অথবা, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অধিবাসীদের রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দাও।
ভূমিকাঃ মিশরীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় এই সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। মানব জাতির ক্রমবিবর্তন, উন্নতি ও উৎকর্ষতার এতাে বড় অবদান মিশরীয় সভ্যতার মতাে আর কোনাে সভ্যতা রাখতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার পথিকৃত হিসেবে মিশরীয় সভ্যতা এক অনন্য সাধারণ গুরুত্বের দাবিদার।
(১) রাজনৈতিক অবস্থাঃ খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়। প্রাক রাজবংশীয় যুগে মিশরে কতগুলাে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন নগর রাষ্ট্র ছিল। তবে এ রাষ্ট্রগুলি সংঘবদ্ধ ছিল না। এ সময়ে মেনেস নামে এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি জাতি ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
(২) মধ্য রাজত্বের যুগঃ প্রাচীন রাজত্বের যুগ অপেক্ষা মধ্যরাজত্বের শাসন দুর্বল হলেও ফেরাউনদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই যুগে প্রভাবশালী ফেরাউনদের কর্তৃত্ব খর্ব হতে থাকে এবং সামন্ত রাজা ও অভিজাত শ্রেণির প্রতাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একাদশ রাজবংশের আবির্ভাবের ফলে ফেরাউনদের রাজত্ব প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে এক নবদিগন্তের সূচনা করে। দ্বাদশ রাজবংশের সময়ে জনসাধারণ রাজকার্যে অংশগ্রহণের সুযােগ পায় জনগণ ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হয়।
(৩) সাম্রাজ্যবাদী রাজত্বঃ খ্রিস্টপূর্ব ১৫৮০ থেকে ১০৯০ সাল পর্যন্ত মিশরীয় ইতিহাসে একটি গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ সময়ে অষ্টাদশ, উনবিংশ ওবিংশতি রাজবংশ রাজত করেন। এযুগের বৈদেশিক নীতি ছিল আগ্রাসন ও বৈদেশিক অভিযান। হিকসসদের সঙ্গে যুদ্ধে মিশরীয়গণ যে বীরত্ব ও শৌর্য প্রদর্শন করে তার প্রতিফলন দেখা যায় এক বিরাট সৈন্যবাহিনী গঠন ও যুদ্ধাভিযানে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতা মানব সভ্যতার পথিকৃত ও প্রাচীন সভ্যতার শীর্ষে। মিশরীয় সভ্যতা বিশেষত রাষ্ট্র ও সমাজ, ধর্ম এবং সংস্কৃতি অনুকরণ করেনি এমন সমাজ ও সভ্যতার কথা কমই জানা যায়। এ সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল বিশ্বব্যাপী। ইউরােপ তথা সমগ্র বিশ্ব যখন বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখনই আলাের দিশারী হিসেবে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।
Leave a comment