অথবা, প্রাণের লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকাঃ সচরাচর আমরা যেসব বস্তু প্রত্যক্ষ করি তাদের তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলাে হলাে- ১. নির্জীব বা প্রাণহীন যারা জড়, ২. সজীব বা যাদের প্রাণ আছে এবং ৩. জীবের মধ্যে যাদের চেতনা আছে অর্থাৎ যারা চেতনশীল প্রাণী অর্থাৎ মানুষ। প্রাণ বলতে আমরা এমন এক জীবনীশক্তিকে বুঝি, যার ফলে জীবের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিকাশ সাধন, ঐক্য স্থাপন, দেহের ক্ষয়পূরণ, পারিপার্শ্বিকের সাথে দেহের সামঞ্জস্য বিধান, দেহ থেকে দেহের উৎপাদন অর্থাৎ বংশবৃদ্ধিকরণ প্রভৃতি কাজ সাধিত হয়।
প্রাণের বিভিন্ন লক্ষণসমূহঃ প্রাণকে আমরা দেখতে পারি না এবং এর অবস্থানও আমরা নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু প্রাণ বা জীবনের স্বরূপ আমরা উপলব্ধি করতে পারি। প্রাণ বা জীবনের প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে কতগুলাে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ বৈশিষ্ট্যগুলাে আমরা নিচে আলােচনা করব।
প্রাণ জড়ের মধ্যেঃ প্রাণ বা জীবন দেহ বা জড়কে আশ্রয় করে নিজের বিকাশ সাধন করে অর্থাৎ দেহের মাধ্যমেই জীবনের প্রকাশ সাধন হয়ে থাকে।
প্রাণের বিস্তারঃ দেহের মধ্যে এমন এক শক্তি উৎপন্ন করে যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে পরিবর্তন ও ক্রমবিকাশ সাধন এবং একটা সামঞ্জস্য বিধান করে।
প্রাণের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাঃ প্রাণ জৈবিক প্রক্রিয়াসমূহকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, জীবদেহের কল্যাণ সাধন করে এবং পারিপার্শ্বিকের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করতে সাহায্য করে।
জীবনধারণঃ প্রাণ জীবনধারণের জন্য খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। খাদ্য ছাড়া প্রাণ বাঁচতে পারে না। সে পরিবেশ হতে খাদ্য আহরণ করে জীবন ধারণ করে থাকে।
বংশবৃদ্ধির ক্ষমতাঃ প্রাণ বা জীবের আত্ম-পুনরুৎপাদন বা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রধানত প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমেই স্ব-জাতীয় জীব সৃষ্টি বা বংশ রক্ষা করা হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাণ বা জীবন হলাে এক প্রকার সংগঠন শক্তি, যা দেহের সমস্ত ক্রিয়া-কর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, জীবদেহ কেবল জড় পদার্থ নয় বরং জড়কে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও তার আছে। এই শক্তিই প্রাণশক্তি, যা জড়ের গতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং অজীবজনি মতবাদ ও জীবজনি মতবাদের মধ্যে জাবজান মতবাদই সঠিক ও যুক্তিযুক্ত মতবাদ বলে মনে হয়।
Leave a comment