য কুকর্ম থেকে নিবৃত্তি করার উপদেশ বিতরণ প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে এ পত্রিকা প্রচারিত হয়। তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র রূপে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পত্রিকার প্রকাশ ঘটলেও বাংলা সাহিত্যে এর পরোক্ষ প্রভাবই মুখ্য হয়ে উঠেছিল।

ভাষার সুষমা, গাম্ভীর্য, বাকসংযম প্রভৃতি গুণ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য ছিল। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনায় অক্ষয়কুমার দত্ত যে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছিলেন তার সার্থকতায় প্রকাশ ঘটেছিল এ পত্রিকায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ সে আমলের শ্রেষ্ঠ গদ্যলেখক এ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বাংলা গদ্যরীতি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘তখন কেবল কয়েকখানা সংবাদপত্রই ছিল। তাহাতে লোকহিতকর জ্ঞানগর্ভ কোন প্রবন্ধই প্রকাশ হইত না। বঙ্গদেশে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা সর্বপ্রথমে সেই অভাব পূরণ করে। এ পত্রিকার আদর্শ পরে বিবিধার্থ সংগ্রহ ও রহস্যসন্দর্ভ প্রভৃতি পত্রিকার মধ্য দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শনে এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতীতে নবরূপ লাভ করে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।