প্রশ্নঃ অপরাধ বিচারের জন্য বাংলাদেশে কত প্রকারের ফৌজদারি আদালত রয়েছে? উহাদের দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা আলোচনা কর।
বিভিন্ন প্রকার ফৌজদারী আদালত ফৌজদারী আদালতের শ্রেণীবিভাগঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৬ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রীম কোঁট ছাড়াও নিম্নোক্ত আদালতগুলি বিদ্যমান রয়েছে-
১. দায়রা আদালত, ২. মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট, ৪. দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যঅজিষ্ট্রেট, ৫. তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট।
একজন ম্যাজিষ্ট্রেট যখন বিচার কার্য পরিচালনা করেন তখন তা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত হিসেবে গণ্য করা হয় এবং সকল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে গণ্য করা হয়।
আদালতের গঠন ও ক্ষমতাঃ ১. সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ দ্বারা গঠিত সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। দায়রা আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামী হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারেন । হাইকোর্ট বিভাগ যদি কোন মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজ অধিকার বলে আপীল বিভাগে আপীল করতে পারেন ।
২. দায়রা আদালতঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে কয়েকটি দায়রা বিভাগ থাকবে। প্রত্যেকটি দায়রা বিভাগ একটি জেলা বা একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত হবে। সরকার এরূপ বিভাগের আঞ্চলিক সীমা নির্ধারণ করবেন । ৯ ধারা অনুযায়ী সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি দায়রা আদালত স্থাপন করবেন।
দায়রা আদালত নিজ নিজ আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারে। অনুমোদন ব্যতীত অন্যান্য দণ্ড দিতে পারে। অতিরিক্ত দায়রা জজের ক্ষমতা একজন দায়রা জজের অনুরূপ ।
একজন সহকারী দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দশ বছরের অধিক কারাদণ্ড ব্যতীত সকল প্রকার শাস্তি প্রদান করতে পারে। এ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩১ ধারায় বিধান রয়েছে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকার প্রয়োজনবোধে মেট্রোপলিটন এলাকায় একজন প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করতে পারেন ।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটগণ সকলেই প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
২৯ (গ) ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যখন ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত হিসেবে বিচার কার্য পরিচালনা করবেন তখন মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য অপরাধ ব্যতীত সকল অপরাধের বিচার করতে পারবেন।
ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ১০ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটকে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অধঃস্তন হলেও এরা দু’জনই স্বতন্ত্র কৰ্তৃপক্ষ বিচার করতে পারবেন।
একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের অধিক কারাদণ্ড হতে পারে এ সকল অপরাধ ব্যতীত অন্য সকল অপরাধের বিচার করতে পারেন। ৩২ (১) ধারানুসারে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট নির্জন কারাবাসসহ অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড, অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও বেত্রাঘাত প্রদান করতে পারেন।
একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নির্জন কারাবাসসহ অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন।
একজন তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত অনধিক বছরের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন।
জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে, তবে ৩৩ (১১) ধারা অনুযায়ী সর্বমোট শাস্তির মেয়াদ ম্যাজিষ্ট্রেটদের উপর প্রদত্ত ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
Leave a comment