অথবা, প্লেটোর ন্যায়বিচারের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ প্লেটো ছিলেন গ্রিক দার্শনিকের মধ্যে অন্যতম। তার দার্শনিক চিন্তার প্রধান ফসল ‘The Republic’ গ্রন্থটি। আর এই গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ন্যায়বিচার (Justice)। প্লেটোর মতে, ন্যায়বিচার হলো যা প্রত্যেক মানুষকে অন্যের কাছে মাথা নত না করে নিজ নিজ কর্তব্য পালনের কথা শিক্ষা দেয়।
ন্যায়বিচারের বৈশিষ্ট্যঃ প্লেটোর ন্যায়বিচারকে বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে–
(১) সামাজিক বন্ধনঃ প্লেটোর ন্যায়বিচারের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সামাজিক বন্ধন স্বরূপ। এই বন্ধন সমাজকে সুসংহত করে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদিগকে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ করে।
(২) স্থান নির্বাচনঃ স্থান নির্ধারণ হলো প্লেটোর ন্যায়বিচারের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য। তার মতে ন্যায়বিচার প্রত্যেক মানুষের জন্য সমাজে তার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়। এই নির্ধারণের ভিত্তি হলো তার প্রকৃতিগত ও শিক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত যোগ্যতা।
(৩) বিরোধহীন ন্যায়বিচারঃ প্লেটোর ন্যায়বিচার হলো বিরোধহীন ন্যয়। তাই এই ন্যায়বিচারের ন্যায় ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের প্রকৃতির মধ্যে কোনো মৌলিক বিরোধ তৈরি করে না। ফলে এই ধারণা একটি বিরোধহীন ধারণা।
(৪) চারিত্রিক বিকাশঃ চারিত্রিক বিকাশ হলো প্লেটোর ন্যায়বিচারের অন্যতম দিক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তির কর্মজীবনে যে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয় তার ফলে উক্ত ব্যক্তির চারিত্রিক জীবনের বিকাশ ব্যাহত হয় না; বরং পরিপূর্ণতা লাভ করে।
(৫) সততাঃ সততা প্লেটোর ন্যায়বিচারের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। প্লেটোর মতে, ন্যায়বিচার মানুষকে শুধু পূর্ণ বা সৎ নাগরিকেই পরিণত করে না, তাকে সৎ মানুষেও পরিণত করে। তার ন্যায়বিচারে সততার পরিচয় মেলে।
(৬) স্থাপত্য শিল্পঃ স্থাপত্য শিল্প প্লেটোর ন্যায়বিচারের সর্বশেষ গুণ। তার ন্যায়বিচারের চরিত্র স্থাপত্য শিল্পের অনুরূপ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন তা তার স্থাপত্যমূলক শিল্পেরই বহিঃপ্রকাশ।
পরিশেষঃ উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এগুলোই হলো প্লেটোর ন্যায়বিচারের মৌলিক দিক। এগুলোকে বাদ দিয়ে আধুনিক কালেও ন্যায়বিচার কল্পনা করা যায় না। ফলে প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্ব আজও ব্যপকভাবে প্রাসঙ্গিক।
Leave a comment