প্রাচীন বিশ্বে যেসব বৃহৎ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল, সেগুলির মধ্যে ইউরোপের রোেমান সাম্রাজ্য এবং ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্য বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। নীচে রােমান ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোেচনা করা হল一
রােমান সাম্রাজ্য
-
আনুমানিক ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রােম নগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। এই নগরীকে কেন্দ্র করে প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হিসেবে রােমান সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী প্রায় ৫০০ বছরের মধ্যে রােম একটি বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।
-
রােমান সাম্রাজ্যে শিল্পকলার যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। এযুগের উল্লেখযােগ্য স্থাপত্যকীর্তিগুলি হল প্যান্থিয়ন, অ্যাফিথিয়েটার বা কলােসিয়াম প্রভৃতি। ভাস্কর্য ও চিত্রকলার ক্ষেত্রেও এই সময়ে উৎকর্ষ দেখা গিয়েছিল।
-
রােমান যুগে লাতিন ভাষায় সাহিত্যের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছিল। এযুগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যের নিদর্শন হল ভার্জিলের ‘ইনিড’, লিভির রােমান ইতিহাস’, এপুলিয়াসের ‘সােনার গাধা’ প্রভৃতি।
-
প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যে প্রথমদিকে বহুত্ববাদী ধর্মের প্রচলন ছিল। এর স্থলে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে জিশুখ্রিস্ট প্রবর্তিত খ্রিস্টধর্ম রােমান সাম্রাজ্যের বৈধধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং বহুত্ববাদী ধর্মের অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে একেশ্বরবাদী খ্রিস্টধর্ম প্রসার লাভ করে।
-
পৃথিবীর ইতিহাসে রােমান সাম্রাজ্য ছিল সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য যা ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস, প্যালেস্টাইন, উত্তর আফ্রিকা, গ্রেট ব্রিটেন প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রসারিত ছিল।
-
রােমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্য। ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্য অস্তিত্বশীল ছিল। অবশ্য পূর্ব রােমান সাম্রাজ্য আরও অন্তত ১০০০ বছর টিকেছিল।
-
বহিরাগত জার্মান বর্বর জাতির আক্রমণে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এরপর ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিদের আক্রমণে কনস্টান্টিনােপলের পতন ঘটলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যও অবলুপ্ত হয়।
গুপ্ত সাম্রাজ্য
-
বাংলা ও বিহারের কিছু অংশ নিয়ে সম্ভবত ২৭৫ খ্রিস্টাব্দে শ্রীগুপ্ত গুপ্তবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলে (৩২০ – ৩৩৫ খ্রি.) স্বাধীন গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে বলে মনে করা হয়।
-
গুপ্ত যুগের বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু মন্দিরগুলি স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন। মলিনাগের মন্দির, কোটেশ্বর মন্দির, দশাবতার মন্দির অজন্তা ও ইলোরার গুহাচিত্র এযুগের শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
-
বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস”, শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক’, ভারবির কিরাতার্জুনীয়ম”, দণ্ডীর ‘দশকুমারচরিত’, বিষ্ণুশর্মার পঞ্চতন্ত্র”, কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’, ‘মেঘদূতম্ প্রভৃতি গুপ্তযুগে রচিত উল্লেখযােগ্য সাহিত্য।
-
গুপ্ত সম্রাটদের পৃষ্ঠপােষকতায় এযুগে বৌদ্ধধর্মের পরিবর্তে প্রাচীন হিন্দুধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এজন্য গুপ্তযুগকে ‘হিন্দুধর্মের পুনরুখানের যুগ বলে অভিহিত করা হয়।
-
রােমান সাম্রাজ্যের তুলনায় ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল খুবই কম। গুপ্ত সম্রাটগণ ভারতের সর্বত্র প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।
-
গুপ্ত সাম্রাজ্য ২৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আনুমানিক ৫০০ (মতান্তরে ৫৫০) খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। অর্থাৎ গুপ্ত সাম্রাজ্য মাত্র ২০০ বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল।
-
সম্রাট স্কন্দগুপ্তের (৪৫৫ – ৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ) পরবর্তী- কালের গুপ্ত সম্রাটগণ ছিলেন দুর্বল ও অযােগ্য। তাঁদের আমলে গুপ্ত সাম্রাজ্যে ক্রমে পতনের দিকে এগিয়ে যায়। জীবিতগুপ্তের মৃত্যুর (৫০০ খ্রিস্টাব্দ) পর এই সাম্রাজ্য দুত অবলুপ্ত হয়।
Leave a comment