প্রশ্নঃ বদর যুদ্ধের কারণ, ঘটনা ও ফলাফল আলােচনা কর।

অথবা, বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলােচনা কর।

অথবা, বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলােচনা কর। এ যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন?

উপস্থাপনাঃ মদিনায় ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং মুহাম্মদ (স)-এর প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠন ও মুসলমানদের আধিপত্য বিস্তারে বিধর্মীরা ইসলাম ধর্ম ও মদিনাবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার দৃঢ় সংকল্প করে। ফলশ্রুতিতে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর নামক প্রান্তরে ইসলাম ও মুশরিকদের মাঝে এক ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। এতেই প্রমাণিত হয়, ইসলাম সত্য ও অজেয় আর মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। তাই Encyclopedia of Britannica গ্রন্থকার বলেন, The battle of Badar is not only the most celebrated battle in the memory of Muslims. It was really also of a great historical importance. (Vol-2, p-450)

বদর যুদ্ধের কারণঃ ঐতিহাসিক মাসুদি বলেন, বদর যুদ্ধের নানাবিধ কারণ রয়েছে। আর এ কারণগুলােকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা- (ক) পরােক্ষ কারণ ও (খ) প্রত্যক্ষ কারণ । বিস্তারিত পর্যালােচনা নিম্নরূপঃ

ক. বদর যুদ্ধের পরােক্ষ কারণঃ

১. মুসলমানদের অগ্রযাত্রায় কুরাইশদের জ্বালাতনঃ মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (স) সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। মদিনায় ইসলামের অগ্রযাত্রা, দেশ বিদেশে ইসলামের দাওয়াত প্রচার, দূত প্রেরণ ও দলে। দলে ইসলাম গ্রহণের ফলে মক্কার কুরাইশরা ঈর্ষান্বিত হয়ে শত্রুতা শুরু করে। তারা নব প্রতিষ্ঠিত উদায়মান এ রাষ্ট্র এবং তার অধিপতিকে ধ্বংস করার শপথ গ্রহণ করে।

২. মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রঃ মহানবী (স)-এর মদিনায় হিজরত ও মদিনার শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করায় মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ঈর্ষান্বিত হয়ে নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গােপন ষড়যন্ত্রে ইন্ধন যােগায় এবং তার অনুসারীদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে প্ররােচিত করে।

৩. ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতাঃ মদিনার ইহুদির: মুহাম্মদ (স)-এর উন্নত আদর্শের কথা জেনে তাকে আমন্ত্রণ করলেও তাদের ইচ্ছামতাে ব্যবহার করতে না পেরে ঈর্ষান্বিত হয়। তাই তারা মদিনার নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মক্কার কুরাইশদের প্ররােচিত করে।

৪. অর্থনৈতিক কারণঃ ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, মক্কার ব্যবসায়ীরা সিরিয়া, মিসর, মেসােপটেমিয়া প্রভৃতি দেশের সাথে নিয়মিত ব্যবসায়-বাণিজ্য করত, কিন্তু মদিনা মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ফলে মদিনার পাশ দিয়ে কুরাইশদের একমাত্র বাণিজ্যিক পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে আসে।

৫. দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজঃ মক্কার কুরাইশরা মদিনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মুসলমানদের শস্যক্ষেত জ্বালিয়ে দিত, ফলবান বৃক্ষ ধ্বংস করত এবং উট ও ছাগল অপহরণ করে নিয়ে যেত। ফলে মুসলমানরা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়।

৬. মহানবী (স)-কে হত্যার দুঃসাহসঃ মক্কার কাফেররা মহানবী (স)-এর ধর্মীয় জাগরণ যেমন সহ্য করতে পারত না, তেমনি মহানবী (স)-কেও সহ্য করতে পারত না। তাই তারা যুদ্ধের মাধ্যমে মহানবী (স)-কে হত্যার দুঃসাহস করেছিল।

৭. মক্কাবাসীদের ক্ষোভঃ আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচার এবং হাজরামীর হত্যা মক্কাবাসীদের মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তাই তারা আবু জাহলের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণে অগ্রসর হয়।

৮. ইসলামী রাষ্ট্র রক্ষা করাঃ কুরাইশ বাহিনীর ধ্বংসাত্মক নীতির কারণে রাসূল (স) নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্র রক্ষায় প্রতিরক্ষামূলক সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অনিবার্যরূপে তা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেয়।

৯. ইসলামের দীপ্ত শিখা নির্বাপিত করার অভিলাষঃ ইসলামের ক্রমাগত সাফল্য ও অগ্রগতিতে পৌত্তলিক সমাজ ব্যবস্থায় ভাঙন শুরু হয়। তাই কুরাইশদের কায়েমী স্বার্থবাদী সমাজপতি বা ইসলামের প্রদীপ্ত শিখা চিরতরে নিভিয়ে দেয়ার অভিলাষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।

১০. আল্লাহর পরিকল্পনাঃ ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

খ. বদর যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণঃ

১. মুসলমানদের সহায় সম্পদ দখল ও লুটতরাজঃ মদিনার সীমান্ত এলাকায় কুরাইশর ও তাদের সমর্থক মদিনার ইহুদিরা মাঝে মধ্যে মুসলমানদের সহায় সম্পদ লুণ্ঠন করত, শস্যক্ষেত, ফলবান গাছপালা আগুন দিয়ে জালিয়ে দিত। উট, ছাগল প্রভতি লুট করে নিয়ে যেত। মহানবী (স) তাদের এ সকল অপকর্ম, অপহরণ ও লুণ্ঠন থেকে আত্মরক্ষার জন্য পদ্ধতি গ্রহণ করেন।

২. নাখলার যুদ্ধঃ কুরাইশদের ক্রমবর্ধমান লুটতরাজ ও অত্যাচার বন্ধ করার জন্য মহানবী (স) আবদুল্লাহ ইবনে জাহশের নেতৃত্বে নয় সদস্য বিশিষ্ট টহল দল মক্কার উপকণ্ঠে প্রেরণ করেন। এ দলটি মক্কার নিকটবর্তী নাখলাতে অতর্কিতভাবে কুরাইশদের লুণ্ঠনকারী একটি দলকে আক্রমণ করে। এতে কুরাইশ নেতা আমর ইবনে হাজরামী নিহত এবং আরাে দু’জন মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। এ ঘটনার পর উভয় দলের মধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। নাখলার ঘটনাকে বদর যুদ্ধের অন্যতম প্রত্যক্ষ কারণ বলা হলেও এটি মাত্র একটি অজুহাত। এ সম্পর্কে মাওলানা মুহাম্মদ আলী বলেন, ইসলামের মবর্ধমান শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য কুরাইশদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগই যুদ্ধের কারণ।

৩. আবু সুফিয়ানের মিথ্যা গুজবঃ কুরাইশ সর্দার আবু সুফিয়ান বাণিজ্যের অজুহাতে যুদ্ধের সমর সরঞ্জাম সংগ্রহ করে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছিল, তখন এক ভিত্তিহীন জনরব উঠল যে, আবু সুফিয়ানসহ কুরাইশ কাফেলা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তাই কুরাইশরা আবু জাহেলের নেতৃত্বাধীনে মদিনা আক্রমণ করার জন্য এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে।

৪. আল্লাহর নির্দেশঃ আবু জাহেলের নেতৃত্বে রণসাজ সজ্জিত এক হাজার সৈন্যের বাহিনী মদিনার দিকে যাত্রা শুরু করে। এ সংবাদে মহানবী (স) অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় আল্লাহর নির্দেশ আসে, “হে নবী! আপনি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন, যারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে”।

যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহঃ কুরাইশদের মদিনা আক্রমণের সংবাদ শুনে তাদের গতিরােধ করার জন্য মহানবী (স) ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ ৩১৩ জন মুজাহিদসহ মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক প্রান্তরে উপনীত হন। এদিকে কুরাইশ বাহিনীও সেখানে উপস্থিত হয়। অতঃপর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ মােতাবেক দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমযান উভয় দলের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে। মুসলমানদের ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেন। অপরদিকে আবু জাহলসহ কুরাইশদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। তবে এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা ৫ হাজার অশ্বারােহী মুসলমানদের পরােক্ষভাবে সাহায্য করেন।

বদর যুদ্ধের ফলাফল বা গুরুত্বঃ

১. প্রথম সামরিক বিজয়ঃ বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সামরিক বিজয়। এ বিজয় অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে জ্ঞানের, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের এবং পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে একত্ববাদের বিজয় সূচনা করে। বিশাল কুরাইশ বাহিনী স্বল্প সংখ্যক মুসলিম সৈন্যের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে বিধর্মীগণ নব প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে।

২. পরবর্তী বিজয়ের পথ প্রদর্শকঃ রণ কৌশল অতিজ্ঞ বিশাল কুরাইশ বাহিনী মুষ্টিমেয় মুসলিম বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। ফলে এ বিজয় পরবর্তী সকল বিজয়ের ফলক উন্মােচন করে দিয়েছে। যেমন পি. কে. হিট্টি বলেন, এই সময় যুদ্ধে মুসলমানগণ যে নিয়মানুবর্তিতা ও মৃত্যুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের নযীর স্থাপন করেছিলেন তাতেই ইসলামের পরবর্তী ও মহত্তর বিজয়ের বিশেষ লক্ষ্যসমূহ পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছে।

৩. ঈমানী শক্তির বিজয়ঃ মুসলমান সৈন্যদের অটুট ঈমানী শক্তি অতুলনীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অপূর্ব নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতির ফলে মুসলমানগণ বিজয়ের গৌরব অর্জন করেছেন। পরবর্তী কালেও মুসলমানগণ এ সকল গুণ ও আদর্শের বলে বলিয়ান হয়ে সংখ্যার স্বল্পতা দ্বারাই বিপুল সংখ্যক শত্রু সৈন্যকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে।

৪. বিজয়ী শক্তি হিসেবে ইসলামের আত্মপ্রকাশঃ ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে বদর যুদ্ধের তাৎপর্য অবিস্মরণীয়। কারণ বদর যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ইসলাম একটি যথার্থ বিজয়ী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৫. ধর্মীয় ও আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টিঃ বদর যুদ্ধে জয়লাভ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূমিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। ধর্মের জন্য প্রাণদানের দৃঢ় সংকল্প পরবর্তীকালে মুসলমানদেরকে বিশ্ব বিজয়ী করে তুলেছিল। কেননা বদর যুদ্ধে জয়লাভ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাসকে আরাে ইস্পাত সদৃশ করে তােলে।

৬. ইসলামের প্রচার প্রসারে নতুন প্রেরণাঃ বদর যুদ্ধ জয়লাভ ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সময় দলে দলে লোেক ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। ফলে ইসলামের অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটে।

৭. কুরাইশদের দম্ভ চূর্ণঃ বদর যুদ্ধে শােচনীয় পরাজয় মক্কাবাসীদের গৌরব ও গােত্রীয়-বংশীয় দম্ভের মর্মমূলে চরম আঘাত হানে। পক্ষান্তরে ইসলামের গৌরব ও শক্তি মদিনা এবং মদিনার আশেপাশে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৮. বিশ্ব বিজয়ের সূচনাঃ ঐতিহাসিক মুর বলেন, বদর যুদ্ধে, সামান্য কয়েকজন নিরস্ত্র সৈন্য নিজেদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী একটি সশস্ত্র বাহিনীর ওপর বিজয় লাভের ফলে ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিশ্ব বিজয়ের পথ সুগম হয়।

৯. চুড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারীঃ এ যুদ্ধে পরাজিত হলে হয়তবা মুসলমানগণ পৃথিবীর বুক থেকে চিরকালের জন্য বিলীন হয়ে যেত; বিস্মৃতির অতল গর্ভে নিমজ্জিত হতো তাদের ইতিহাস।

১০. সত্য মিথ্যার পার্থক্যঃ ঐতিহাসিক বালাযুরি বলেন, মহানবী (স) বলেছেন, এ যুদ্ধ সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে দেয়।

১১. মদিনার আন্তর্জাতিক পরিচিতিঃ অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন, এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয় লাভের ফলে মদিনা আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচিতি লাভ করে।

১২. রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, সামরিক দ্বন্দ্ব হিসেবে যত নগণ্যই হােক, বদর যুদ্ধ মুহাম্মদ (স)-এর রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত সুদৃঢ় করে।

১৩. আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহায্যঃ বদর যুদ্ধে মুসলমানগণ আল্লাহ তায়ালার প্রত্যক্ষ সাহায্য লাভ করেন। অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা এ যুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্য করা হয়।

১৪. সর্বোত্তম ইতিহাস সৃষ্টিকারীঃ ঐতিহাসিক নিকলসন বলেন, বিখ্যাত দৌড় প্রতিযােগিতায় ম্যারাথন যেমনিভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে, তেমনিভাবে মহানবী (স)-এর নেতৃত্বে বদরের যুদ্ধ সর্বকালের জন্য আরব দেশে ইসলাম এবং পৃথিবীর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

১৫. সাহাবায়ে কেরামের বদরী খেতাব লাভঃ বদর যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর রাসূল (স)-এর শক্তি সম্মান বৃদ্ধি পায়; তেমনি তার তিনশ তেরাে জন সাহাবী বীরের মর্যাদা লাভ করেন এবং তাদের বদরী সাহাবী খেতাবে ভূষিত করা হয়।

১৬. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনঃ বদর যুদ্ধে মুসলমানরা প্রচুর গনীমতের অধিকারী এবং বন্দী মুক্তিপণ দ্বারা আর্থিকভাবে লাভবান হন, যা একটি উদীয়মান রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ প্রয়ােজন ছিল। পক্ষান্তরে কুরাইশদের অর্থনৈতিক অবস্থা দারুণভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে।

উপসংহারঃ উপরােক্ত আলােচনায় প্রতীয়মান হয়, বদর যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত অপরিসীম। এ যুদ্ধে বিজয় লাভের ফলে মুসলমানদের শক্তি ও মনােবল বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী বিজয়ের সুদূরপ্রসারী পথ রচনা করে। এতে ইসলাম ও মহানবী (স)-এর মর্যাদাও বদ্ধি পায়। সুতরাং বদরের যুদ্ধকে ইসলামের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। অধ্যাপক হিট্টি তাই মন্তব্য করেন- Islam recovered and passed on gradually from the defensive to the offensive.