প্রাচীন ভারতের ক্রীতদাস বা দাসদের জীবন কখনােই রােমের ক্রীতদাসদের মতাে দুঃসহ ছিল না। ভারতের দাস ব্যবস্থায় অনেক কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতা থাকলেও তা রােমের ক্রীতদাসদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের সমতুল্য ছিল না।

[1] নাগরিক ও সামাজিক নৈকট্য: ভারতীয় সমাজে স্বাধীন নাগরিক ও দাসদের মধ্যে ভেদরেখা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। এ থেকে সমাজে দাসদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রারই আভাস পাওয়া যায়। ভারতীয় দাসরা এক হিসেবে গৃহভৃত্যের সমগােত্রীয় ছিল।

[2] মানবিক আচরণ: সমকালীন বিভিন্ন ধর্মীয় সাহিত্যে দাসদের প্রতি উদার ও মানবিক আচরণ করার কথা বলা হয়েছে। গৌতম বুদ্ধ, সম্রাট অশােক, মনু—সকলেই দাসদের রক্ষা ও তাদের প্রতি মানবিক আচরণের কথা বলেছেন। প্রভু তার অধীন অসুস্থ ও বৃদ্ধ দাসদের দেখাশােনার দায়িত্ব নেবেন বলে মনু বলেছেন।

[3] মুক্তি: ভারতীয় দাসদের মুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি ছিল—[i] ঋণদাতার ঋণের অর্থ পরিশােধ। [ii] প্রভুকে ক্ষতিপূরণের অর্থমূল্য প্রদান করে মুক্তি ক্রয়। [iii] নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও দাস কর্তৃক তা প্রভুর জীবন রক্ষা করা প্রভৃতি। [iv] তা ছাড়া যাজ্ঞবল্ক্য লিখেছেন, ‘বলপূর্বক কাউকে দাসে পরিণত করা হলে রাজার কর্তব্য হল সেই দাসের মুক্তির ব্যবস্থা করা।”

[4] বিশেষ অধিকার: কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে দাসদের তিনটি বিশেষ অধিকারের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- [i] প্রভুর কোনাে ক্ষতি না করে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয়ের অধিকার। [ii] উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ভােগ-দখলের অধিকার। [iii] প্রভুকে অর্থ দিয়ে মুক্তি পাওয়ার অধিকার।

প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিতে দাসপ্রথার বিশেষ কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল না। এর কারণ হল一

[1] ভৃত্য দাস সাদৃশ্য: প্রাচীন দাস ও ভৃত্যদের মধ্যে তেমন কোনাে ভেদরেখা বাইরে থেকে বােঝার উপায় ছিল না। প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশে একমাত্র দাসদের নয়, ভৃত্যদেরও বড়াে ভূমিকা ছিল।

[2] সংখ্যার স্বল্পতা: দাসদের সংখ্যা তৎকালীন ভারতীয় শ্রমিকদের সংখ্যার অনুপাতে খুবই কম ছিল। তাই তৎকালীন অর্থনৈতিক উৎপাদনে দাসদের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদেরই বেশি অবদান ছিল।

[3] হীন কাজে নিয়োগ: ভারতে দাসদের যে ধরনের হীন কাজে নিয়ােগ করা হত সেসব কাজে দাসদের সহযােগী হিসেবে বা আলাদাভাবে প্রচুর সংখ্যক ভাড়াটে স্বাধীন শ্রমিক ও নিম্নবর্ণের মানুষকেও নিযুক্ত করা হত।