প্রশ্নঃ প্রাধিকারবাদ কী?

অথবা, জ্ঞানের উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদ হিসাবে প্রাধিকারবাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষ অজানাকে জানতে চায়। তাই এ আগ্রহ চিরন্তন। মানুষের জানার প্রতি এই তীব্র আগ্রহ থেকেই সূচনা ঘটে দর্শনের। একই সাথে উদ্ভব হয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার জ্ঞানবিদ্যা এসব শাখার মধ্যে অন্যতম। জ্ঞানবিদ্যায় যেসব মতবাদ গুরুত্বের সাথে আলােচনা করা হয় তার মধ্যে প্রাধিকারবাদ অন্যতম। এ মতবাদ অনুসারে প্রাধিকার বা কর্তৃপক্ষীয় সূত্রই জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায়।

প্রাধিকারবাদঃ জ্ঞানের উৎপত্তি-সংক্রান্ত যে মতবাদ অনুসারে প্রাধিকার বা আপ্তবাক্য হলাে জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তাকে প্রাধিকারবাদ বলে। এ মতবাদ অনুসারে প্রাধিকার বা আপ্তবাক্যই হলাে জ্ঞান লাভের প্রধান ও একমাত্র উৎস। দর্শনের ইতিহাস তথা মধ্যযুগীয় দর্শনে প্রাধিকারবাদ বলে পরিচিত এ মতবাদ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সাধারণ মানুষ ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রাধিকারের ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ যেমন কুরআন, বাইবেল, গীতা, ত্রিপিটক থেকে ধর্মীয়, সামাজিক প্রভৃতি রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে এবং কখনাে কখনাে মানুষের নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে প্রাধিকারের উদ্ভব হয়। প্রাধিকারবাদীদের মতে, জ্ঞানের যথার্থতা নিরূপণের ক্ষেত্রে প্রাধিকারের প্রয়ােজন রয়েছে । কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রাধিকারের জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। কেবলমাত্র ঈশ্বরের ঐশ্বর্যে মহীয়ান, অসাধারণ মনােবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিই এ ধরনের জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে। এ সম্পর্কে আব্দুল মতিন তার “An outline of philosophy” নামক গ্রন্থে বলেন, এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা অসাধারণ মনােবৃত্তিসম্পন্ন বা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র, তারাই কেবল এ ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। বাকিদের কাজ হচ্ছে সহজ, আর তা হচ্ছে অনুসরণ ও মূল্যায়ন।

জ্ঞান লাভঃ প্রাধিকারবাদ অনুসারে আপ্তবাক্যই একমাত্র জ্ঞানের উৎস। কিন্তু এ জ্ঞান অর্জিত হয় অসাধারণ মনােবৃত্তি ও ঈশ্বরের কৃপার মাধ্যমে। এ সম্পর্কে আব্দুল মতিন তার An outline of philosophy গ্রন্থে বলেন, জ্ঞানের উৎস হলাে প্রাধিকার রাষ্ট্র, গির্জা, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ যেমন, কুরআন, বাইবেল, অথবা কোনাে নৈতিক ব্যক্তিত্ব এই প্রাধিকারের উৎস।

প্রাধিকারের পদ্ধতিঃ প্রাধিকারবাদীরা তাদের মতবাদে প্রাধিকারের যথার্থতা প্রমাণ বা পরীক্ষার জন্য কয়েকটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। পদ্ধতিগুলাে হলাে (১) সংখ্যা (২) কালিক স্থিতি বা যুগ এবং (৩) খ্যাতি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাধিকারবাদীরা জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জ্ঞানের উৎপত্তি-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হওয়া সত্ত্বেও প্রাধিকারবাদের কিছু ত্রুটি রয়েছে। তাছাড়া এমতবাদ জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে কোনাে গ্রহণযােগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেনি। ধর্মীয় অনুভূতি, বিশ্বাস, আপ্তবাক্য, সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রিয় নীতি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এ মতবাদ গড়ে উঠেছে এবং অনেকটা বিনা বিচারে সেগুলাে গ্রহণ করা হয়েছে। তাই এ মতবাদ সমালােচিত হয়েছে।