বিক্রমশিলা মহাবিহার ছিল প্রাচীন ভারতের উচ্চশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ম্লান হয়ে আসার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্ভব ঘটে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে দেওয়া হল一

(১) অবস্থান: বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমান বিহারের ভাগলপুর জেলার কাছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল।

(২) প্রতিষ্ঠা: আনুমানিক নবম শতাব্দীতে পালযুগে সম্রাট ধর্মপাল তাঁর নিজের নাম বিক্রমশিল অনুসারে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। বিহারের কেন্দ্রস্থলে ছিল মহাবােধির মূর্তি।

(৩) পরিকাঠামাে: এই বিশ্ববিদ্যালয়টি মােট ১০৮টি ছােটোবড়াে মঠ নিয়ে গড়ে উঠেছিল। সেখানে ১০৮ জন মঠাধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়াও আচার্য, উপাচার্য, উপাধ্যায়, কর্মপরিদর্শক প্রভৃতি কর্মকর্তারা ছিলেন। সেখানে ছয়টি মহাবিদ্যালয় ছিল বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি প্রধান দ্বারে থাকতেন ছয় জন দ্বারপন্ডিত। সবচেয়ে জ্ঞানী বা পণ্ডিত ব্যক্তি হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলপতি বা উপাচার্য।

(৪) শিক্ষাদান পদ্ধতি ও পাঠক্রম: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধশাস্ত্র, ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিত্রাঙ্কন, জাদুবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হত। শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মৌখিক।

(৫) মূল্যায়ন ও উপাধি: বিক্রমশিলা বিহারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার শেষে পরীক্ষা নেওয়া হত বলে অনুমান করা হয়। পরীক্ষার শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে উপাধিও প্রদান করা হত।

(৬) অধ্যাপকমণ্ডলী: বিক্রমশিলা মহাবিহারে বহু খ্যাতনামা অধ্যাপক পাঠদান করতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঅতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, অভয়কর গুপ্ত, জ্ঞানপদ, প্রভাকরমতি প্রমুখ।

(৭) ধবংস: বিক্রমশিলা মহাবিহারটিও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতাে মুসলিম সেনাবাহিনীর আক্রমণে ধবংস হয়।

প্রাচীন ভারতে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম ছিল বিক্রমশিলা। বিক্রমশিলার বিশেষ খ্যাতির কারণ ছিল তার উন্নত মান| এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত একাধিক পণ্ডিতের নাম আজও যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।