বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত লােকশিল্প হল চারশাে বছরের পুরোনা দশাবতার তাস। মল্লরাজ বীরহাম্বীরের সময় থেকে বিষ্ণুপুরে দশাবতার তাস খেলা শুরু হয়।

বিষ্ণুর দশ অবতার— মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ ও কল্কিকে নিয়ে পরিকল্পিত এই খেলার মধ্যে ধর্মভাবনা নিহিত। বিষ্নুপুরে বুদ্ধ-অবতারের স্থানে জগন্নাথের চিত্র দেখা যায়। এটি ওড়িশা থেকে খেলাটি আসার প্রভাব বলে অনুমিত হয়।

বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার এই বিলুপ্তপ্রায় শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। কথিত আছে, রাজা বীরহাম্বীর তার সেনাপতি কার্তিক ফৌজদারকে তাস আঁকতে বলেন। তেঁতুল বিচির আঠা, পাতলা কাপড়, খড়িমাটি, মেটে সিঁদুর, গালার রং, তুলি, কাচি, স্থানীয় অঞ্চল থেকে জোগাড় করা রং ইত্যাদি ব্যবহার করে মূলত বৃত্তাকার তাস তৈরি করা হয়। তাসে আঁকা ছবির সহজ- সাবলীল রেখাভঙ্গি, প্রাকৃতিক রং-এর ব্যবহার সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দশাবতার তাসে তিন রকমের তাস দেখা যায় রাজা তাস ১০টি, মন্ত্রী বা উজির তাস ১০টি এবং রং তাস ১০০টি। এই রং তাসকে এক্কা, দোক্কা, তেক্কা, চৌকা, পঞ্জা, ছক্কা, সাত্তা, আটা, নক্কা, দশ নামে ডাকা হয়। বিভিন্ন অবতারের এক-একটি সেটে ১২টি করে তাসের জন্য বিভিন্ন প্রতীক ও জমিনের আলাদা রং ব্যবহার করা হয়। ৫ জন করে খেলােয়াড় একসঙ্গে বসে শুদ্ধাচারে, ভগবানকে স্মরণ করে এই তাস খেলতেন। তবে কেউ কারও সহযােগী হতে পারতেন না। আশ্চর্য সুন্দর শিল্পকীর্তির নিদর্শন হলেও সময়ের সঙ্গে তাসের খেলাটি হারিয়ে যাওয়ায় এই শিল্পটিও ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে।