বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রকম উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের রচনা লিখতে হয়। বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে আমি বিস্তারিত লিখেছি আমি আশা করি বাংলাদেশের উৎসব আমার এই রচনা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকার উৎসব পালন করা হয়। যেমন – ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ঈদ-পূজা এবং সামাজিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে পহেলা বৈশাখ, নবান্ন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে বইমেলা ইত্যাদি। নিচে এগুলোর ধারাবাহিক আলোচনা করা হলো-
বাংলাদেশের উৎসব রচনা
ভূমিকা
বাংলাদেশ উৎসবের এবং প্রাচীন সভ্যতা পণ্য একটি দেশ বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে পরিচিত হয়েছে উৎসব মূর্খ জাতি হিসেবে মুখর জাতি হিসেবে উৎসব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাইতো বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,” মানুষেরা উৎসব করে। মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্মরণ করে, সেই দিন। প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দিন একাকী কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ”।
আমাদের এই বাংলাদেশের বুকে বসবাস করে বিভিন্ন ধর্ম গোত্রের মানুষ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে পালন করে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব। আর কোন দেশের বা মানুষের উৎসব সম্পর্কে জানা থাকলে সেই সমাজের বা দেশের মানুষকে অনেকখানি জানা হয়ে যায়। তাই বলা হয় কোন দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের উৎসব সম্পর্কে জানতে হবে।
আর উৎসব সম্পর্কে জানতে পারলে সেই দেশ সম্পর্কে অর্ধেক জানা হয়ে যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ উৎসব পালন করা হয় বিভিন্ন ঋতু, ধর্ম, গোত্র, জনগোষ্ঠী এবং জনগণকে কেন্দ্র করে যেসব উৎসব পালন করে তা যেন রবীন্দ্রনাথের উক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়,” আমার আনন্দ সকলের আনন্দ হোউক, আমার শুভ সকলের শুভ হোউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচ জনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি। এই কল্যাণী স্থায়ী উৎসবের প্রাণ”। উৎসব মানুষের মনে কেবল আনন্দের সঞ্চার করে না বরং এর মধ্য দিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সামগ্রিক চিত্র হয়ে ফুটে উঠে।
উৎসব কি
উৎসব বলতে বোঝায় যা মানুষের মনকে আনন্দদান করে। উৎসবের মধ্যে মানুষ তার মনের আনন্দ প্রকাশ করে থাকে। তবে উৎসবের আনন্দ কখনো একার আনন্দ হতে পারে না। উৎসব হলো পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলে সকলের সুখ ও আনন্দ লাভের উপায়। উৎসব সবাইকে আনন্দ দান করে থাকে।
নববর্ষ বা বাংলা বর্ষবরণ
বৈশাখ এসেছে বাংলার মাঝে বাঙালির প্রাণে,
মেতেছে বাঙালি লোকজ উৎসবে, গানে গানে।
উৎসব হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সার্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষবরণ আমাদের কাছে তথা বাঙালি জাতির কাছে পহেলা বৈশাখ নামে পরিচিত। এই উৎসব হলো পুরোনো দিনের দুঃখ, ব্যথার গ্লানি ভুলে নতুন করে বরণ করে নেয়ার উৎসব। নববর্ষের দিনে চারিদিকে শুধু ধ্বনিত হয় – “এসো হে বৈশাখ এসো এসো,তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূষেরে দাও উড়াইয়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক, যাক, এসো হে বৈশাখ”।
বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষ ধর্ম গোত্র নির্বিশেষে উৎসব পালন করে থাকে। নববর্ষকে ঘিরে সারাদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এই আয়োজনের মধ্যে থাকে মেলা ও শোভাযাত্রা। ব্যবসায়ীরা এই দিনে হালখাতা নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। এই দিনে তারা ব্যবসার নতুন খাতা খোলেন এবং বকেয়া আদায় উপলক্ষে তাদের নির্ধারিত গ্রাহকদের নামে নিমন্ত্রণপত্র বিতরণ করেন এবং তাদের মিষ্টিমুখ করান।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মজাদার খাবার রান্না করা হয়।বিশেষ করে পান্তা – ইলিশ, আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা সহ নানা ধরনের খাবার খাওয়া হয়। এবং বিভিন্ন মেলাতে এইসব খাবারের দোকান বসানো হয়। রমনার বট মূলে আয়োজন করা হয় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়া ও রাজধানীর ঢাকায় আড়ম্বরে পালন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়াও গ্রাম্যভাবে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়।
এর মধ্যে থাকে লাঠি খেলা, চরকি খেলা, বিভিন্ন রং মেখে খেলা। এছাড়াও গ্রামের মানুষ আরেকটি খেলা খেলে যার নাম চোড়োব গাছ। এই খেলায় একজন পুরুষ মানুষের পিঠে বড় বড়শির কালা গেঁথে কলা গাছের মাথায় জড়িয়ে ঘোরানো হয়। যা সত্যিই ভয়ংকর।
ঈদ উৎসব
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের নাম হল ঈদ। প্রতিবছর ঈদ আমাদের মাঝে আসে মিলন আর আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই দিনে ধনী – গরিব ভেদাভেদ ভুলে তাদের আনন্দ ভাগ করে নেয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিমগণ মহানন্দে ঈদের উৎসব পালন করে থাকে। মুসলিমদের জন্য বছরে দুইটি ঈদ আসে – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। রমজান মাসের দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়।
আবার জিল হজ মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয় ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। এই দিনে ধর্মপান মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাদের সাধ্যমত পশু কোরবানি করে থাকেন। একে আত্মত্যাগের ঈদ ও বলা হয়। এই দুটি ঈদে মুসলিমগণ নতুন পোশাক পরিধান করে এবং ঈদগাহে একত্র হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকে। নামাজ শেষে তারা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে। প্রত্যেকের বাড়িতে ভালো খাবারের আয়োজন করা হয় এবং তারা একে অপরকে খাইয়ে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।
তাইতো শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই বাংলাদেশের টেলিভিশন বেতারে বাঁজতে থাকে একটি গান, আর তা হল – “ওমন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ, সোনা দানা বালাখানা সব”। ঈদুল ফিতর মুসলিমদের সামনে হাজির হয় তাদের সম্পদের পবিত্রতার বার্তা নিয়ে। ঈদুল আযহাতে পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহতালাকে খুশি করা হয়। এটি আত্মত্যাগের ঈদ।
নবান্ন উৎসব
বাঙালি হাসে আজ এ নবান্ন উৎসবে
শুধু নয় বাংলার রমনা বটমলে
বাংলার গ্রাম গঞ্জ শহর বন্দরে।
আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ পড়েছি নবান্ন।নব+অন্ন = নবান্ন। নব অর্থ নতুন এবং অন্ন অর্থ ভাত বা ফসল। নবান্ন এর মর্মকতা হলো নতুন ধানের উৎসব। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আর হেমন্ত হল ঋতু চক্রের চতুর্থ ঋতু। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে গঠিত হয় হেমন্তকাল। আর এই হেমন্ত কালে কৃষকের ঘরে ওঠে আসে নতুন ধান। এই সময় কৃষকের মুখে ফুটে নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ এবং তারা নতুন ধানের পিঠাপুলি তৈরি করে নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। তারা আত্মীয় পরিজনকে আমন্ত্রণ করার মাধ্যমে নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে।
দুর্গাপূজা
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হলো হিন্দু সম্প্রদায়। আর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এর নাম দুর্গাপূজা।আর এই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় শরৎকালে। আর শরৎকালে পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে শারদীয় দুর্গাউৎসব ও বলা হয়। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে নিয়ে শরৎকাল। আশ্বিন মাসে যে চাঁদ উঠে তার প্রথম অষ্টম ও নবম দিনে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সপ্তমীর পূর্বের দিন ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন নামক অনুষ্ঠান হয়।
নবমীর পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় দশমী। আর এই দশমির উৎসবকে বলা হয় বিজয়া দশমী। এই পূজা উপলক্ষে পাড়ায় পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক পূজা মন্ডপ তৈরি করে থাকে এবং সেখানে প্রসাদের আয়োজন করা হয়। যদিও দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব তবুও বিভিন্ন ধর্মের লোক এই উৎসবে আনন্দ করে থাকে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করে অষ্টমীতে।
এই দিন বেশি আনন্দ আর জাঁকজমক থাকে। রাতে হয় আরতি নামক অনুষ্ঠান। আর দশমীর দিন দেওয়া হয় বিসর্জন। আর এই বিসর্জনের মাধ্যমে তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গা পূজা শেষ হয়। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলীদের আরও পুজা রয়েছে, যেমন – সরস্বতী পূজা, কালী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, মনসা পূজা ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের রয়েছে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ।
বড়দিন
বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মের লোকেরা বড়দিন নামক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। বড়দিন হল যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। আর এই দিনকে ঘিরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বড়দিন নামক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। প্রতিবছর ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসব পালন করা হয়। গির্জা গির্জায় প্রার্থনা করার পর কেক কেটে, চকলেট বিতরণ করে এবং গান গেয়ে এই উৎসব পালন করা হয়। সবার সাথে কুশল বিনিমের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা
বৌদ্ধ সম্প্রদায় লোকেরা গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে এই বৌদ্ধ পূর্ণিমা নামক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এই অনুষ্ঠান বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে আবার বৈশাখী পূর্ণিমা ও বলা হয়। এই দিনের সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভের সম্মতি ও তিরোধান জড়িত। এই দিনে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাত ফেরী, প্রদীপ পূজা, ফুল পূজা ইত্যাদি। প্রার্থনা ও দান দক্ষিণার মাধ্যমে পঞ্চশীল ও অষ্টশিল প্রদান করা হয় এবং ফানুস উড়িয়ে এই উৎসব পালন করা হয়।
বৈসাবি
বাংলাদেশের তিন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বর্ষবরণ উৎসবকে বলা হয় বৈসাবি। এই বৈসাবি শব্দটি বাংলাদেশের তিন ক্ষুদ্র জাতি বৈশু, সাংগ্রায়গ ও বিজু এই তিন জাতির উৎসবের প্রথম তিন অক্ষর “বৈ + সা+বি” মিলে নেয়া হয়েছে। এই বৈসাবি অনুষ্ঠান চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন পালন করে থাকে। এই অনুষ্ঠান সাধারণত বছরে শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায় এই উৎসব পালন করা হয়।
সামাজিক উৎসব
আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে সামাজিক উৎসব গুলো পালন করা হয়। বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব গুলোর মধ্যে রয়েছে –
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। পৃথিবীতে এই বাঙালি একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান আর ক্ষমতা লাভের পর থেকেই আমাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। কিন্তু বাঙালিরা তা মেনে নেননি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। সেই দিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে।
তাদের এই আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাঙালি জাতি লাভ করে তাদের মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা বাংলা। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের স্মরণ করা হয় এই দিনে বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
স্বাধীনতা দিবস
২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন “বাংলাদেশ স্বাধীন”। আর এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ অর্জন করে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন পতাকা,একটি স্বাধীন দেশ।
বিজয় দিবস
প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস উদযাপন করে থাকি। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। দীর্ঘ নয় ৯ মাস দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়। এই দিনে পৃথিবীর বুকে আবর্তিত হয় বাংলাদেশ নামক নতুন দেশ। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এই দিন শহীদের স্মরণে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আজকের এই বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি তাদের স্মরণ করে রাখবে আজীবন।
বইমেলা
বইমেলা বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে পালন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত পুরো মাস জুড়ে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। এই বইমেলা হলো পাঠক এবং লেখকের মিলন মেলা। বর্তমানে এই বইমেলা শুধু বই বেচাকেনা হিসেবে বিবেচিত হয় না, এখন এটি পরিণত হয়েছে একটি বড় সাংস্কৃতিক উৎসবে।
পহেলা ফাল্গুন
পহেলা ফাল্গুন বাঙালি জাতির জন্য একটি অন্যতম উৎসব। বসন্তকে বরণ করে নিতে এই দিনে বাঙালিরা সাজে হলুদ সাজে। এই দিনে মাথায় ফুল দিয়ে, হলুদ শাড়ি পরিধান করে ফাল্গুন উৎসব পালন করা হয়। এক কথায় এই দিনে বাঙালিরা সাজে বসন্ত সাজে।
পারিবারিক উৎসব
পারিবারিকভাবে ও বাঙালিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। পারিবারিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে বিয়ে, অন্নপ্রশান, জন্মদিন, খাতনা ইত্যাদি।
অন্যান্য উৎসব
বাংলাদেশে সারা বছরে কোন না কোন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। যেমন – রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, ১৫ ই আগস্ট, ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন উৎসব, মধুমেলা, ঈদে মিলাদুন্নবী, মহরম, ইস্টার সানডে, প্রবারনা পূর্ণিমা ইত্যাদি।
শেষ কথা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি দূর করতে উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। উৎসব মানুষের মাঝে নির্মল আনন্দ সঞ্চার করে থাকে। আনন্দমুখর উৎসব পালনে মুছে যায় মানুষের মনের ছোট – বড় ভেদাভেদ। সকল শ্রেণীর মানুষ মিলন মেলায় একত্রিত হয়ে তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। আর এই উৎসবগুলো তাদের মনে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। উৎসবে শালীনতা ও পবিত্ররতা বজায় রেখে প্রকৃত অর্থে উৎসব পালনের জন্য সকলের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।
উৎসবের মধ্যে রয়েছে মূল্যবোধের বীজ যা মানুষকে জাগ্রত করে। সংস্কৃতি যেমন রক্ষা করে তেমনি মানুষের মধ্যে গড়ে উঠবে প্রীতি ও শোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এটাই আমাদের কামনা।
Leave a comment