১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান প্রচলন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। ৪৫ নং ধারায় ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুকে এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার সর্বজনীকরণের প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গুলো হল— (১) বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি, (২) সাক্ষরতা কর্মসূচি, (৩) সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি। এ ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হল নারীশিক্ষা ইত্যাদি।

বয়স্কশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়— (১) ব্যক্তিগত উন্নতি এবং (২) সামাজিক উন্নতি।

(১) ব্যক্তিগত উন্নতি:

  • বয়স্ক নিরক্ষরদের স্বাক্ষর করে তোলা।
  • শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
  • মানসিক উন্নতির বিকাশ সাধন করা।
  • পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
  • ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
  • নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে।
  • সামাজিক উন্নতিতে সহায়তা করা। 
  • সাংস্কৃতিক ও বিনোদন মূলক কার্যাবলী তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে অবসর জীবনযাপনে সাহায্য করা।

(২) সামাজিক উন্নতি :

  • বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ গতিশীল হয়।
  • বয়স্কদের স্বাক্ষর করে তোলা হলে তারা সমাজের বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
  • বয়স্কশিক্ষার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বােধ জাগ্রত হবে যার দ্বারা সমাজ তথা জাতির কল্যাণ সাধন সম্ভবপর হয়।
  • সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচীগুলো কার্যকর করার জন্য গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি করা হয়। বয়স্করা স্বাক্ষর হলে এই সকল 
  • কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
  • জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে সার্থক করে তুলতে পারবে।

(৩) রাজনৈতিক কারণ: গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষে স্বাধীনতার বছর পরেও নিরক্ষরতার হার আশানুরূপ ভাবে কমেছে। ভারত শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ নয় সমাজতান্ত্রিক দেশও বটে। তাই সমাজতান্ত্রিক কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, অজ্ঞতা দূর করতে বয়স্ক শিক্ষা প্রয়োজন।

সর্বোপরি উপরিউক্ত কারণগুলি ছাড়াও শিক্ষাগত তাৎপর্যও অনেক। যত বেশি সংখ্যায় বয়স্ক সাক্ষরতা বাড়বে পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষা সম্পর্কে কোনাে চিন্তা থাকবে না।

(৪) পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি: বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতে সঠিক পেশায় যুক্ত হতে পারে তার জন্য পেশাগত শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বয়স্ক শিক্ষা প্রয়োজন।

(৫) অর্থনৈতিক উন্নয়ন: দেশের দৃঢ় অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করার জন্য জনশিক্ষার প্রয়োজন। বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায় তার ফলে কার্যকরী সাক্ষরতা তৈরি হয় এবং ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের উন্নতি ঘটে।

(৬) গণতন্ত্র সচেতন নাগরিক সৃষ্টি: বয়স্কশিক্ষার মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণির বয়স্ক মানুষদের সাক্ষর করা সহজ করে তােলা যায়। ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয় সংহতিবাদ বিকাশ ঘটানো যায়। কিভাবে নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়।

সার্বিকভাবে নিরক্ষরতা দূর করে বয়স্কদের সুখী ও আনন্দময় জীবন উপহার দেওয়ার জন্য বয়স্ক শিক্ষা একান্তভাবে প্রয়োজনীয়।