এই পৃথিবীতে অবাক করার মত অনেক নদী রয়েছে আর বাংলাদেশে নদীর নাম উচ্চারণ করতে
গেলে আসে পদ্মা নদীর নাম। বিভিন্ন পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদের বাংলা অনুচ্ছেদ
– পদ্মা নদী সম্পর্কে লিখতে আসে। তাই আমি আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের
জন্য বাংলা অনুচ্ছেদ – পদ্মা নদী সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। তোমরা যারা
পরীক্ষায় বাংলা অনুচ্ছেদ – পদ্মা নদী লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

পৃথিবীতে যেমন আমাজন নদীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, কবিতা, তেমনি
বাংলাদেশের পদ্মা নদীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক গান, অনেক কবিতা, অনেক উপন্যাস।
পদ্মা নদী কখনো শান্ত কখনো উত্তাল। নিচে বাংলা অনুচ্ছেদ – পদ্মা নদী সম্পর্কে
বিস্তারিত লিখা হলো-

বাংলা অনুচ্ছেদ – পদ্মা নদী 

পদ্মা নদী বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। পৃথিবীর বুকে রয়েছে অনেক বিস্ময়কর
নদী যেমন- কঙ্গো, নীলনদ.জাম্বেসি ইত্যাদি। তেমনি বাংলাদেশে রয়েছে পদ্মা নদী।
বাংলাদেশে নদীর নাম উচ্চারণ করতে গেলেই প্রথমে আমাদের মনে আসে পদ্মা নদীর নাম। আর
এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের হিমালয় থেকে। বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত হলেও
ভারতে এই নদী গঙ্গা নামে পরিচিত। গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের কাছে
মেঘনা নদীতে এসে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা পদ্মা নদী নামে পরিচিত। 

পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার।তবে বাংলাদেশে এই
পদ্মা নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার। গঙ্গার নিম্ন স্রোত ধারার নামই হলো বাংলাদেশের
পদ্মা নদী। ভারতের গঙ্গা নদীর আন্তর্জাতিক অংশ বিশেষের নাম হল বাংলাদেশের পদ্মা
নদী। আর মূল নদী গঙ্গা নামে পরিচিত। পদ্মা নদীর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা গুলো হলো
ভৈরব, পশুর ও মধুমতি। পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা ১ হাজার ৫৭১ ফুট অর্থাৎ
৪৭৯মিটার। বাংলাদেশে এই পদ্মা নদীর উপর তৈরি হয়েছে একাধিক সড়ক সেতু ও রেল সেতু।

আরো পড়ুনঃ  সুন্দরবন – রচনা – সম্পর্কে জেনে নিন

পদ্মা নদী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল,
মাগুরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার ওপর
দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। পদ্মা আমাদের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত নদী হল ইলিশ মাছের
জন্য। পদ্মা নদীর ইলিশের সুস্বাদ এত বেশি যে পৃথিবীর যেকোন নদীর মাছকে সে হার
মানায়। পদ্মা নদী রাজনৈতিক আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে। যেমন ষাটের দশকের আন্দোলনের
প্রধান শ্লোগান ছিল “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা”। আর সেই আন্দোলনেরই
ফসল হল আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

পদ্মা নদী কখনো উত্তাল হয় এবং সে এত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে যে মুহূর্তের মধ্যে সে
সবকিছু বিলীন করে দেয়। পদ্মার এই ভয়ংকর রূপ দেখেই কবি লিখেছেন- “সর্বনাশা পদ্মা
নদী তোর কাছে সুধায়, বল আমারে তোর কিরে আর কূলকিনারা নাই”। আবার সে কখনো হয়
কমলমতি মায়ের মত শান্ত। আর পদ্মা নদীর এই দৃশ্য দেখে কত কবি, কত গীতিকার তাদের
অনুভূতির কথা লিখেছেন। পদ্মা নদীকে নিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় “পদ্মা নদীর
মাঝি” উপন্যাস লিখেছেন যা পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র হিসেবে দেশ-বিদেশে প্রশংসা
কুড়িয়েছে।

আবার আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র কার ঋত্বিক ঘটকের “দুর্বার গতি পদ্মা” চলচ্চিত্র
একইভাবে সমাদিত হয়েছে। বাংলাদেশে ও “বিদ্রোহী পদ্মা” নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি
হয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পদ্মা নদীর সঙ্গে তুলনা
করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখলেন -“যত কাল রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি,
মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান”। আর বাংলাদেশে এই পদ্মা
নদী ছিল বলেই রচিত হয়েছে এত গান, এত কবিতা। আর পদ্মা পাড়ের জীবন কাহিনী নিয়ে
লেখা হয়েছে উপন্যাস।

আরো পড়ুনঃ  লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

পদ্মা নদীর ওপর তৈরি হয়েছে একাধিক রেল ও সড়ক সেতু। এর একটি হল ঈশ্বরদীর কাছে
এবং অন্যটি মাওয়া ঘাটের কাছে। আর বাংলাদেশের আরেক বিজয় হলো পদ্মা নদীর ওপর তৈরি
সেতু যা বাংলাদেশের সবার কাছে স্বপ্নের সেতু “পদ্মা সেতু”। আর হয়তো এজন্যই
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতার মাধ্যমে পদ্মা নদী সম্পর্কে লিখেছেন

আমার নৌকা বাধা ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে,

হাঁসের পাতি উড়ে যেত মেঘের ধারে ধারে।

জানিনা মন কেমন করা লাগবে কি সুর হাওয়ার,

আকাশ বেয়ে দূর দেশেতে উদাস হয়ে যাওয়ার।