অথবা, সংস্কৃতি প্রসারে সংস্কৃতায়ণ ও ব্যাপ্তিবাদের ভূমিকা আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ সংস্কৃতি সভ্যতার বাহন। সমাজজীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলে সংস্কৃতি মানবজীবনের ভিত্তি রচনা করে। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ ও উৎকর্ষসাধনে সংস্কৃতির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত জীবনপ্রণালি সংস্কৃতির গতিকে সচল রেখেছে। সংস্কৃতির পথপরিক্রমার মধ্যদিয়ে সভ্যতা বিকাশ লাভ করে।
বর্তমান বিশ্বের সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তিঃ বর্তমান বিশ্বকে ‘Global village’ বলা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের ফলে এই বিশ্ব এক গ্রামে পরিণত হয়েছে। তাই সংস্কৃতিও ব্যাপ্তি লাভ করে চলছে। মূলত সংস্কৃতির ধর্ম হলাে পরিবর্তনশীলতা। পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সংস্কৃতি এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রসার লাভ করে। সংস্কৃতি কোনাে সমাজে স্থির থাকে না। আধুনিক বিশ্বে মানুষ নানা কারণে এক দেশ থেকে মুহুর্তের মধ্যেই অন্য দেশে যাচ্ছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযােগিতা, কূটনৈতিক সহযােগিতা ইত্যাদির ব্যাপক প্রসারের ফলে একে অপরের সংস্পর্শে আসে। এই পারস্পরিক সংস্পর্শে আসা যত বেশি হবে এবং স্থায়িত্ব কাল বেশি হবে ততই তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক লেনদেন ঘটবে বা যােগাযােগ স্থাপিত হবে। সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি বলতে সংস্কৃতির এই চলমান গতিধারা এবং এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে প্রসার লাভ করাকে বুঝায়।
বর্তমান বিশ্বে যােগাযােগের বিভিন্ন উন্নততর মাধ্যম গড়ে উঠেছে। ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারন্টে এবং সর্বোপরি আকাশ সংস্কৃতি উন্মুক্ত হওয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি আরাে বেড়ে চলেছে। এখন টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পারছে। এক দেশের সংস্কৃতি আকাশ পথে অন্য দেশে খুব সহজেই বিস্তার লাভ করে চলেছে। এভাবে বর্তমান বিশ্বে সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ঘটছে।
বর্তমান বিশ্বে সংস্কৃতায়নঃ সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তির মতাে বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক হারে সংস্কৃতায়ণ ঘটছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সাংস্কৃতিক লেনদেন বা যােগাযােগের মাধ্যমে সংস্কৃতায়ন ঘটে। সমাজ থেকে সমাজে সাস্কৃতিক লেনদেন বা যােগাযােগের মাধ্যমে সংস্কৃতির প্রসার ঘটার সাথে সাথে যে প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে সংস্কৃতায়ণ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ঘটছে তাকে সংস্কৃতায়ণ বলে।
সংস্কৃতায়ণের মাধ্যমে একটি সমাজের সংস্কৃতি অন্য সমাজে গৃহীত হয় এবং যে সমাজ অন্য সমাজের সংস্কৃতি গ্রহণ করে তা অন্যদের সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। সাধারণত উন্নত সংস্কৃতি অনুন্নত সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ করে এবং অনুন্নত সমাজ উন্নত সমাজের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে। অনেক উন্নত সমাজও অনুন্নত সমাজের সংস্কৃতির কোনাে বিশেষ অংশ গ্রহণ করে থাকে।
সংস্কৃতায়ণের প্রক্রিয়াঃ সাধারণত তিনটি প্রক্রিয়ায় বর্তমান বিশ্বে সংস্কৃতায়ন সংঘটিত হচ্ছে। এগুলাে হলাে-
(১) উন্নত ও প্রভাবশালী সংস্কৃতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ অনুন্নত সমাজ গ্রহণ করতে পারে এবং বাকিটা প্রত্যখ্যান করতে পারে।
(২) উন্নত ও সংস্কৃতি গ্রহণের সময় তা অনুন্নত সংস্কৃতির সাথে যাতে খাপখাইয়ে চলতে পারে এ জন্য উন্নত সংস্কৃতিকে modify করে গ্রহণ করা হয়।
(৩) অনুন্নত সংস্কৃতি অন্ধ অনুকরণের বশবর্তী হয়ে উন্নত সংস্কৃতি গ্রহণ করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বের সব সমাজেই সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ও সংস্কৃতায়ন ঘটছে । যােগাযােগ ব্যবস্থার অভতপর্ব উন্নতির ফলে বর্তমানে খুব সহজেই একটি দেশ বা সমাজ অন্য দেশ ও সমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে। ফলে অন্য দেশের সংস্কৃতি তাদেরকে প্রভাবিত করছে। আমাদের দেশে যেমন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে চলেছে। এভাবে সারা বিশ্বেই সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ও সংস্কৃতায়নের মাধ্যমে বিশ্বে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
Leave a comment