মিশরের ইতিহাসে যে ক্লিওপেট্রার নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, তিনিই হলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বাদশ টলেমির কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমতী এবং উচ্চশিক্ষিতা নারী।
[1] সিংহাসনলাভ: সুন্দরী অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথমদিকে তাঁর পিতার সহশাসক হিসেবে মিশর শাসন করলেও পিতার মৃত্যুর পর তার চেয়ে বয়সে আট বছরের ছােটো ভাই ত্রয়ােদশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর কারণ হল, মিশরের প্রচলিত রীতি ছিল কোনাে সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে দেশশাসন করতে হবে।
[2] জুলিয়াস সিজারের বন্ধুত্ব লাভ: রােমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ৪৭ খ্রিস্টাব্দে মিশর অভিযান করলে ক্লিওপেট্রা পরাজিত হন এবং ক্লিওপেট্রাকে রােমে আনা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রা ও রােমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জুলিয়াস সিজার ক্লিওপেট্রাকে পুনরায় মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন।
[3] মিশরে প্রত্যাবর্তন: সিজার ব্রুটাস নামে এক আততায়ীর হাতে নিহত (৪৪ খ্রি. পূ.) হলে ক্লিওপেট্রা মিশরে ফিরে আসেন এবং তার অপর ছােটো ভাই চতুর্দশ টলেমিকে নামমাত্র বিবাহ করে মিশর শাসন করতে থাকেন। এক বছরের মধ্যেই চতুর্দশ টলেমিকে হত্যা করে ক্লিওপেট্রা জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত সন্তান পঞ্চদশ টলেমির (সিজারিয়ন) সঙ্গে মিলিতভাবে মিশর শাসন করতে থাকেন।
[4] অ্যান্টনির সাথে বিবাহ: জুলিয়াস সিজার নিহত হওয়ার তিন বছর পর রােমান সেনাপতি ও মৃত জুলিয়াস সিজারের বন্ধু মার্ক অ্যান্টনি মিশর অভিযানে আসেন। অ্যান্টনি মিশরের সিংহাসন লাভের উদ্দেশ্যে ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ (৩৬ খ্রি. পূ.) করেন। ক্লিওপেট্রা মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করেন।
[5] অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়: ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনির মিলিত বাহিনী শীঘ্রই অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে রােমান শাসক অক্টাভিয়াস সিজারের মুখােমুখি হয়। ক্লিওপেট্রা অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে সৈন্যদল নিয়ে পিছিয়ে এলেও অ্যান্টনিও সেনাদলকে ফেলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেন। ফলে রােমান শাসক অক্টাভিয়াসের বাহিনী যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে জয়লাভ করে (৩১ খ্রি.পূ.)। এর ফলে মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হয় এবং মিশর রােমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।
উপসংহার: এরপর অক্টাভিয়াস সিজার রানি ক্লিওপেট্রার দুই সন্তানকে হত্যা করেন এবং ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করতে চান। কিন্তু ক্লিওপেট্রা এই বিবাহে অসম্মত হন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১২ আগস্ট অ্যাসপ (কেউটে জাতীয়) নামে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।
Leave a comment