অথবা, বাংলাদেশের সমাজে সাংস্কৃতিক সংঘাতের কারণ সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ সমাজে প্রচলিত মানুষের আচার-আচরণ, চাল-চলন, চিন্তা-ভাবনা, রীতি-নীতি, ধর্ম, বিশ্বাস, জ্ঞান বিজ্ঞান, মূল্যবােধ ইত্যাদির মধ্যে যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, তাই প্রধানত সংস্কৃতি সংঘাত নামে অভিহিত। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, সংস্কৃতির বিভিন্ন অশের পরিবর্তনের ফলে যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তাকে সাংস্কৃতিক সংঘাত বলে।
সাংস্কৃতিক সংঘাতের কারণঃ সাংস্কৃতিক সংঘাতের কারণগুলাে নিম্নে তুলে ধরা হলাে-
(১) সংস্কৃতির অসম অগ্রগতিঃ সংস্কৃতির প্রধান দুটি দিক হলাে- বস্তুগত ও অবস্তুগত। এই বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি সাংস্কৃতিক সংঘাতের অন্যতম কারণ। বস্তুগত সংস্কৃতি যে গতি ও হারে বৃদ্ধি পায় বা এগিয়ে চলে অবস্তুগত সংস্কৃতি সে তুলনায় অনেক ধীরে এগুতে থাকে। ফলে সাংস্কৃতিক সংঘাত দেখা দেয়।
(২) গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির পার্থক্যঃ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থাকে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে সমাজের দু’টি ধরন পরিলক্ষিত হয়। যথা একটি হলাে গ্রামীণ সমাজ এবং অন্যটি শহুরে সমাজব্যবস্থা এবং এই সমাজ দু’টিতে দুই ধরনের বা আলাদা সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়। যদিও মূল সাংস্কৃতিক ধারা একই।
(৩) অর্থনেতিক বৈষম্যঃ অর্থনীতি হলাে যেকোনাে সমাজের মূল ভিত্তি। অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলে সমাজে সাংস্কৃতিক সংঘাত দেখা দেয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ ও সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের সংস্কৃতির সাথে দরিদ্র জনগােষ্ঠীর সংস্কৃতির বেশ পার্থক্য রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের চাল-চলন, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, পােশাক-পরিচ্ছদ, রুচিবােধ সবছির মধ্যে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান।
(৪) চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনঃ বিভিন্ন চিন্তা-চেতনার মানুষ একটি সমাজে বসবাস করে। যার ফলে মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনাগত বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তা ছাড়া সমাজস্থ মানুষের চেতনা কখনােই একই ধারায় পরিবর্তিত হয় না। তাই দেখা যায়, কেউ চিন্তাগত দিক দিয়ে যখন এগিয়ে যায় তখন পশ্চাৎ চিন্তার সাথে সংঘাতের সূত্রপাত হয়।
(৫) প্রযুক্তির ব্যবহারঃ একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ফলে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই ব্যবহার দেশের সর্বত্র সমান নয়। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক অঞ্চল এগিয়ে গেলেও অন্য অঞ্চল পেছনে পড়ে থাকে। কেননা যেখানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগবে সেখানেই সামগ্রিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন আসবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক সংঘাত বিদ্যমান। আমাদের দেশে একদিকে গ্রামীণ বা লােকসংস্কৃতি অন্যদিকে শহুরে বা পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। একদিকে বিশ্ব সংস্কৃতি, অন্যদিকে দেশিয় সংস্কৃতি। এভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়, তা আমাদের সমাজজীবনকে ব্যাহত করে।
Leave a comment