প্রশ্নঃ প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?

অথবা, প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী? সংক্ষেপে লিখ।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রতত্ত্ব ও রাষ্ট্রচিন্তার সমাহার। রাষ্ট্রচিন্তা হলাে কোনাে কালের বা যুগের রাজনৈতিক ধারণার সমষ্টি। এ প্রসঙ্গে Henry B. Mero বলেন, রাজনৈতিক চিন্তাধারা কোনাে বিশেষ সময়ে জনসমাজের ভাবধারা ও বিশ্বাসসমূহের ইঙ্গিত বা কোনাে ব্যবস্থা ধারণ করে বেঁচে থাকে। প্রত্যেক ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কতিপয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্যঃ রাজনৈতিক চিন্তাধারা কতিপয় বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গঠিত। প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ-

(১) সৃজনশীলতাঃ সৃজনশীলতা প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন যুগ তথা গ্রিক চিন্তাধারার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে এযুগ সৃজনশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিল। চুক্তির মানদন্ডে গ্রিক চিন্তাবিদগণ সবকিছু বিশ্লেষণ করতেন।

(২) নৈতিকতাঃ নৈতিকতা প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ যুগের চিন্তাবিগণের লেখায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, গ্রিক নগররাষ্ট্রের নৈতিক পরিসমাপ্তিই তাদের লক্ষ্য ছিল। ফলে রাষ্ট্র একটি নৈতিক পরিসমাপ্তি হিসেবে চিহ্নিত হত।

(৩) মানব প্রকৃতিঃ মানব প্রকৃতি ছিল তৎকালীন গ্রিক রাষ্ট্রাচিন্তার অন্যতম দিক। ঐ যুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিশ্লেষণের সাথে মানব প্রকৃতিকেও বিশ্লেষণ করার প্রয়াসী ছিলেন। মানব প্রকৃতিতে তাদের চিন্তাধারায় বিশেষ স্থান করে নেয়।

(৪) নাগরিকতাঃ নাগরিকতা ছিল গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তৎকালীন রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণের নাগরিকতার সংজ্ঞায় স্পষ্ট যে, তারাই হলাে নাগরিক যারা রাষ্ট্রের কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। যিনি রাষ্ট্রের কাজে অংশগ্রহণ করতেন না তিনি নাগরিক ছিলেন না।

(৫) স্বৈরাচারের বিরােধিতাঃ স্বৈরাচারের বিরােধিতা প্রাচীন নগর রাষ্ট্রের অন্যতম পরিচয়। এ কারণে তৎকালীন রাষ্ট্রে স্বৈরাচারি ও গণতান্ত্রিক মতবাদের মধ্যে সংঘর্ষ বিদ্যমান ছিল। অবশ্য ঐ যুগের চিন্তাবিদগণ এই সংঘর্ষ নিবারণের উপায় নির্দেশ করেছেন।

পরিশেষঃ উল্লিখিত দিকসমূহ হলাে প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে প্রাচীন নগর রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ব্যবস্থার শুভারম্ভ ঘটে। তাই প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে জানার পূর্বে এই বৈশিষ্ট সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।