বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক দূষণ একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা সহ প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য
প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখেছে। আমি আশা করি প্লাস্টিক দূষণ অনুচ্ছেদ
শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে।
প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে প্রয়োজন জনসচেতনতা গড়ে তোলা।
একমাত্র জনসচেতনতাই পারে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে। নিচে
প্লাস্টিক দূষণ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা হলো-
প্লাস্টিক দূষণ – অনুচ্ছেদ
প্লাস্টিক দূষণ বলতে বোঝায় পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আরোহন যা মানব
জীবন, বন্যপ্রাণী, বন্য প্রাণীর আবাসস্থলের ওপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে।
১৯৫০ সালে প্রাকৃতিক রাবার থেকে প্লাস্টিক তৈরি করেন নিউ বিকেল। বিজ্ঞানের অনন্য
আবিষ্কারের মধ্যে প্লাস্টিকের আবিষ্কারও ছিল অত্যন্ত কল্যাণকর এবং সমপ্রদ
আবিষ্কার। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের আবিষ্কার বিজ্ঞানের
আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই পৃথিবীতে কোন বিরুপ প্রভাব দেখা দিলে প্রথমে তা এসে
পরিবেশের উপর পড়ে। আর প্লাস্টিক হলো এমন একটি অপচনশীল রাসায়নিক দ্রব্য যা কখনোই
পরিবেশের সঙ্গে মিশে না। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিক
উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৩0 কোটি টন। আর এই প্লাস্টিক আবর্জনায় পরিণত হয়েছে
প্রায় ৪৯০ কোটি টন। আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই যেমন –
টুথ ব্রাশ থেকে শুরু করে মোবাইল, পড়ার টেবিল এমনকি খাবার প্লেট সহ সবকিছুই তৈরি
করি প্লাস্টিকের সাহায্যে। আর এতে করে মনে হয় আমরা যেন দিন দিন প্লাস্টিকের কাছে
বন্দী হয়ে যাচ্ছি। প্লাস্টিকের দূষণ কে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –
মাইক্রো, মেসো এবং ম্যাক্রো বর্জ্য। মানুষ প্রতিদিন গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে
প্রায় সকল ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করে। যেমন পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক
প্লাস্টিক। আর এসব প্লাস্টিকের বেশির ভাগই পুনঃ ব্যবহার হয় না।
২০১৯ সালে প্লাস্টিকের বর্জ্য পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড যোগ হয়েছে
৮.৫ কোটি টন। আর প্লাস্টিক দূষণের ফলে মানব দেহে ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ
সৃষ্টি করে। প্লাস্টিকের রয়েছে ক্লোরিন এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা
ভূপৃষ্ঠের পানির সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পনির সাথে মিশে যায় এবং পরবর্তীতে তা
খাদ্যচক্রের সাথে মিশে বিভিন্ন জীবদেহে প্রবেশ করে। আর প্লাস্টিক মাটির সাথে মিশে
যেতে সময় লাগে প্রায় ৪০০ বছর।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিকের
বর্জ্য ছিল ৬৩0 কোটি টন। আর এই বর্জ্য পদার্থের প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ এখনো
পৃথিবীতে রয়ে গেছে আর এভাবে যদি প্লাস্টিকের বর্জ্য অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৫০
সালের মধ্যে বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় বারো ১২ হাজার টন। মানুষ
প্লাস্টিকের ব্যবহার এত পরিমান বাড়িয়েছে যে এক মিনিটে ১০ লক্ষ প্লাস্টিক বোতল
ক্রয় করা হয় তরল পদার্থের সাথে।
আর প্রায় ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে নদী-নালাতে ফেলা হয়। প্রতিবছর মোট
পঞ্চাশ ৫০ হাজার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয় আর এই প্লাস্টিক উৎপাদনে দরকার
হয় প্রতি বছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল। আর ১ কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে দুই
থেকে তিন কেজি পরিমাণ বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। আর এই কার্বন
ডাই-অক্সাইড বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
২০১০ সালে শীটল নামক সমুদ্র সৈকতে একটি মৃত তিমী মাছ পাওয়া গিয়েছিল যার পেটে
ছিল শুধু প্লাস্টিক।আর মৃত তিমির পেট থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল টন টন প্লাস্টিক।
এছাড়াও প্লাস্টিকে আটকা পড়ে দম বন্ধ হয়ে অনেক প্রাণী প্রতি বছর মারা যায়।
সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিকের কারণে প্রায় ৮ হাজার প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ আইন পাস করা হয়েছে। পলিথিন
ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে আর একমাত্র জনসচেতনতাই
পারে পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে।
শেষ কথা
২০১০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা
করেছে। বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্লাস্টিকের ব্যবহারে জনসাধারণকে
অনুৎসাহিত করা। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে উৎপাদনকারী ভোক্তা, উৎপাদনকারী
একটিভিটিস, গণমাধ্যম কর্মীসহ যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্লাস্টিকের কোন পণ্য
ব্যবহারের পরিবর্তে কাঁচের বা পাটের তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে হবে। আমাদের
প্লাস্টিক মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাসীর কাছে একটি বড়
চ্যালেঞ্জ হলো প্লাস্টিক মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা।
Leave a comment