প্রশ্নঃ প্রধান প্রধান সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দাও।

অথবা, বাংলাদেশে প্রধান প্রধান সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজ জীবনের প্রধান ভিত। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চেতনা থেকেই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি এবং এর মাধ্যমেই সমাজ জীবন প্রবহমান। মানব সমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় । সমাজবিজ্ঞানী গিডিংসের মতে, মানব সমাজের যা কিছু মহৎ ও কল্যাণকর, তার সবকিছুই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক যুগ হতে অন্যযুগে বর্তায়।

প্রধান প্রধান সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা / কার্যাবলিঃ সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে ভাগ করেছেন। এগুলাে হলােঃ

(ক) পারিবারিক প্রতিষ্ঠানঃ মানবসমাজের সবচেয়ে মৌল এবং ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন হলাে পরিবার। পরিবারকে কেন্দ্র করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলাে হলাে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এর আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলাে হলােঃ

(১) পরিবারঃ পরিবারকে সমাজ জীবনের মূল কেন্দ্র বলা হয়। এটি হচ্ছে সমাজের আদি, মৌল ও ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পরিবারের মধ্যে ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করে এবং আজীবন তার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে।

(২) বিবাহঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ বিবাহকে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটি জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্রমবিকাশে মানবিক পর্যায়ে ঘর বাঁধা, ভালােবাসা ও ব্যক্তিত্বের চাহিদা পূরণ করে। পরিবারের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অপরাপর দলবদ্ধতার অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিবাহের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে।

(৩) সম্পত্তিঃ সম্পত্তি বলতে এমন বিষয় বা বস্তুকে বুঝায়, যার উপযােগিতা রয়েছে এবং যাতে সমাজ কর্তৃক মানুষের অধিকার স্বীকৃত। পরিবার ও বিবাহের মত সম্পত্তিও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

(খ) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ সমাজবিজ্ঞানীগণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করেননি। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলাে সমাজের সাধারণ প্রশাসন ও জনশৃঙ্খলার প্রয়ােজন পূরণ করা। এর মধ্যে বিভিন্ন উপ-প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে আইনগত, যেমন: পুলিশ ও সামরিক ব্যবস্থা অন্যতম।

(গ) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ ধর্ম মানবজীবনে একটি মৌল ও সর্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর সব সমাজে সর্বাবস্থায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। মানুষের জন্ম, মৃত্যু, শেষকৃত্য, বিবাহ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়। ধর্ম মানুষের অনাকাঙ্খিত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে সুশৃঙ্খল জীবনের পথে পরিচালিত করে।

(ঘ) অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ মানুষের জীবনধারণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, পানীয়, আশ্রয়, নিদ্রা প্রভৃতির প্রয়ােজন পুরণে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সামাজিক আচরণবিধির সুসংহত প্রকাশ। এর মাধ্যমে সমাজ দ্রব্য ও সেবা অর্জন করে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সমাজকাঠামাে গড়ে ওঠে।

(ঙ) শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষা যেকোনাে জাতি বা সমাজের অপরিহার্য অঙ্গ। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজের সদস্য হিসেবে বেড়ে ওঠে। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলাে সমাজের সংস্কৃতিকে এক বংশধরের কাছ থেকে পরবর্তী বংশধরের হাতে হস্তান্তর।

(চ) সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ মানুষ তার গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষ সমাজ জীবনের ঐক্য ও মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হয়। ফলে মানুষের মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়।

(ছ) চিত্তবিনােদনমূল প্রতিষ্ঠানঃ চিত্তবিনােদনমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলাে সমাজস্থ মানুষকে তাদের কাজের অবসরে বিনােদন দান করে নতুন করে অনুপ্রেরণা ও শক্তি যােগায়। চিত্তবিনােদনমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ সমাজ জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তােলে।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের সমাজ জীবনের সাথে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলাে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। সমাজ জীবনে যা কিছু মহান, চিরসুন্দর ও কল্যাণকর তা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে। সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে সুন্দর সমাজ গড়ে তােলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে। তাই মানুষের সমাজ জীবনে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।