বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ একটি সাহিত্য সংস্থা। এল লিওটার্ড ও ক্ষেত্রপাল চক্রবর্তীর উদ্যোগে ১৮৯৩ সালের ২৩ জুলাই ‘বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার’ নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৮৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল এর নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ রাখা হয়। এর যাত্রা শুরু হয় কলকাতার শোভাবাজারে বিনয়কৃষ্ণ দেব এর বাসভবনে। বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধনই ছিল এ পরিষদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু প্রথম দিকে এর সব কাজই ইংরেজিতে সম্পন্ন হতো। এমনকি সভার মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘দি বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার’-এর অধিকাংশই লিপিবদ্ধ হতো ইংরেজিতে। ১৮৯৪ সাল থেকে পরিষদের মুখপত্র ‘সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা’ নামে ত্রৈমাসিক পত্রিকা হিসেবে বাংলায় প্রকাশিত হতে থাকে।

১৮৯৪ সালে পরিষদের সভাপতি ছিলেন রমেশচন্দ্র মজুমদার- সহসভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নবীনচন্দ্র সেন এবং সম্পাদক ছিলেন এল লিওটার্ড, দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। বিশ শতকের প্রথম দশকে পরিষদের কলেবর যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে এর সদস্য সংখ্যা ৫২৩-এ উন্নীত হয়। প্রখ্যাত সদস্যদের মধ্যে ছিলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রজনীকান্ত গুপ্ত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, অমৃতকৃষ্ণ মল্লিক, দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু প্রভৃতি জন। ১৯০৬ সালে পরিষদের এক বিশেষ অধিবেশনে কলকাতার বাইরে পরিষদের শাখা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পরপরই রংপুরে একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে বাংলার বিভিন্ন জেলা শহরে এবং বাংলার বাইরে ৩০টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা ভাষায় নানা বিষয়ের গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা করে পরিষদ বিদ্বৎসমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। সংস্কৃত, আরবি ইংরেজি ভাষা হতে বহু গ্রন্থ অনুবাদ করে প্রকাশ করা এবং দুষ্প্রাপ্য বাংলা গ্রন্থ, সাহিত্য গবেষণা নিয়মিত পুস্তকাকারে প্রকাশ করা পরিষদের অন্যতম প্রধান কাজ। পরিষদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির ‘বাংলা শব্দকোষ’ চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’, ‘চরিতমালা’ বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করতো।

গবেষণা কাজ ছাড়াও পরিষদ আরও কিছু বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। প্রাচীন মুদ্রা, প্রস্তুরমূর্তি, ধাতুমূর্তি, তাম্রশাসন, প্রাচীর চিত্র, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি হস্তলিপি পত্র ও দানপত্রাদি, প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র, পাণ্ডুলিপি ও প্রাচীন দলিল প্রভৃতি বিভাগসমৃদ্ধ একটি চিত্রশালা গঠন করা হয়। গ্রন্থপ্রকাশ, পদক ও পুরস্কার দান, দুস্থ সাহিত্যিক ভাণ্ডার গঠন প্রভৃতি সদনুষ্ঠানে সহায়তা করার জন্য অনেক মহানুভব ব্যক্তি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে গচ্ছিত তহবিল স্থাপন করেছেন। বহুবছরের চেষ্টার ফলে পরিষদ একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে- যেখানে রয়েছে বেশ কিছু দুর্লভ প্রাচীন পুস্তক। গ্রন্থাগারে পুস্তকের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। [তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া ৮ম খণ্ড)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।