পোস্ট সূচিপত্রঃ প্লাস্টিক মুক্ত – আমার পৃথিবী

দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার

প্লাস্টিক দ্রব্যাদির ওপর নির্ভরতার কারণ

প্রত্যহিক জীবনে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির ব্যবহারের তালিকা

প্লাস্টিক দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

প্লাস্টিক দূষণ কি

পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আহরণ যা মানব জীবন, বন্যপ্রাণী, বন্যপ্রাণ আবাসস্থলের ওপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে তাকে প্লাস্টিক দূষণ বলে। প্লাস্টিক আবিষ্কার বিজ্ঞানের আশীর্বাদ না অভিশাপ এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই পৃথিবীতে কোন বিরূপ প্রভাব দেখা দিলে তার প্রভাব এসে প্রথমে পরিবেশের উপর পড়ে। প্লাস্টিক একটি অপচনশীল রাসায়নিক দ্রব্য যা পরিবেশের সাথে কখনোই মিশে না।

আর এই প্লাস্টিক যেখানে থাকে সেখানে কোন গাছ উৎপাদন হয় না। প্লাস্টিক দূষণ যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিবেশ দূষণকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে নিয়মিত এই প্লাস্টিকের ব্যবহার। প্রতিদিন ব্যবহৃত পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক সামগ্রিক, গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। আর এইসব প্লাস্টিকের পুনঃ ব্যবহার হয় না। আর এগুলোই পরিবেশ থেকে বর্জ্য আকারে নেওয়া হয়। আর এসব কাজে মানুষের অসচেতনতাই হলো প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ।

প্লাস্টিকের বজ্যের প্রকারভেদ

প্লাস্টিক দূষণ প্রধানত তিন প্রকার যথা

মাইক্রো 

মেসো এবং 

মেক্রো বর্জ্য

সাধারণ প্লাস্টিক দূষণের জন্য দুই ধরনের প্লাস্টিককে দায়ী করা হয়। মাইক্রো প্লাস্টিক বা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক এবং ম্যাক্রো প্লাস্টিক। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে প্লাস্টিক কেন্দ্রে বা জনো সম্মুখভাগে সর্বোচ্চ ঘনত্ব অবস্থায় ঘনীভূত হয়ে সঞ্চিত হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্যকে আবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এই দুই ভাগে ও শ্রেণীকরণ করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক প্লাস্টিক সংগ্রহের সময় পরিবেশের সাথে বিদ্যমান থাকে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বিভিন্ন বোতলের ঢাকনা বা কোন ছোট ছোট প্লাস্টিকের উপকরণ।

ম্যাক্রো বর্জ্য

যে সব প্লাস্টিক বর্জ্য আকারে ২০ মিলিমিটার বা তার চেয়ে দীর্ঘ তাকে বলা হয় ম্যাক্রো বর্জ্য। এগুলোর মধ্যে পলিথিন ব্যাগ, পানির বোতল অন্যতম। এইসব ম্যাক্রো বর্জ্য গুলো সাধারণত সমুদ্রের পানিতে বেশি পাওয়া যায় যা সামুদ্রিক জীবের ক্ষতির জন্য দায়ী। আর এই প্লাস্টিক দূষণ মাছ ধরা জালসহ দূষণ করে থাকে।

 মাইক্রো বর্জ্য

যে সকল প্লাস্টিকের আকার ২ মিলিমিটার থেকে ৫ মিলিমিটারের বেশি থাকে তাকে বলা হয় মাইক্রো  মাইক্রো বর্জ্য। মাইক্রো বর্জ্য কে আবার নরডাল বর্জ্য নামে অভিহিত করা হয়। এই নরডাল দ্বারা নতুন নতুন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্লাস্টিকগুলো এত ক্ষুদ্রাকার এগুলো পরিবেশের সাথে মিশে যেতে পারে। আর এই ম্যাক্রো বর্জ্য ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে ফিল্টার ফিডং জীব এগুলো  গ্রহণ করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্লাই মাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৪ সালে রিচার্ড থম্প্সন গবেষণা করেন এবং এই গবেষণার মাধ্যমে তারা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টারটিকা সহ ইউরোপ মহাদেশীয় সাগরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রো বর্জ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। থম্পস তার সহযোগীদের নিয়ে সাগরের পানিতে যে প্লাস্টিক বর্জ্য খুঁজে পান তার মধ্যে কিছু অংশ ছিল যা মানুষের চুলের চাইতেও ক্ষুদ্র।

 থম্পস সাগরের তলদেশ থেকে খুঁজে পান প্রায় তিন লক্ষ প্লাস্টিক উপাদান এবং সমুদ্র তলদেশ থেকে খুজে প্রাণ প্রায় এক লক্ষ প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রো প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ।

প্লাস্টিক দূষণের কারণ

প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ হলো মানুষের অসচেতনতা। প্লাস্টিক উৎপত্তির স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন আকারে প্লাস্টিক বিভিন্ন উপায়ে পরিবেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাতাসের অসম গতি, সমুদ্র স্রোত এবং ভৌগোলিক বৈচিত্র। প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্র কি পরিমাণে দূষিত হয়  ক্যারিবিয়ান সমুদ্র অঞ্চলে গেলে তা ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।

আর এই সমুদ্র অঞ্চলে মাইক্রো এবং ম্যাক্রো বিভিন্ন আকারে প্লাস্টিক পাওয়া যায়। প্লাস্টিক পরিবেশে দীর্ঘদিন অবস্থান করে যার কারণে প্লাস্টিক একটি অপচনশীল দ্রব্য। আর এই মাইক্রো প্লাস্টিক গুলো বিভিন্ন প্রাণীর দেহে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে ঢুকে পড়ে যা পরিবেশ এবং প্রাণী উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক। প্লাস্টিক বিভিন্ন উপায়ে আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে।

মাটিতে প্লাস্টিক দূষণের কারণ

প্লাস্টিকে রয়েছে ক্লোরিন এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা ভূপৃষ্ঠের পানির সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানির সাথে ও মিশে যায় এবং খাদ্যচক্রের সাথে তা বিভিন্ন জীবদেহে প্রবেশ করে। আর এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্লাস্টিক মাটির সাথে মিশে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪০০ বছর। মাটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অনুজীব যা সাহায্য করে প্লাস্টিক ভাঙ্গনে।

এই সকল অনুজীবের মধ্যে রয়েছে নাইলন খাদ্য ব্যাকটেরিয়া, ফ্লাভো ব্যাকটেরিয়া এবং সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়া। আর এই সকল ব্যাকটেরিয়া নাইলোজেন এনজাইম ক্ষরণ হয় যা বিভিন্নঅনুকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আর এই সকল প্লাস্টিক ভাঙ্গনের ফলে উৎপন্ন হয় মিথেন গ্যাস। এক প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাস হলো মিথেন গ্যাস। আর এই মিথেন গ্যাসই মূলত দায়ী এই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য।

সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক দূষণ

সমুদ্রের পানিতে মিশে যায় নরডাল নামক এক ধরনের প্লাস্টিক এগুলো এমন এক ধরনের শিল্পজাত প্লাস্টিক যা কর্পোশীপ বা প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমুদ্রের পানিতে পতিত হয় প্রচুর পরিমাণে নর্দাল প্লাস্টিক আর বছরের পর বছর ধরে এই প্লাস্টিক সমুদ্রের পানিতে মিশে যাচ্ছে।

আর এই ক্ষতিকারক প্লাস্টিক থেকে প্রতিনিয়ত পলিস্টিরিন বায়োফেনল নামক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে যাচ্ছে। ২০১২ সালে এক গবেষণা হয় আর এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে সমুদ্রে প্লাস্টিক পদার্থ রয়েছে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন।

দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার

১৯৫০ সাল থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৩0 কোটি টন।  আবর্জনায় পরিণত হয়েছে প্রায় ৪৯০ কোটি টন। এর মধ্যে বাকি কিছু অংশ পনঃ বিকিরণ করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে, কিছুটা পোড়ানো হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে প্লাস্টিকের উপস্থিতি বিদ্যমান।

আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে টুথব্রাশ থেকে শুরু করে মোবাইল, পড়ার টেবিল এমনকি খাবার প্লেট সহ সবকিছু প্লাস্টিকের তৈরি। আমাদের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সহ সকল প্রকার উপকরণ প্লাস্টিকে আবদ্ধ। আমরা দিন দিন যেন প্লাস্টিকের কাছে বন্দী হয়ে যাচ্ছি।

প্লাস্টিক দ্রব্যাদির ওপর নির্ভরতার কারণ

আমাদের মানব সমাজে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিকল্প ছাড়া কোন কিছুই ভাবতে পারি না। আর এই এত মাত্রায় প্লাস্টিক ব্যবহারের মূল কারণ হলো এটি তুলনামূলক সস্তা এবং পরিবহন সহজ। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি জিনিস ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন ধরে আর দামে সস্তা ও পরিবহনের সহজ হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের উপর মানুষ এত নির্ভরশীল।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৯৫0 সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিক বর্জ্য ছিল ৬৩0 কোটি টন। তবে এই বর্জন এখনো প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে। তবে এভাবে যদি প্লাস্টিকের পরিমাণ অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৫০ সালে বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ হাজার টন।

প্লাস্টিকের আবিষ্কার

মানুষের জীবন যাত্রা সহজ সরল উন্নত করা লোকে প্লাস্টিক আবিষ্কার করা হয় প্লাস্টিক ব্যবহার আমাদের কাছে অনেক সহজ করেছে এবং আর্থিকভাবে করেছে সহজ আলেকজান্ডার ১৯৫০ সালে প্রাকৃতিক রাবার থেকে প্লাস্টিক তৈরি করেন ১৯৭৯ সালে কৃত্রিম পলিমার ও সেলুলার আবিষ্কার করেন নিউ বিকেল এন্ড সম্পূর্ণ কৃত্রিম প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন

প্রত্যহিক জীবনে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির ব্যবহারের তালিকা

বর্তমান যুগে আমরা কি পরিমাণ প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আমরা যখন ব্যবহারের পর ফেলে রাখি তখন থেকেই আমাদের সমস্যা শুরু। আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহার যে সব জিনিস যেমন – পানির বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগ যেখানে সেখানে ফেলে রাখি।পুরো বিশ্ব প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে বিপুল পরিমাণে যেমন –

  • এক মিনিটে ১০ লক্ষ প্লাস্টিক বোতল ক্রয় করা হয় তরল পদার্থের সাথে।
  • প্রায় ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক আমরা বর্জ্য হিসেবে নদী-নালাতে ফেলি।
  • প্রতিবছর মোট ৫০ হাজার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
  • এক দশকে আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পরিমাণ বিগত এক শতাব্দীর ব্যবহৃত প্লাস্টিকের থেকেও বেশি।

প্রতিনিয়ত আমরা প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহার করলেও দেখা গেছে এর মধ্যে ৫০ শতাংশ একবার ব্যবহার করেই আমরা ফেলে দেই।

প্লাস্টিক দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

প্রতিবছর প্লাস্টিক উৎপাদনে তেলের দরকার হয় প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল। দুই থেকে তিন কেজি পরিমাণ বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় ১ কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে। আর এই কার্বন ডাই অক্সাইড উষ্ণায়নের যে মিথেন দায়ী সেই মিথেন গ্যাস  উৎপাদন করে থাকে এই প্লাস্টিক।

মানবদেহে প্লাস্টিকের প্রভাব

আমরা প্রতিদিন নানা কাজে প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি। প্লাস্টিক পোড়ালে নির্গত হয় স্টইরিন নামক গ্যাস যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে লোমকূপের সাহায্যে। যার কারণে আমাদের মাথা ধরা, ক্লান্তি, দূর্বলতা এমন কি স্নায়ুতন্ত্রের ও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়াও প্লাস্টিকের ওপর যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন মাইকোপ্লাস্টিকে পরিণত হয় যার কারণে প্লাস্টিক থেকে নিঃসৃত বিষ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আমরা নানা অসুখে ভুগে থাকি।

আমরা বাজার থেকে মাছ, মাংস কিনে এনে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে ফ্রিজে রাখি যা অস্বাস্থ্যকর। আমরা জেনে শুনে বিষ পান করি। প্লাস্টিক পোড়ালে তা থেকে ফিউরান, ডাই অক্সিন, ডাইরিন নামক বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয় আর সেগুলো খাদ্য এবং পানীয়র মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে।

প্রাণীকুলের ওপর প্লাস্টিকের প্রভাব

২০১০ সালে শীটল নামক সমুদ্র সৈকতে একটি মৃত তিমি মাছ পাওয়া গিয়েছিল যার পেট ভর্তি ছিল প্লাস্টিক। আর এর মূল কারণ হলো প্রাণী ভুল করে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। মৃত তিমির পেট থেকে টনটন প্লাস্টিক উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া প্লাস্টিকের প্যাকেটে আটকা পড়ে দম বন্ধ হয়ে অনেক প্রাণী মারা যায়। সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিকের কারণে প্রায় ৮০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

আর এই প্লাস্টিকের কারণে সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয় প্লাস্টিকের দুষনে শিকার হয় প্রায় ১০ লাখ পাখি। প্লাস্টিকের প্রভাবে বর্তমানে কচ্ছপ বিলুপ্তির পথে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।

প্লাস্টিক দূষণ ও বাংলাদেশ

প্লাস্টিকের ব্যবহার বাংলাদেশ সহ বিশ্বে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিক যেন আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য উপাদান। প্লাস্টিক দূষণের শীর্ষে যে দেশগুলো রয়েছে বাংলাদেশে এই তালিকায় দশম স্থানে আছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যে দেশ ২০১০ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পলিথিনের স্থায়িত্ব, কম খরচ, সহজলভ্য ও বিভিন্ন আকারের কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির বাজার রয়েছে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০০০ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী সংস্থা রয়েছে সেখানে কাজ করে প্রায়২0 লাখের বেশি লোক। বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রায় ৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন পরিতক্ত হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ যা পর্যায়ক্রমে সমুদ্রে নিমজ্জিত হচ্ছে। আর এসব কারণে প্লাস্টিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক বিশ্ব প্রতিবেদন ফোরাম এক প্রতিবেদন পেশ করেছে।সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবছর সাগরে পতিত হয় প্রায় ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক আর এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এই পৃথিবীতে ১০ লাখ প্লাস্টিক বোতল পানিতে পতিত হয় এক মিনিটে যা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি স্বরূপ।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সমুদ্র সম্মেলনে ২০২৫ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় সমুদ্র দূষণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়।এছাড়াও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ২০১০ সালের মধ্যে পলিথিনের ব্যাগের পরিবর্তে চটের ব্স্তা বা ব্যাগের ব্যবহারের বাধ্যতামূলক করা হয়। পরিবেশকে বাঁচাতে হলে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে করণীয়

প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গ্রহণ করেছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। আবার প্লাস্টিক পুনঃ ব্যবহারের ব্যবস্থা ও গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সুপার শপ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র একবার ব্যবহার করে ফেলে না দিয়ে আবার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে জাপান।

এছাড়া ৫০ মাইক্রো ক্রেনের কম পুরো প্লাস্টিক ব্যবহার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।যদি প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করা যায় তাহলে সবচেয়ে উপকৃত হওয়া যাবে এবং এটি হবে একমাত্র সমাধান।

প্লাস্টিক মুক্ত আমার পৃথিবী

বর্তমান বিশ্বে একটি বড় সমস্যা হল প্লাস্টিক সমস্যা। প্লাস্টিক দূষণের কারণে এই পৃথিবীর প্রায় নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণ  চরম পর্যায়ে তেমনি প্লাস্টিকে দূষণসমুদ্র, নদী এমনকি কোন জলাশয় কে রেহাই দেয়নি। এই পৃথিবীতে প্লাস্টিক বাৎসরিক উৎপাদন কয়েক লক্ষ টন। মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে কয়েক কিলোগ্রাম।

প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী গড়া এখন শুধু স্বপ্ন। ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ প্লাস্টিক তৈরি করেছেন ৮১৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। এই প্লাস্টিকের মধ্যে মানুষ পুড়ে ছাই করেছে মাত্র ৯ শতাংশ কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ পোড়ানো হয়নি বা পোড়ানো যায়নি। বর্তমান বিশ্বে একটি বড় সমস্যা বা প্রধান সমস্যা হলো জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা। আর এই সমস্যা পুরো বিশ্বকে একটি এক পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক কারণ রয়েছে তবে প্রাকৃতিক কারণ যতটা না দায়ী পরিবেশ দূষণের জন্য তার চেয়ে বেশি দায়ী হলো প্লাস্টিক। মানব সৃষ্ট একাধিক কারণ এর মধ্যে প্লাস্টিক হচ্ছে অন্যতম প্রধান সমস্যা। প্লাস্টিক হলো নিম্ন গলনাঙ্ক ও সিন্থেটিক বা নিম্ন সিন্থেটিক পদার্থ তাপ দিলে যে কোন আকার ধারণ করতে পারে। আর তাপ দেওয়া বন্ধ করলে কঠিন অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে।

প্লাস্টিক হলো সস্তা, সহজ বহনযোগ্য, সহজলভ্য ও অস্থায়ী। তাই মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে স্বাছন্দবোধ করে থাকে। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশ সহ সকল দেশেই প্লাস্টিক নিত্য ব্যবহার্য। আরও ব্যাপক প্লাস্টিকের ব্যবহার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আর এই সমস্ত প্লাস্টিক সামগ্রিক শেষ আশ্রয়স্থল হয় নদী – সমুদ্র বা বিভিন্ন জলাশয়ে।

আমাদের এই পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে। আর জলাশয়ে প্রাণীগুলো মৃত্যুবরণ করছে করুণভাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সব পাখি সমুদ্রে বিচরণ করে তাদের পাকস্থলীর প্রায়ই শতকরা ৮০ভাগ জায়গা প্লাস্টিকে ভর্তি। আর প্লাস্টিক হজম হয় না যার কারণে পাখিগুলো আর খাবার খেতে পারেনা। আর দিনের পর দিন খাবার না খাওয়ার কারণে পাখিগুলো মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে।

প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত যার কারণে আমরা চিন্তাও করি না যে প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকারক। আমরা যে প্লাস্টিক ব্যবহার করি তার কাঁচামাল হল – তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার। আমরা দোনোদিন কাজে যেসব প্লাস্টিক ব্যবহার করি যেমন প্লাস্টিকের গামলা, জগ, বালতি, পানির বোতল, চায়ের কাপ, গ্লাস, প্লাস্টিকের গামলা, কোমল পানিয়  পাত্রসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার করি।

বাংলাদেশ প্রতিবছর মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার করে প্রায় ৫ কেজি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ২০৩০ সাল নাগাদ এই প্লাস্টিকের ব্যবহার দাঁড়াতে পারে মাথাপিছু ৩৪ কেজি। মারাত্মক ক্ষতিকর এই প্লাস্টিক। এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের পৃথিবীকে করতে হবে প্লাস্টিক মুক্ত।

শেষ কথা

বাংলাদেশ হলো বিশ্বের প্রথম দেশ যে দেশ ২০১০ সালে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো প্লাস্টিকের ব্যবহারে জনসাধারণকে অনুসাহিত করা। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে উৎপাদনকারী ভোক্তা, একটিভিটিস, গণমাধ্যম কর্মী সহ যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার ও উৎপাদনে নতুন মডেল সৃষ্টি করা দরকার। আমরা কোমল পানীয়র জন্য প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে কাঁচের বোতল ব্যবহার করতে পারি।

আমাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিকে উৎসাহিত করতে হবে যেন মাটির সাথে মিশে যায় এমন প্রোডাক্ট তৈরি করে এ ক্ষেত্রে সরকারকে তাদের বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহারে আমাদের সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদের এই প্লাস্টিকের ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে।

আমরা ও মার্গারেট মিডের সাথে সুরে সুর মিলে বলতে পারি –

“আমরা যদি পরিবেশ ধ্বংস করি, তাহলে আমাদের কোন সমাজ থাকবে না”।

আমাদের প্লাস্টিক মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সময়ে বিশ্ববাসীর কাছে একটি বড় চলেঞ্জ  হলো প্লাস্টিক মুক্ত বিশ্ব গড়া।