উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একান্তভাবে আধুনিক যুগের সৃষ্টি। বাংলা গদ্যের জন্মের সাথে উপন্যাসের সৃষ্টির সম্পর্ক জড়িত। এদেশের সাহিত্যে উপন্যাসের লক্ষণ প্রথম ফুটে উঠে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে রচিত সমাজের ব্যঙ্গরসাত্মক চিত্রপ্রকাশক গ্রন্থগুলোর মধ্যে। ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবু বিলাস’ ও ‘নববিবি বিলাস’ গ্রন্থগুলোতে উপন্যাসের লক্ষণ তেমনভাবে ফুটে উঠেনি, এগুলো গল্পাকারে গদ্য। কালগত দিক থেকে উপন্যাসের প্রথম দাবিদার হ্যানা ক্যাথারিন মুলেন্স রচিত ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’। কিন্তু গ্রন্থটিতে সাহিত্য সৃষ্টির চেয়ে ধর্মপ্রচারের দিকে বেশি দৃষ্টি দেওয়া হয়, তাই উপন্যাস হিসেবে এটি সার্থকতা লাভ করতে পারেনি। উপন্যাসের প্রাথমিক চেষ্টায় প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। গ্রন্থটি নকশা জাতীয় এবং সবচেয়ে বেশি উপন্যাসের লক্ষণাক্রান্ত। সেই হিসেবে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ই বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রয়াস। এ প্রসঙ্গে কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’র নাম উল্লেখযোগ্য। গ্রন্থটিতে বিষয়বস্তুর কোন ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে এটি লোকরঞ্জক নকশা হিসেবেই পরিচিত। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘অঙ্গুরীয় বিনিময়’ও উপন্যাস নয়।

উপন্যাসের প্রাথমিক প্রচেষ্টার বিচিত্র পরীক্ষানিরীক্ষার কাল অতিক্রমের পর বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। বঙ্কিমচন্দ্র মোট ১৪ খানা উপন্যাস রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসই ঐতিহাসিক বা রোমান্স জাতীয়। এরপর মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’, ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ‘গাজী মিঞার বস্তানী’ প্রভৃতি বাংলা উপন্যাসের ধারাকে সমৃদ্ধ করে। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, বনফুল, প্রবোধ সন্যাল, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শহীদুল্লা কায়সার, জহির রায়হান প্রমুখ ঔপন্যাসিকের আবির্ভাবে বাংলা উপন্যাস বিকাশ ও পরিণতির পথে অগ্রসর হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।