সাময়িকপত্র হিসেবে বঙ্গদর্শন পত্রিকার ভূমিকা মূল্যায়ন কর

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিকাশে, বিশেষকরে বাংলা গদ্যরীতির গঠনে উনিশ শতকে সাময়িক পত্রের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেসব সাময়িক পত্রের মধ্যে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’ বিখ্যাত। পত্রিকাটি ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ পাওয়ার পর বাংলা গদ্য-নির্ভর সাহিত্য তথা উপন্যাস, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, রস রচনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী প্রভাব রাখে। বাংলা ভাষায় উপন্যাস সাহিত্যের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কালজয়ী উপন্যাসগুলো ‘বদর্শন’ পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশ পেয়েছে। ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশের আগে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন মূলত ঔপন্যাসিক। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি প্রবন্ধ, রস রচনা, সমালোচনা, ধর্মালোচনা ইত্যাদি রচনায়ও পারদর্শিতা দেখান। ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশের জন্যই তিনি সাহিত্যের নানা শাখায় লিখতে শুরু করেছিলেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপলব্ধি করেছিলেন যে, “যত দিন না সুশিক্ষিত জ্ঞানবন্ত বাঙালিরা বাঙ্গালা ভাষায় আপন উক্তি সকল বিন্যস্ত করিবেন, ততদিন বাঙালির উন্নতির কোন সম্ভাবনা নাই।” বঙ্কিমচন্দ্র সে উদ্দেশ্যেই বঙ্গদর্শন প্রকাশ করেছিলেন। পত্রিকাটি সম্পর্কে জনৈক সমালোচক লেখেন- “পত্রিকাটিকে যে কেবল মাসিক পত্রের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা চলে তা নয়, বরং এর মধ্যে বাঙালি সমাজ আত্মদর্শনের বীজমন্ত্র খুঁজে পেয়েছিল। সমকালীন চিন্তাধারার যথার্থ প্রতিচ্ছবি বঙ্গদর্শন।”

‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার মতো বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’ একটি লেখকগোষ্ঠী তৈরি করেছিল। তারাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, অক্ষয়চন্দ্র সরকার, চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।