উত্তর: বিদ্যাপতি ছিলেন মিথিলার শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তিনি বাঙালি না হয়েও বাংলা কবিতা রচনা না করেও বাঙালি কবির একজন। তিনি মৈথিল, কোকিল ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত। তাঁর উপাধি ছিল- কবি কণ্ঠহার। বিদ্যাপতির জীবন গাথা মিথিলার রাজবংশের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি মিথিলার রাজসভার কবি ও ব্রজবুলি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন।

বিদ্যাপতি মৈথিলিতে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা বিষয়ক যে উৎকৃষ্ট পদাবলি রচনা করেন তাই তাকে অমরতা- দান করেছে। তাঁর পদাবলী বাংলা, আসাম, উড়িষ্যা ও পূর্ব বিহারে সমাদৃত। রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের বিচিত্র লীলা কবির কাছে আকর্ষণীয় বিবেচিত হয়েছিল বলে তিনি রাধা ও কৃষ্ণের লীলা পদই বেশি রচনা করেছিলেন।

তিনি রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে একটি পরিপূর্ণতা দান করার চেষ্টা করেছিলেন। বিদ্যাপতি প্রথমেই রাধার বয়ঃসন্ধি কৈশোর ও যৌবনের এই সম্মিলনকে কবিতার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে মৌল উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর রাধার দুই রূপ অংকনে তাঁর পারদর্শিতা প্রশংসনীয়। বয়ঃসন্ধির রাধার লীলা চাতুর্যের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু বয়সের নবীনতা ঘটেনি। ফলে তার দৈহিক পরিবর্তনের সরল অলংকৃত এবং সকৌতুক বর্ণনা লক্ষ করা যায়। যেমন-

“শৈশব যৌবন দরশন ভেল

দুই দল বলে দ্বন্দ্ব পরি গেল।

কবহু বান্ধ এ কচ কবহু বিথারি

কবহু ঝপ এ অঙ্গ কবহু উমারি।” (বিদ্যাপতি পদ- ৩৯)

বিদ্যাপতি রাধার বয়ঃসন্ধি বর্ণনায় পরিণত করতে অপূর্ব চরিত্র চিত্রণ করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। রাধার বয়ঃসন্ধি বর্ণনায় শিল্প চাতুর্য কিশোরী রাধার দেহের পরিবর্তন যৌবনাগম এবং তার ক্রমবিকাশ, মনোজগতের পরিবর্তন, সবার অলক্ষ্যে কৃষ্ণকে দেখে নেবার কৌশল অপূর্ব।

” তহি পুন মতিহার তোড়ে ফেলিল

কহত টুহার টুটি গেল।”

কৃষ্ণের সাথে মিলনের লজ্জা, বিনম্র, আনন্দ, হর্ষ, উল্লাস, লজ্জা-শিহরণ, বিরহে বিদ্যাপতির রাধার দেহগত মিলনের আকাঙ্ক্ষা অপসৃত। মিলন মন্দির শূন্য, দশদিক শূন্য।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিদ্যাপতি বয়ঃসন্ধি পদ রচনায় অত্যন্ত চাতুর্য ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।