প্রশ্নঃ বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের দশটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ। 

অথবা, প্রমিত বাংলা বানানের তিনটি নিয়ম লেখ। 

অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা কর। 

অথবা, প্রমিত বাংলা বানানের যে কোনো দশটি নিয়ম উদাহরণসহ উল্লেখ কর।

আধুনিক বাংলা বানান রীতিঃ বাংলা বানানের জটিলতা দূর করার জন্য কতিপয় নিময় প্রণয়ন করা হয়েছে। আধুনিক বা প্রমিত বাংলা বানানের বিশেষ বিশেষ নিয়মগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১.  রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্বঃ রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। এ নিয়ম তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি সকল শব্দের বেলায় প্রযোজ্য হবে। যেমন- অৰ্চনা, মূর্ছা, কার্তিক, কর্ম, কর্ণ, ধর্ম, সর্দার, বার্ধক্য, সর্ব, শর্ত, কর্তা, চর্বি, ফর্মা, জার্মানি ইত্যাদি।

২. সন্ধি হলে ‘ম’ স্থানে অনুস্বার (ং): সন্ধির সময় পদের অন্তস্থিত ম্- এর পর যদি ক, খ, গ, ঘ থাকে, তাহলে ‘ম’ স্থানে অনুস্বার (ং) লিখতে হবে। অনুস্বার (ং) স্থানে বিকল্পে ‘ঙ’ লেখা যাবে। যেমন- অহংকার বিকল্পে অহঙ্কার, অলংকার (অলঙ্কার), শুভংকর (শুভঙ্কর), শংকর (শঙ্কর), প্রলয়ংকর (প্রলয়ঙ্কর) ইত্যাদি।

৩. হস্ চিহ্নঃ শব্দ উচ্চারণের সময় শব্দান্তে ‘অ’ উচ্চারণে অনেক সময় সঠিক হয় না। তাই অনেক শব্দের শেষে হস্ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এ চিহ্ন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন- চেক, জজ, টন, মাল, চট, টক, করলেন, করবেন, হুক, কলকল, পকেট, ওস্তাদ ইত্যাদি।

৪. ই, ঈ-কারঃ 

ক. যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ‘ঈ’ থাকে, তবে তদ্ভব বা তৎসদৃশ শব্দে ঈ’ অথবা বিকল্পে ‘ই’ হবে। যেমন- পক্ষী > পাখী>পাখি, কুম্ভীর>কুমীর>কুমির, বাটী>বাড়ী>বাড়ি ইত্যাদি।

খ. স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন- মালিনী, রাণী, নেত্রী, প্রেয়সী, মহীয়সী, গুণবতী, ধনবতী, জননী, শ্রীমতী ইত্যাদি। কিন্তু অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে কেবল ই-কার হবে। যেমন- বিবি, দিদি, বৌদি, ঝি ইত্যাদি।

গ. ব্যক্তি বা পুরুষ বোঝাতে তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন- জ্ঞানী, মেধাবী, দুঃখী, শিল্পী, ধনী, বিলাসী, বিরোধী, অপরাধী, যাত্রী ইত্যাদি।

ঘ. জাতি ও ভাষার নামের শেষে নতুন নিয়ম অনুযায়ী ই-কার হবে। যেমন- জার্মানি, ইহুদি, ইরানি, ইংরেজি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি।

৫. উ, ঊ-কারঃ 

ক. তৎসম শব্দে ঊ-কার অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- বধূ, মূল, চূর; কিন্তু তদ্ভব ও বিদেশি শব্দে কেবল উ-কার হয়। যেমন- কবুল, চুন, মুলা, নিচু, খুশি, সুতো, বুড়ি ইত্যাদি।

খ. ক্রিয়াবাচক শব্দে শুধু উ-কার ব্যবহার হয়। যেমন- শুনা, বসুন, ঘুমানো, করুন ইত্যাদি। 

৬. জ, য সম্পর্কিতঃ নিম্নলিখিত শব্দগুলোতে ‘য’ না লিখে ‘জ’ লেখা বিধেয় যেমন— কাজ, জাউ, জাঁতা, জাতি, জুঁই, জোড়া, জোত, জোয়াল ইত্যাদি।

৭. ণ ও ন-এর ব্যবহারঃ সংস্কৃত বা তৎসম শব্দে ণ-ত্ব বিধান অনুযায়ী ‘ণ’ ব্যবহার হবে। যেমন- ঋণ, তৃণ, পাষাণ ইত্যাদি। দেশি, বিদেশি শব্দে এবং ক্রিয়াপদে কখনো ‘ণ’ ব্যবহার হবে না। যেমন- কান, সোনা, বামুন, ইরান, ধরেন, কুরআন, মারেন, গভর্নর ইত্যাদি।

৮. ও-কার ও ঊর্ধ্ব কমাঃ প্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের পার্থক্য বুঝানোর জন্য অতিরিক্ত ও-কার বা ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা বিধেয়। যদি অর্থ গ্রহণে অসুবিধা দেখা দেয়, তবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- কাল, কালো; মত, মতো; ভাল, ভালো; পড়, পড়ো; দুটি, দু’টি; একশ, একশ’ ইত্যাদি।

৯. ং, ঙ: তৎসম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেমন ব্যবহার্য ও ব্যাকরণসম্মত, সেখানে সেভাবে ব্যবহার করতে হবে। তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহার হবে। যেমন- রং, ঢং, সং, পালং, রাং, গাং ইত্যাদি।

তবে শব্দের শেষে অব্যয় বা বিভক্তিযুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ‘ঙ’ হবে। যেমন- বাঙালি, ভাঙন, রঙিন, রঙের ইত্যাদি।

১০. শ, ষ, সঃ মূল সংস্কৃত শব্দের অনুসরণে তৎসম ও তদ্ভব শব্দে শ, ষ বা স হবে। যেমন- অংশু>আঁশ, বংশ>বাঁশ, মশক>মশা ইত্যাদি।

বিদেশি শব্দে উচ্চারণ অনুসারে ‘S’ স্থানে ‘স’ এবং ‘sh’ স্থানে ‘শ’ হবে। বিদেশি শব্দে কখনো ‘ষ’ ব্যবহার হবে না। কারণ ‘ষ’ ধ্বনি বিদেশি ভাষায় নেই। যেমন- ক্লাশ, জিনিস, হিসাব, সাদা, আসল, সন, মসলা, খাস, পেনসিল, সবুজ, সিমেন্ট, খুশি, চশমা, পশম, পোশাক, পালিশ, শখ, শরবত, শরম, শহর, শয়তান ইত্যাদি।

১১. বিসর্গঃ শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন- করত, কার্যত, প্রধানত, মূলত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রয়াত, প্রায়শ ইত্যাদি।

পদ মধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে; তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদ মধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন- দুস্থ, নিস্পৃহ ইত্যাদি।

১২. ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দঃ ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ‘াে’-কার যুক্ত করতে হবে। যেমন- করানো, খাওয়ানো, বলানো, নামানো, পাঠানো, শোয়ানো ইত্যাদি।