প্রাচীন মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত一
[1] যুদ্ধে বন্দি হওয়া: মিশরের ফারাওরা বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য ও সাধারণ নাগরিককে বন্দি করত। বন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। বন্দিদের স্রী এবং সন্তানরাও ক্রীতদাসে পরিণত হত।
[2] ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা: কখনাে কখনাে ঋণের দায়ে বাধা পড়া ব্যক্তিটিকে ঋণদাতা ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারত।
[3] দারিদ্রের তাড়না: কেউ কেউ অত্যন্ত দারিদ্রের তাড়নায় নিজেদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। কখনাে কখনাে দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদেরও ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত।
[4] স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ: কোনাে কোনাে নারী ক্রীতদাসী হিসেবে দেবমন্দিরে নিজেদের উৎসর্গ করত।
[5] অপহরণের মাধ্যমে: কখনাে কখনাে কোনাে পুরুষ বা মহিলাকে এবং মিশর ভ্রমণে আসা বিদেশিদের অপহরণ করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হত।
[6] জন্মসূত্রে: কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততি জন্মসূত্রে তাদের প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত।
[7] আইন ভঙ্গ দ্বারা: মিশরের রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গকারীকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি হিসেবে ক্রীতদাসে পরিণত করা হত।
প্রাচীন মিশরে দাস ব্যাবসা ততটা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। ফ্যারাওদের যুগে মিশরে সম্ভবত কোনাে ক্রীতদাস বাজারের অস্তিত্ব ছিল না। তবে মিশরে নয়া রাজ্যের যুগ থেকে ক্রীতদাস ব্যাবসার গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
[1] ক্রীতদাসের বাজারদর: মিশরে ক্রীতদাসের মূল্য ধনী পরিবারগুলির আয়ত্তের মধ্যেই থাকত। পুরুষ ক্রীতদাসদের চেয়ে মহিলা ক্রীতদাসীদের মূল্য বেশি হত।
[2] আন্তর্জাতিক ক্রীতদাস বাজার: মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা আন্তর্জাতিক চরিত্র লাভ করেছিল। বিশেষ গুণাগুণবিশিষ্ট ক্রীতদাসদের মিশর থেকে বিদেশেও চালান করা হত। বিদেশের বাজারে মিশরের ক্রীতদাসদের যথেষ্ট চাহিদা ও বাজারদর ছিল।
[3] ক্রীতদাসের চাহিদা: যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ—উভয়ই বন্দি হত। তবে মিশরীয়রা শত্রুপক্ষের সাধারণ বন্দিদের চেয়ে সবল বন্দি সৈনিকদেরই বেশি পছন্দ করত। কারণ, তারা অন্য ক্রীতদাসদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারত।
[4] ক্রীতদাস ব্যবসায় লাভ: মিশরের ক্রীতদাস কেনাবেচা খুবই লাভজনক হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ীরা অনেকেই এই ব্যাবসার দিকে ঝুঁকেছিল।
উপসংহার: মিশরের ব্লীতদাসরা সেদেশের ধনী প্রভুদের যাবতীয় কাজকর্ম করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত। এর ফলে মিশরে ক্রীতদাসদের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সেই চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সেদেশে দাস ব্যাবসার প্রচলন হয়।
Leave a comment