অথবা, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি সমস্যা সমাধানের জন্য উপায়সমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ অনেকগুলো সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। পতিতাবৃত্তি তার মধ্যে অন্যতম। মানবসমাজে সবচেয়ে ঘৃণ্য, বর্বর, অমানবিক, জঘন্য ও প্রাচীন বৃত্তি হলাে পতিতাবৃত্তি। পতিতাবৃত্তির পক্ষে ধর্মীয় আদর্শ, সামাজিক মূল্যবােধ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনাে সমর্থন তাে নেই-ই বরং ধর্ম ও সামাজিক মূল্যবােধ তীব্রভাবে এর বিরােধিতা করে থাকে। তারপরও পৃথিবীর প্রাচীনতম এই পাপ ব্যবসার অস্তিত্ব অনেক দেশ ও সমাজে বিদ্যমান।
বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তির প্রতিকার/সমাধানের উপায়ঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশই পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে না। পতিতাবৃত্তি যেমন একটি সামাজিক সমস্যা তেমনি এটি অন্যান্য সমস্যারও জন্ম দেয়। আমাদের সমাজব্যবস্থায় পতিতাবৃত্তি মারাত্মকভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে।
(১) সামাজিক জরিপ পরিচালনাঃ আমাদের দেশে পতিতাদের সম্পর্কে তেমন কোনাে তথ্য অনুসন্ধান করা হয়নি। জরিপের মাধ্যমে পতিতাদের সঠিক সংখ্যা, পতিতাবৃত্তির কারণ, পতিতাদের মতামত ও সমাধানের উপায় নির্ধারণ সম্পর্কে মতামত গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে জরিপ চালনা করা দরকার।
(২) নৈতিকতা শিক্ষাঃ সমাজে নৈতিকতা শিক্ষা লাভের বলিষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবােধের ভিত্তিতে শিক্ষাকাঠামাে সাজানাে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
(৩) বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণঃ পতিতাবৃত্তি রােধকল্পে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন- পতিতালয় উচ্ছেদ করার সাথে সাথে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা এসব পতিতা ভাসমান পতিতা হয়ে সব স্থানে ছড়িয়ে পড়বে।
(৪) কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাঃ বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও অন্যান্য অসহায় দরিদ্র মহিলাদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যাতে তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলাে সহজে পূরণ করতে পারে।
(৫) পুনর্বাসনঃ পতিতাবৃত্তি রােধকল্পে পতিতাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পতিতাদের উচ্ছেদের সাথে সাথে তাদের কর্মসংস্থানের বা বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৬) আইনের কার্যকর ভূমিকাঃ ১৯৩৩ সালের পাপব্যবসাসহ নারী প্রচার, নারী নির্যাতন ও অন্যান্য নারী নিরাপত্তামূলক যেসব আইন রয়েছে তা যথাযথ প্রয়ােগ করতে হবে। নারী পাচারকারী দালালদের ও প্রতারকদের যথাযথ দণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
(৭) আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তাঃ সমাজের বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত, নির্যাতিত ও অত্যাচারিত মহিলাদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
(৮) বাসস্থানের ব্যবস্থাঃ শহরের স্বল্প বা নিম্ন আয়ের লােকজন যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে একত্রে বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৯) গণসচেতনতা সৃষ্টিঃ পতিতাবৃত্তি যে এইডস, গনােরিয়াসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রােগ ছড়ায় এ সম্পর্কে জনগণের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
(১০) দারিদ্র্য রােধঃ পতিতাবৃত্তির অন্যতম কারণে দারিদ্র রােধ করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(১১) নারী পাচার রােধঃ নারী পাচার রােধ করতে হবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরাে সতর্ক ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।
(১৩) জনসংখ্যা বােধঃ অধিক জনসংখ্যার ফলে পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। অনেক পরিবারে দেখা যায় অধিক সন্তান থাকার কারণে মেয়েসন্তান অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়। ফলে তারা পতিতালয়ের দিকে পা বাড়ায়।
(১৪) বাল্যবিবাহ ও বিলম্ব বিবাহ হ্রাসঃ পতিতাবৃত্তি রােধ করার জন্য বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে এবং বিলম্ব বিবাহও রােধ করতে হবে। ছেলেমেয়ে বিবাহ উপযুক্ত হলে তার যথাযথভাবে বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পতিতাবৃত্তি জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক মূল্যবােধের প্রতি চরম হুমকিস্বরূপ। এ বৃত্তি মানুষের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিপতিত করে। তাই সমাজের অস্তিত্বের স্বার্থে পতিতাবৃত্তিকে অবশ্যই নিবারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে যথাযথ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a comment