সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যারা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা কর আমার এই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা তোমাদের সবার অনেক উপকারে আসবে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে চাও তারা আমার এই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা নিশ্চিন্তে লিখতে পারো।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, মনে রেখো রচনা একটু বড় লেখাই ভালো।তোমরা যদি ২০
মার্কের রচনা লেখ তাহলে তোমরা পুরো বিষয়টা লিখবে। আর যদি ২০ মার্কের কম রচনা লিখ
তাহলে বাংলাদেশের সেরা কিছু পর্যটন স্থান অথবা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের
শ্রেণীবিন্যাস এই দুই টপিক্সের মধ্যে যেকোনো একটি বাদ দিয়ে লিখতে পারো।

পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা 

ভূমিকা

পর্যটন বলতে সাধারণত বেড়ানোকে বোঝানো হয়ে থাকে আর এমন অনেক মানুষ আছে যারা
বেড়াতে পছন্দ করেন। এই বিশ্বব্যাপী প্রকৃতিপ্রেমী ও জ্ঞানীগুণী মানুষগণ ছুটে
চলেন দেশ থেকে দেশান্তরে। আর দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়ানোকে কাজে লাগিয়ে
মানুষ এক ধরনের শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আর এই শিল্পের নাম হলো পর্যটন শিল্প।
প্রতিনিয়ত মানুষ অজানাকে জয় করতে চাই এবং অজানাকে সে জানতে চায়। ভ্রমণ পিপাসু
মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিটি দেশেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অনেক পর্যটন
কেন্দ্র রয়েছে।

প্রাকৃতিক পর্যটন শিল্প থাকার পরেও মানুষ প্রতিটি দেশেই তৈরি করেছে নতুন কিছু
পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশেও রয়েছে তেমনি একাধিক বনাঞ্চল, নদী, ঝর্ণা, পাহাড়,
সমুদ্র সৈকত, নান্দনিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা ও
নিদর্শন, যেগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আর এই আকর্ষণের টানে অনেক বিদেশি পর্যটক
বাংলাদেশে আসেন আর এই পর্যটকদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জন করে থাকে।

পর্যটন শিল্প কি

পর্যটন অর্থ হল ভ্রমণ। আর এই ভ্রমণ সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ কর”। অন্য এক
হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান অন্বেষণের জন্য ভ্রমণের কথা
বলেছেন। মানুষ যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সেখান থেকে মানুষ যখন অন্য কোন
স্থানে অস্থায়ীভাবে ভ্রমণ, বিনোদন এবং শিক্ষা অনুসন্ধানের জন্য ভ্রমণ করে তখন
তাকে বলা হয় পর্যটন।

যেমন অনেকেই পারিবারিক কোনো কাজের উদ্দেশ্যে, ব্যাবসায়ী কাজে অথবা অবসর সময়
কাটানোর জন্য যখন কোন সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য বাইরে বের হবেন তখন তিনি হবেন
পর্যটক। আর এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে যে শিল্প ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে বলা হয়
পর্যটন শিল্প।

পর্যটকদের পরিচয়

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার আগ্রহ থেকেই গড়ে
উঠেছে পর্যটন শিল্প। কিন্তু মানুষ তখন একে পর্যটন হিসাবে নামকরণ করেনি। সেই সু
প্রাচীন কাল থেকেই ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাং, মার্কা পোলো, ফাহিয়েন সহ অনেক
পর্যটকের নাম পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। কিন্তু সেই সময়ের যোগাযোগ
ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্লভ এবং কষ্টকর।

যোগাযোগ ব্যবস্থা কষ্টকর হলেও ভ্রমণপিপাসু মানুষ ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে
দেশান্তরে এবং অবলোকন করেছেন পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রাচীনকালের ভ্রমণ
পিপাসু মানুষের ভ্রমণের ইতিহাস থেকে সৃষ্টি হয়েছে আজকের এই  শিল্প যাকে
আমরা পর্যটন শিল্প বলি।

পর্যটন শিল্পের উদ্দেশ্য 

প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি উদ্দেশ্য থাকে তেমনি পর্যটন শিল্প
প্রতিষ্ঠার পেছনেও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের মূল উদ্দেশ্য
সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-

  • বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসার।
  • বাংলাদেশের পর্যটনশীল স্থান সমূহের অবকাঠামো গুলোর উন্নয়ন।
  • বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ
    সৃষ্টি।
  • এবং বাংলাদেশের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা।

বাংলাদেশের কিছু সেরা পর্যটন স্থান

বাংলাদেশী প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি অনেক পর্যটন স্থান রয়েছে
এর মধ্যে কিছু বিশেষ পর্যটন স্থান নিচে বর্ণনা করা হলো-

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকতটি
কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। আর এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আয়তন প্রায় ১২০
কিলোমিটার। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ
করার জন্য। এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় রয়েছে কক্সবাজারের ইনানী, চট্টগ্রামের
পতেঙ্গা, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, সুন্দরবনের কটকা

এবং সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা উপভোগ করে থাকেন বিশাল সমুদ্রের নীল জলরা রাশির ধারা।
এছাড়াও পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে উপভোগ করেন সকালে সমুদ্রের উজান এবং
বিকেলে সমুদ্রের ভাটি অবস্থা।

সুন্দরবন

সুন্দরবনের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে। খুলনা, বাগেরহাট,
বড়গুনা ও সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। জীববৈচিত্রে ভরপুর পৃথিবীর
সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন হল এই সুন্দরবন। এই বনের প্রধান আকর্ষণ হল সুন্দরী বৃক্ষ,
গোল পাতা সহ হাজারো জাতের উদ্ভিদ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ এবং বানর সহ
নানা প্রজাতির পাখি।

সুন্দরবনের রয়েছে আরো একটি আকর্ষণ আর তা হলো সুন্দরবন থেকে প্রাপ্ত খাঁটি মধু।
এছাড়া সুন্দরবনের খালে রয়েছে প্রচুর কুমির যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে
থাকে।

পতেঙ্গা

পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪
কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গায় অবস্থিত। এটি কর্ণফুলী নামক নদীর মোহনায় অবস্থিত।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হলো একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে
এবং  বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্ব অংশে। এই দ্বীপে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে
নারিকেল যার কারণে এই দ্বীপকে নারকেল জিনজিরা বলে ও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

ফয়েজ লেক

ফয়েজ লেক চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত মানুষের তৈরি একটি বিশাল খাল। এর মধ্যে
বিনোদনের অনেক ব্যবস্থা রয়েছে যা বা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। এছাড়াও
এই ফয়েজ লেকের মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম পাহাড় যা পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে থাকে।

রাঙ্গামাটি ও পার্বত্য জেলা

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত রাঙ্গামাটির একটি জনপ্রিয়
পর্যটন এলাকা। প্রতিবছর অনেক পর্যটক এখানে আসেন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ
করতে।

কুয়াকাটা

কুয়াকাটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন এলাকা। এই কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্য অস্ত উপভোগ করা যায়। তাই প্রতিবছর অনেক
পর্যটক এখানে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

সোমপুর বিহার

সোমপুর বিহার হল বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার। একে আবার পাহাড়পুর
বৌদ্ধ বিহারও বলা হয়ে থাকে। এটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত।

রামসাগর

রামসাগর হল মানবসৃষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি দিঘী। এটি দিনাজপুর জেলার
তেজপুর গ্রামে অবস্থিত।

জাফলং ও মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

জাফলং ও মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হলো বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার
অন্তর্গত একটি জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি জলপ্রপাত।

এছাড়াও বাংলাদেশে অনেক পর্যটন শিল্প রয়েছে বা এলাকা রয়েছে যেমন – ঢাকার সংসদ
ভবন, শহীদ মিনার, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, রমনা পার্ক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,
রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর, পুঠিয়ার রাজবাড়ী, বাঘা মসজিদ, নাটোরের রাজবাড়ি ও
উত্তরা গণভবন, পাকশী হার্ডিং ব্রিজ, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সোনা মসজিদ, তোহা খানা সহ অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যা দেশী-বিদেশি পর্যটকরা
উপভোগ করতে পারবেন অনায়সেই।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা এবং এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।
বিশ্ব পর্যটক সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতিবছর পর্যটক তৈরি হচ্ছে প্রায় ৯০ কোটি।
পৃথিবীতে বর্তমানে বৃহত্তম শিল্প হল পর্যটন শিল্প। ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে পর্যটকের
সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ মিলিয়নে এবং আয় ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২০ সালে
এই পর্যটকের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১৬০ কোটি প্রায়।

এশিয়ার দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে আসে প্রায় ৭৩ শতাংশ পর্যটক। আর বাংলাদেশ যদি এই
বিশাল পর্যটক বাজার ধরে রাখতে পারে তাহলে এই পর্যটক শিল্পের আয় দিয়ে বাংলাদেশের
অর্থনীতি বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

বাংলাদেশ পর্যটন কমিশন কর্পোরেশন

বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে এক সময় বিখ্যাত থাকলেও বর্তমানে তা বিভিন্ন শাসন ও শোষক
শ্রেণীর অরাজকতার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালে
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া পর্যটন শিল্পের
পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৭২ সালের ২৭ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২৫৩ নং
জারিকৃত আদেশে বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা সূচিত
হয়  এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানের লক্ষ্যে।

আর এরই পরী প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে
বাংলাদেশের পর্যটন কর্পোরেশন নামে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান জন্ম লাভ করে।
এবং ১৯৭৫ সালে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান প্রতিষ্ঠার পর পর্যটন শিল্পকে
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অধীনে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশ একটি সু প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত।
তাই পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অপার  সম্ভাবনাময়ী দেশ হিসেবে
খ্যাত। বিভিন্ন সময়ের রাজ – রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে পর্যটন শিল্প
দারুনভাবে উন্নতি লাভ করেছে। বিশেষ করে সূক্ষ্ম বস্ত্র মসলিনের মাধ্যমে
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। আর এই স্বল্প আয়তনের দেশ
হিসেবে ও বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে বিশ্বের দরবারে
পরিচিত। কেননা এই দেশে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন “সুন্দরবন”। এবং
রয়েছে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশে জন্ম নিয়েছে যুগে যুগে বিভিন্ন কবি এবং সাহিত্যিক।

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশে। সবুজ শ্যামল এই বাংলার কবি
রবীন্দ্রনাথ তাইতো তার সোনার তরী কবিতায় লিখেছেন-

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট্ট সে তরী

আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।

বাংলাদেশের রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর এই সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে কবি পেয়েছেন
তার ভাষা আর মানুষ পেয়েছে আশা। পর্যটকরা সৌন্দর্য উপভোগ করে প্রাণ খুলে তাইতো
কবি লিখেছেন-

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি 

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদী মাতৃক আমাদের এই দেশের নদীর বুকে ভেসে থাকে
রং-বেরঙের হাজারো পাল তোলা নৌকা। নদীর বুকে জাগে ছোট বড় ঢেউ। কখনো কখনো পানি
থাকে ভয়ঙ্কর রূপে, আবার কখনো থাকে স্তব্ধভাবে। আর এর বুকে ভেসে বেড়ায় লক্ষ
লক্ষ স্টিমার এবং বিভিন্ন জলযান যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। বাংলার
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একজন বলেছিলেন-

বাংলাদেশ প্রবেশের হাজারদুয়ার খোলা রয়েছে

কিন্তু বেরুবার পথ একটিও নেই।

প্রখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ১৭ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ভ্রমনে এসেছিলেন।
তিনি বাংলার সৌন্দর্যের মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন -A Sleeping Beauty Emerging From
Mists And Water. আর এ সব থেকেই আমরা  বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ
ও সম্ভাবনাময় অবস্থাকে বুঝতে পারি।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের শ্রেণীভিত্তিক বিন্যাস

বাংলাদেশের রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি বিভিন্ন পর্যটন
কেন্দ্র। তাই বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকেও বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে
যেমন-

প্রাকৃতিক বিনোদন পর্যটন কেন্দ্র

বাংলাদেশে প্রচুর প্রাকৃতিক বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যেমন পৃথিবীর
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার,  রাঙ্গামাটির কৃত্রিম হ্রদ,
সুন্দরবন, রাজশাহী পদ্মারপাড়, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চল এবং চা বাগান,
তামাবিল, জাফলং প্রভৃতি। এছাড়া রয়েছে উপকূলীয় দীপাঞ্চল এবং বিভিন্ন
উপজাতি। এছাড়াও সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাতে রয়েছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার
সুযোগ।

ঐতিহ্য ও পত্ন নিদর্শন ভিত্তিক পর্যটন

আমাদের এই দেশে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার
লালবাগের দুর্গ, আহসান মঞ্জিল, সোনারগাঁ জাদুরঘর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি,
পাহাড়পুর, রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর, পদ্মার পাড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ,
তোহাখানা, নাটোরের রাজবাড়ি ও উত্তরা গণভবন, পুঠিয়ার রাজবাড়ী, বাঘা মসজিদ
প্রভৃতি।

ধর্মীয় ঐতিহ্য ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ধর্মীয় অনুভূতি থেকে এক স্থান থেকে অন্য
স্থানে ভ্রমণ করেন। আমাদের দেশে অনেক ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে যেখানে পর্যটকরা
অনায়াসে আসতে পারেন। যেমন – আমাদের দেশে রয়েছে মসজিদ, মাজার, দরগা, মন্দির,
গির্জা, মঠ সহ অনেক ধর্মীয় উপাসনালয়। যেসব পর্যটকরা যেসব ধর্মের অনুসারী তারা
ইচ্ছা করলেই এইসব স্থানে আসতে পারেন।

ধর্মীয় ঐতিহ্য ভিত্তিক পর্যটন স্থানগুলো হল বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, চাপাই
নবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, ঢাকার সাত গম্বুজ মসজিদ, পাহাড় পুরের বৌদ্ধ বিহার,
মহাস্থানগড়, ঢাকেশ্বরী মন্দির, সিলেটের হযরত শাহজালালের দরগা এবং কক্সবাজারের
রামু মন্দির প্রভৃতি।

রোমাঞ্চকর ভ্রমণ ও পরিবেশ ভিত্তিক পর্যটন

বাংলাদেশে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর পর্যটক কেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা ইচ্ছা করে
বাংলাদেশের যে কোন রোমাঞ্চকর পরিবেশ প্রদর্শন করতে পারেন। যেমন – পার্বত্য
চট্টগ্রাম এলাকার ট্রাকিং হাইকিং, জল ক্রীড়া, মৎস্য শিকার, রাঙ্গামাটির হৃদ,নৌ
বিহার ইত্যাদি পর্যটনকেন্দ্র গুলো রয়েছে।

নৌ পর্যটন

আমাদের এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আর এই নদী মাতৃক দেশে রয়েছে অসংখ্য ছোট – বড়
নদী। আর এসব নদ-নদী ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। যেমন – বর্ষাকালে
নদীতে নৌকা বাইচ খেলা হয় যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা

বাংলাদেশের যেমন পর্যটন শিল্প রয়েছে তেমনি এর সমস্যাও রয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন
শিল্পের সমস্যা গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো

অর্থনৈতিক সমস্যা

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তাই অর্থনৈতিক সমস্যা বাংলাদেশের মতো একটি
উন্নয়নশীল অথচ স্বল্প উন্নত দেশের জন্য একটি প্রধান সমস্যা।

সামাজিক সমস্যা

বাংলাদেশের মানুষ এখনো বিদেশি সংস্কৃতিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। বাঙালিরা
তাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ও কখনো কখনো দুর্ব্যবহার করে থাকে। আর এইসব মনোভাব
পর্যটন শিল্পের জন্য একটি অনেক বড় বাধা।

রাজনৈতিক সমস্যা

রাজনৈতিক সমস্যা হলো বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১৯৭১
সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রয়োজন দেখা দেয়। এবং
রাষ্ট্রপতি ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে “বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন” নামে একটি
স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বাস্তব চিত্র দেখা
যায় না। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারলে এ দেশ পর্যটন শিল্পে উন্নত হবে
এবং বিদেশি পর্যটন এদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবেন। আর পর্যটন শিল্প উন্নত করতে হলে
রাজনৈতিক সমস্যা দূর করা একান্ত প্রয়োজন।

অবকাঠামগত দুর্বলতা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অবকাঠামোর গত দিক থেকে অনেক দুর্বল। বাংলাদেশে সেই
প্রাচীন আমলের পরিবহন ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। এছাড়াও রাস্তাঘাট সংকীর্ণ,ভঙ্গুর
এবং যত্রতত্র যানজট। এছাড়াও এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল বা মোটেল সবকিছু
অনুন্নত। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে হলে অবকাঠামত দুর্বলতা অবশ্যই
রোধ করতে হবে।

উন্নত সেবা ও তথ্যের অভাব

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রধান বাধা হলো সঠিক তথ্য ও উন্নত সেবার অভাব।
বাংলাদেশে যেমন দক্ষ শিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে, তেমনি সঠিকভাবে তথ্য প্রদানের
অভাব ও রয়েছে।আর এসব বাধা অতিক্রম করতে পারলে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের সফলতা লাভ
করবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে করণীয়

পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময়ী দেশ। তাই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প
সম্ভাবনাময়ী শিল্প বলে এর সঠিক বিকাশ ও বিস্তার প্রয়োজন। যেমন-

  • বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
  • পর্যটকদের জন্য উন্নত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাংলাদেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।
  • পর্যটকদের জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
  • সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পর্যটক শিল্পের বিকাশে এগিয়ে
    আসতে হবে।

আর পর্যটকদের জন্য যদি এই সুযোগ সুবিধাগুলো তৈরি করা যায় তাহলে বাংলাদেশের
পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প
রচনা পড়া প্রয়োজন।

উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের জন্য একটি সম্ভাবনাময়ী দেশ।   কারণ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাই
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরো উন্নত করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি
প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে আর এর জন্য প্রয়োজন শুধু দেশ প্রেম।

তাই সবাই মিলে যদি পর্যটন শিল্পের জন্য প্রচেষ্টা করা হয় তাহলে বাংলাদেশের
পর্যটন শিল্প বিশ্ব দরবারে নিজের স্থান করে নিতে পারবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক দিক থেকে সাবলম্বী।