আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ছিলেন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংগ্রাহক, সম্পাদক ও প্রকাশক। বিশ শতকের শুরু থেকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস এবং প্রাচীন গ্রন্থাদি যখন আবিষ্কৃত হতে থাকে, তখন বাংলা সাহিত্য নিয়ে নতুন গবেষণা শুরু হয়। প্রাচীন পুঁথি আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। তিনি এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রাচীন পুঁথি আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন। ফলে তার হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের অনেক অজানা পুঁথির সন্ধান মিলে। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এ সমস্ত পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার

সম্পাদনা ও প্রকাশে কৃতিত্ব দেখান। প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ তার সবচেয়ে বড়ো কীর্তি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল বিশেষ আগ্রহের বিষয়। তিনি সারা জীবন ধরে প্রাচীন বাংলা পাণ্ডুলিপির পুঁথি সংগ্রহ করেন। ১৯২০-১৯২১ সালে বঙ্গীয় পরিষদ তার সংগৃহীত বাংলা পুঁথির তালিকা, বাংলা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ শিরোনামে দু’খণ্ড প্রকাশ করেন। তার বেশিরভাগ পুঁথি মুসলমান কবিদের জন্য লেখা এবং সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপির একটি সুবিন্যস্ত তালিকা পুঁথি পরিচিতি নামে প্রকাশ করেছে।

আবদুল করিমের সংগৃহীত পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে জানা যায় যে, মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের বিকাশে মুসলিম কবিগণও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। যাদের নাম ও রচনা সম্পর্কে আগে কিছুই জানা যায়নি; এমন প্রায় একশজন মুসলমান কবিকে তিনি সাধারণ্যে পরিচিত করেন। দৌলত কাজী, সৈয়দ সুলতান প্রমুখ মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবিও তার মধ্যে ছিলেন। আবদুল করিমের সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতিস্বরূপ চট্টল ধর্মমণ্ডল তাকে সাহিত্য বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি বরাবরই প্রথম দেওয়া উপাধিটি পছন্দ করতেন এবং নিজ নামের সঙ্গে তা ব্যবহার করতেন। তাই সাহিত্য বিশারদ উপাধিতেই আবদুল করিম স্মরণীয় হয়ে আছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।