রচনাগুলো অনেক সময় লিখতে হয়। তাই আমি বঙ্গবন্ধু টানেল – কর্ণফুলী টানেল
রচনা লিখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি বঙ্গবন্ধু টানেল – কর্ণফুলী টানেল
রচনা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমি বঙ্গবন্ধু টানেল – কর্ণফুলী টানেল রচনা তোমাদের
সুবিধার জন্য লিখে রাখলাম। আমি আশা করি তোমরা এই রচনা পড়ে অনেক উপকৃত হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল – কর্ণফুলী টানেল রচনা
ভূমিকা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা অন্য কর্ণফুলী টানেল হল একটি নির্মাণাধীন
সড়ক যা কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত। এই টানেল কে আবার সুরঙ্গ সড়কও বলা হয়।
কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের রয়েছে বিস্তর ইতিহাস।
নানা বাধা-বিপত্তি আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে পার হওয়া বড় প্রকল্প হল এই
টানেল বা সুরঙ্গ সড়ক। এই টানেলটি যুক্ত করবে কর্ণফুলী নদীর ২ তীরের অঞ্চলকে।
এছাড়াও এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যুক্ত করা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম – কক্সবাজার
মহাসড়ক। টানেল কে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দুয়ার খুলবে কারণ এই টানেল
চালু হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বাণিজ্যিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং সেই সঙ্গে
উন্মোচিত হবে হাজারো সম্ভাবনা নতুন দিগন্তের। আমাদের সকলের উচিত দেশকে একধাপ
এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আর এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ইতিহাস
১৯৬০ সালে প্রথম কর্ণফুলী টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণের প্রস্তাব
করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত করা হয়নি। বাংলাদেশের
বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম কে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে এই কর্ণফুলী নদী। এই নদীর ওপর
যদিও ইতোমধ্যে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তবে এই তিনটি সেতু এই শিল্প নগরীর
জন্য পর্যাপ্ত নয়। আর কর্ণফুলী নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের কারণে নদীর তলদেশে
পলি জমা হয় যার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এই পলি হুমকি স্বরূপ।
আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কর্ণফুলীতে নতুন সেতু নির্মাণ না করে উদ্বেগ গ্রহণ
করা হয় টানেল নির্মাণের। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রথম টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৪ সালের
১০ই জুন টানেল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেনজিংয়ে
একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
২০১৬ সালের ১৪ই অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং
প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেল প্রকল্প এলাকায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে
সুইস টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে খননের কাজ উদ্বোধন করেন।
কর্ণফুলী টানেল পরিচিতি
বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল হল চার লেন বিশিষ্ট টানেল। কর্ণফুলী নদীর
তলদেশে এই টানেলটি নির্মিত হচ্ছে দুটি টিউব সংবলিত ৩.৪ কিলোমিটার। এই টানেল শুরু
হয়েছে চট্টগ্রাম শহর প্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে এবং এই সুরঙ্গ নদীর
দক্ষিণ পাড়ের সি ইউ এফ এল যা চিটাগাং ইউরিয়া ফ্যাটিলাইজার এবং কাফকো অর্থাৎ
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝে মাঝে স্থান দিয়ে পচাবে নদীর
দক্ষিণপ্রান্তে।১৫০ ফুট গভীরে কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে সুরঙ্গ অবস্থান করবে।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানের নামক কর্ণফুলী নদীর তলদেশে যে টানেল নির্মিত
হবে তা হবে চার লেন বিশিষ্ট। মূল টানেলে থাকবে দুইটি টিউব। নদীর তলদেশে প্রতিটি
টিউব চওড়া হবে ১০.৮ মিটার এবং উচ্চতা হবে ৪.৮ মিটার বা ১৬ ফুট। আর ১২
মিটার হবে একটি টিউড থেকে ওপর টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম
প্রান্তে অপ্রচ রোড হবে ৫.৩৫ কিলোমিটার এবং ওভারব্রিজ হবে ৭২৭মিটার এবং এই
টানেলটি আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে।
প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম বছর এই টানেলের নিচ দিয়ে
প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে যা পরবর্তীতে আরও বাড়বে এবং প্রায় দেড় কোটিতে
গিয়ে দাঁড়াবে। গাড়ি চালুর প্রথম বছর প্রায় ৫১ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহনকারীর
ট্রেইলর হবে এবং বিভিন্ন ধরনের ভ্যান ও ট্রাক চলাচল করবে। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে
মিনিবাস ও বাস থাকবে ১৩ লাখ আর বিভিন্ন ছোট গাড়ি ট্রাক ও বাস চলাচল করবে প্রায়
১২ লাখ। এই সুরঙ্গটি নির্মিত হলে এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সুরঙ্গ পথ।
টানেলের নির্মাণ তথ্য
চীনের এক নির্মাণ সংস্থা এই সুরঙ্গটি নির্মাণের কাজ হাতে পেয়েছে। এই সুরঙ্গ
তৈরির কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৯৬% কাজ শেষ
হয়েছে। সুরঙ্গ টির মূল দৈর্ঘ্য হল প্রায় ৪৩ কিলোমিটার এবং এর সাথে সংযোগ
সড়কযুক্ত হবে প্রায় ৫ কিলোমিটার।
কর্ণফুলী টানেলের অবস্থান
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলটি অবস্থিত। টানেলটি
প্রবেশ করে পতেঙ্গার ৪১ নং ওয়ার্ড থেকে এবং নদীর অপর পাড় আনোয়ারা প্রান্তে সার
কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বহি গমন করবে। এই চ্যানেলটি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম
কে সংযুক্ত করবে দেশের বাকি অংশের সাথে আর এই সংযোগের ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড
বৃদ্ধি পাবে এবং সংযোগের উন্নতি হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের নকশা
বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে দুই লেনের রাস্তা। ক্যারেজ ওয়ে
রয়েছে চার লেনের এবং রয়েছে একটি পৃথক সার্ভিস লেন। টানেলটির দৈর্ঘ্য ৯.৩৯২
কিলোমিটার কিন্তু পানিতে অবস্থান করবে ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই টানেলে বায়ু প্রবাহ
নিশ্চিত করার জন্য ১২৬ টি জেট ফ্যান থাকবে এবং আট ৮ টি বায়ু চলাচল ফ্যান থাকবে।
টানেলের ভেতর গতিসীমা থাকবে ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮
হাজারটি যান বহন চলাচলে সক্ষম হবে।
টানেল নির্মাণে চুক্তি ও ব্যয়
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি যৌথ
অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চীন
পিং ঢাকা সফরে আসেন এবং টানেল চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পটির ব্য়য়
ধার্য করা হয়েছে ১০৩৭৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। এই ব্যয় সরকার দিচ্ছে চার ৪ হাজার
৪৬১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা আর ২০ বছর মেয়াদী ঋণ হিসেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক দিছে
৫৯১৩ কোটি টাকা। আর এই টানেলের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে চীনের
কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কারণ/উদ্দেশ্য
বঙ্গবন্ধুর টানেল নির্মাণের অনেক কারণ রয়েছে। নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে আমাদের এই কর্ণফুলী নদী। নদীর এক প্রান্তে
রয়েছে বন্দর নগর এবং অপর প্রান্তে রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। ইতিপূর্বে যদিও
কর্ণফুলী নদীর উপর তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তারপরেও এই সেতু যথেষ্ট নয়।
এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমে যা চট্টগ্রাম শহরের জন্য একটি বড় হুমকি।
আর এই সমস্ত কারণে সেতু নির্মাণ না করে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও সে
সমস্ত কারণে টানেল নির্মাণ প্রয়োজন তা হলো-
-
- কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সাথে ডাউন টাউন কে যুক্ত করা এবং
উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা
- কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সাথে ডাউন টাউন কে যুক্ত করা এবং
-
- পণ্য সেবা ও জ্বালানির বাজার প্রবেশ গণ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি অশুল্ক বাধা
দূরীকরণ
- পণ্য সেবা ও জ্বালানির বাজার প্রবেশ গণ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি অশুল্ক বাধা
-
- চট্টগ্রাম শহরে নীরবছিন্ন ও যুগপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা
এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ
স্থাপন
- চট্টগ্রাম শহরে নীরবছিন্ন ও যুগপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা
-
- বাণিজ্য সহজে করণ ত্বরান্বিত করা এবং খনিজ দ্রব্য পানীয় অন্যান্য প্রাকৃতিক
সম্পদের যৌথ উত্তোলন উন্নয়ন করা
- বাণিজ্য সহজে করণ ত্বরান্বিত করা এবং খনিজ দ্রব্য পানীয় অন্যান্য প্রাকৃতিক
-
- চট্টগ্রাম পোর্টের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করন এবং প্রস্তাবিত গভীর
সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিতকরণ
- চট্টগ্রাম পোর্টের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করন এবং প্রস্তাবিত গভীর
-
- ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজারের মধ্যে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা
-
- চীনের সাংহাই নগরীর মত চট্টগ্রাম কে ও ওয়ান সিটি টু টাউন এর আদলে গড়ে তোলা
-
- চট্টগ্রাম বন্দরের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা
-
- কর্ণফুলী নদীর দুইপাশে নতুন শহর ও জনবসতি বাড়ানো
-
- ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান স্থানের সঙ্গে কর্ণফুলীর পূর্ব পার্শ্বে নির্মীয়মান
শহরে সংযোগ স্থাপন এবং উন্নয়ন কাজে গতি বৃদ্ধি করা
- ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান স্থানের সঙ্গে কর্ণফুলীর পূর্ব পার্শ্বে নির্মীয়মান
-
- কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান দুই সেতুর ওপর থেকে যান বহনের চাপ কমিয়ে আনা
-
- কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের মধ্যে যোগাযোগও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি প্রসার ঘটানো
কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ তথ্য
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজ হাতে পেয়েছে চীনের এক নির্মাণ সংস্থা। আশা করা
যায় ২০২৩ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। টানেলটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার হলেও
এর সাথে সংযোগ সড়ক বা এপ্রোচ রোড যুক্ত হবে পাঁচ ৫ কিলোমিটার।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশপথ
বর্তমান সরকারের নকশা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর টানেল বিমানবন্দর হয়ে প্রবেশপথ
অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটারভাটির দিকে নৌ বাহিনীর এভিনিউ এর সামনে যা
পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
বঙ্গবন্ধু টানের বহিঃ গমন পথ
চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা
প্রান্তে সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার এর মাঝামাঝি স্থান দিয়ে ৯.৩৯২
কিলোমিটার হল এই টানেলের দৈর্ঘ্য। এটি দুই লেনের টানেল বা ডুয়েল। আর এই টানেলটি
নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প ড্রিভেন মেথন পদ্ধতিতে। নদীর তলদেশ থেকে টানেলের গভীরতা
হবে ৩৪ ফুট থেকে ১০৮ ফুট বা ১৮ থেকে ৩১ মিটার।
কর্ণফুলী টানেলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে অবস্থিত এই কর্ণফুলী টানেল শুধু চট্টগ্রামের নয়
সারা দেশের অর্থনীতিতে সাড়া জাগাবে। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে দেশ যুক্ত হবে। এই
বঙ্গবন্ধুর টানেলের প্রকল্পকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোনসহ চলছে বিশাল
অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। চট্টগ্রামের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় সার কারখানা
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত। কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল এবং
চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কার্যক্রম
সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলএনজি সহ বহু
শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তি সহ সাতটি
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষে টানেল নির্মাণের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। এই টানেলের জন্য যোগাযোগ
ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি ও বৃদ্ধি
পাবে।
টানেলের শিল্পায়ন
আনোয়ারায় অর্থাৎ কর্ণফুলী নদী দক্ষিণ পাড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। দুই
পাড়ে সেতু বন্ধন রচিত হবে এবং এই টানেলের মধ্য দিয়ে। যার ফলে খরচ ও সময় দুটোই
হ্রাস পাবে। এবং পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানা কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল,
বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরসহ প্রক্রিয়া জাত সহজ হবে বিশেষ করে দেশের
উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। আনোয়ারায় চায়না ইকোনমি জোন স্থাপিত হচ্ছে ৭৮৩র জমে
নিয়ে।
এছাড়াও এখানে ইলেকট্রনিক পণ্য, সিমেন্ট শিল্প, রপ্তানি মুখী জাহাজ শিল্প ও ফানেশ
সহ শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে প্রায় ৩১ টি।
বিনিয়োগের প্রসার
দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো টানের নির্মাণকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর ওপারে
বিনিয়োগ শুরু করেছে। বর্তমানে কোরিয়ান ইপিজেড নদীর ওপারে আংশিক শিল্প চালু
করেছে। সরকার আনোয়ারায় একটি ইকোনমিক জোন স্থাপন করেছে টানেল নির্মাণের সঙ্গে
সমন্বয় রেখে। চায়না ইকোনমিকজোন বাস্তবায়িত হচ্ছে চীনের বিনিয়োগকারীদের
জন্য।
কর্ণফুলী টানেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঢাকা-চট্টগ্রাম – কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এই
চ্যানেলের জন্য। এছাড়াও এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে।টানেলের সঙ্গে
যুক্ত করতে টানেলের পশ্চিম প্রান্তে ৭২৭মিটার ও পূর্ব প্রান্তে পাঁচ কিলোমিটার
সড়ক নির্মাণ করা হবে। আনোয়ারা উপজেলায় যোগাযোগ ও রক্ষা পাবে চট্টগ্রাম শহরের
সঙ্গে।
কর্ণফুলী টানেলে শিল্পের উন্নয়ন
কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবন, পাহাড়, সমুদ্র ও নদীসহ দেশের প্রধান পর্যটন
এলাকা গুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মুখ্য
ভূমিকা পালন করবে। আর সেই সাথে নিরসন হবে চট্টগ্রাম শহরের যানজট।
বেকারত্ব দূরীকরণ
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ২৩ টি প্রতিষ্ঠান এ ছাড়াও
তিনটি বড় কোম্পানি যেমন ডেভেলপমেন্টাল কোম্পানি, গায়া প্রোডাক্ট ও ডেইগু
প্রোডাক্ট কোম্পানিসহ অনেক কোম্পানি তাদের স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও এই
এলাকায় তৈরি পোশাক, রপ্তানি মুখী জুতা, টেক্সটাইলসহ নানা উৎপাদন মুখী শিল্প
প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হবে।আর এসব কোম্পানি স্থাপনের ফলে বেকারত্ব দূরীকরণ
সম্ভব হবে। কর্ণফুলী টানেল বেকারত্ব দূরীকরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
সৌন্দর্য বর্ধন ও সবুজ আয়ন
বঙ্গবন্ধুর টানেলের চার লেনের ১০ কিলোমিটার সড়কে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
পরিচালিত সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে ৩০ মিটার এবং এ সড়কে কাফকো ও সেন্টার
ক্রান্তির হাট থেকে জেলেঘাট পর্যন্ত ফ্লাইওভার হবে ৭৫০মিটার। আর এই সড়কের ২ পাশে
হবে ড্রেন এবং সবুজ আয়ন করা হবে।
টানেলের বর্তমান অবস্থা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে ২০২০ সালে নভেম্বর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা
প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে নদীর ওপারে আনোয়ারা পর্যন্ত একটি
স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হয় এবং
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কাজ শেষ হয়। দুইটি টিউবের কাজ শেষ হলে উভয় মুখী চারটি
মুখ খুলে দেওয়া হয় আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত। যারা এই প্রকল্পের
কাজে নিয়োজিত আছে তারা এই টিউবের ভিতর দিয়ে এপার থেকে ওপারে যেতে পারছে।
পিচ ঢালা সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পথে। তত্ত্বাবধানে দ্রুত এগিয়ে চলেছে এই
টানেল এর কাজ। এই প্রকল্পের কাজ ২৪ ঘন্টায় চলছে। এছাড়া এ কাজে নিয়োজিত করা
হয়েছে বাড়তি জনবল, অত্যাধুনিক নানা যন্ত্রপাতি। আশা করা যায় খুব দ্রুত এর
নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব
এই কর্ণফুলী টানেল চালু হলে টানেলের আশেপাশে গড়ে উঠবে নানা শিল্প কারখানা যার
কারণে সম্ভব হবে দেশের দরিদ্র দূরীকরণ এবং সেই সাথে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার
উন্নয়ন হবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত বলে জিডিপিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
উপসংহার
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক রাজধানী হলো দেশের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত
দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম শহরে বাস করে প্রায় ৫৭ লক্ষ ৪০
হাজার মানুষ। দেশের অর্থনৈতিক বড় কর্মস্থান হল চট্টগ্রাম। স্বপ্নের টানেলের
সুবিধা ও পাবে স্বপ্নের মতোই ।আর এই টানেল প্রকল্পের কারণে কর্ণফুলী নদীর দুই
পাড়ের দুটি শহর সিটিতে পরিণত হতে পারে। এছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা কাজের
সুযোগ সৃষ্টি হবে। উন্নয়ন ঘটবে দেশের অর্থনীতিতে।যার ফল দেশবাসী ভোগ করবে। এখন
শুধু অপেক্ষা উদ্বোধনের।
Leave a comment