একটি দেশের শিল্পোন্নত অনেকখানি নির্ভর করে শিল্পের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও কৌশল কর্মীর চাহিদা মেটানোর উপর। কিন্তু এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, স্কুল স্তরে বৃত্তি শিক্ষাকে নিম্ন শ্রেণীর শিক্ষা বলে মনে করা হয়। স্বাধীনতার পর কোঠারি কমিশন শিক্ষার সকল দিক সম্পর্কে পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশ করেছে। তাই আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার মততা বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সাধারণত মাধ্যমিক স্তরে যেসব বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের ন্যূনতম যোগ্যতা হল অষ্টম শ্রেণি পাস। নিম্নে এরূপ দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করা হল—
এই স্কুল গুলো সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। যে সকল শিক্ষার্থী সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী পায় না বা যারা দারিদ্র্যতার কারণে সাধারণধর্মী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, তারা বৃত্তিমুখী কারিগরি শিক্ষার জন্য এই স্কুলগুলিতে শিক্ষাগ্রহণ করে।
বৈশিষ্ট্য :
(১) সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পাস শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাকাল তিন বছর।
(২) শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য স্বনির্ভর করে তোলা, এই শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা এবং ব্যতিক্রমী শিশুদের ব্যবহারিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনে বিশেষভাবে সাহায্য করা ইত্যাদি হল জুনিয়র টেকনিক্যাল স্কুল গুলোর প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য।
(৩) এই টেকনিক্যাল স্কুল গুলিতে, যে সকল কোর্স পড়ানো হয়, সেগুলো হল— ফিটার, টানার, ওয়েল্ডিং, টেলারিং ইত্যাদি। এই বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করতে পারে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, শহরের থেকে গ্রাম অঞ্চলে এই স্কুলগুলো বেশি রয়েছে।
এই ধরনের ইন্সটিটিউট গুলো সাধারণত শহর বা মফঃস্বলে বেশি স্থাপিত হয়। সাধারণত আমাদের দেশে কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের জন্য যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলি সবই এই ITI -এর অন্তর্গত।
বৈশিষ্ট্য :
(১) সাধারণ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পাস শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি হতে পারে।
(২) এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সময়কাল দু-বছর।
(৩) এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণ উদ্দেশ্য গুলি হল—
- শিক্ষার্থীকে নিজের চাহিদা অনুযায়ী বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রদান করে তাদের নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে তোলা।
- শ্রমের প্রতি মর্যাদা বোধ জাগ্রত করা।
- সমাজের উপযোগী দক্ষ কারিগর তৈরি করা।
- শিল্প কারখানায় কারিগর চাহিদা মেটানো এবং
- সবশেষে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
(৪) এই সকল প্রতিষ্ঠানে যে সকল কোর্স করানো হয়, সেগুলি হল— টার্নার, ফিটার, ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডার, কার্পেন্টার, সার্ভেয়ার ইত্যাদি।
সবশেষে বলা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণের শেষে শিক্ষার্থীদের যে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, তা শিল্প কারখানায় নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাহায্য করে।
Leave a comment