[1] প্রাচীন গ্রিসে: প্রাচীন গ্রিকরা বহু দেবদেবীতে বিশ্বাস করত। তারা প্রকৃতি, মাটির সঙ্গে বীরদেরও পূজা করত। প্রতিটি নগরেরও আলাদা দেবদেবী ছিলেন। গ্রিকরা ফুল, ফল, শস্য দিয়ে দেবদেবীর আরাধনা করত এবং এর জন্য মন্দিরও নির্মিত হয়েছিল। ধর্মীয় আরাধনার অঙ্গ হিসেবে ধর্মীয় শােভাযাত্রা, দেবদেবীর প্রতি প্রার্থনা, দ্রব্যের উৎসর্গীকরণ প্রভৃতি প্রচলিত ছিল।

  • দেবদেবীগণ: প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো করতেন। জিউস ছিলেন বৃষ্টি ও স্বর্গের দেবতা। অ্যাপােলাে ছিলেন সূর্যের দেবতা। জানথাস ছিলেন নদীর দেবতা আর সমুদ্রের দেবতা ছিলেন পসাইডন। গ্রিকবাসীদের কাছে অরণ্যের দেবতা ছিল সাউরােস। দেবীদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন—যুদ্ধর দেবী এথেনা, প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি, ঝরনার দেবী নিষ্ফি প্রমুখ। এ ছাড়াও অন্য কয়েকজন দেবী ছিলেন থেটিস, হেরা (জিউসের স্ত্রী) ও জিউসের কন্যা হেরমেস’ (Hermes) প্রমুখ।

[2] প্রাচীন রােমে: রােমান ধর্মও বহুদেবদেবীতে বিশ্বাসী ছিল। প্রাচীন রােমে ধর্মীয় আরাধনায় ব্যক্তিগত স্বার্থের পরিবর্তে সমষ্টিগত স্বার্থ প্রাধান্য পেত। প্রাচীন রােমানরা সম্প্রদায় ও পরিবার রক্ষার জন্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা জানাত।

  • দেবদেবীগণ: প্রাচীন গ্রিসের দেবদেবীরাই পরবর্তীকালে নাম পালটে রােমের দেবদেবীতে পরিণত হয়েছেন। রােমানদের আকাশের দেবতা জুপিটার (Jupiter) ছিলেন গ্রিক দেবতা জিউসের অনুরূপ। দেবী মিনার্ভা (Minerva) ছিলেন গ্রিকদেবী এথেনার (Athena) মতােই কারিগরি শিল্পের পৃষ্ঠপােষক। প্রেমের দেবী ভেনাস (Venus) গ্রিকদেবী আফ্রোদিতির (Aphrodite) সঙ্গে অভিন্ন ছিলেন। সাগরের দেবতা নেপচুনের (Neptune) সঙ্গে গ্রিক দেবতা পসাইডনের (Poseidon) তেমন পার্থক্য ছিল না। যুদ্ধের দেবতা ছিলেন মার্স। জুপিটারের স্ত্রী জুনাে ছিলেন স্ত্রীজাতির রক্ষাকারী।

[1] হেলেনিক দর্শনের আবির্ভাব: হেলেনিক দর্শনের আবির্ভাবে রােমান সাম্রাজ্যের নবজাগরণ ঘটে। নব্য দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তন্ত্রসাধনা গ্রিক ও রােমান প্রাচীন বহুত্ববাদী ধর্মের ওপর আঘাত হানে।

[2] পাশ্চাত্য সূর্য উপাসনা: রােমে সর্বপ্রথম সম্রাট ক্রোমােডাসের আমলে বহুত্ববাদী ধর্মের বিরোধিতা শুরু হয়। সেপ্টিমাস সেভারেসের রাজত্বকাল থেকে রােম সাম্রাজ্যে একমাত্র দেবতা হিসেবে সূর্যের উপাসনা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ফলে একেশ্বরবাদী ভাবনার জন্ম হয় ও বহুত্ববাদের‌ অবক্ষয় শুরু হয়।

[3] ইহুদি মতবাদের উত্থান: আর্থিক দিক থেকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় ইহুদিরা রােমান সাম্রাজ্যে বিশেষ সুবিধাভােগী শ্রেণিতে পরিণত হয়। ইহুদিদের অনুসৃত ধর্মে বহুত্ববাদের বিরােধিতা করা হয়।

[4] খ্রিস্টধর্মের উত্থান: খ্রিস্টধর্মের উত্থানের ফলে রােমান বহুদেবত্ববাদের ধারণা সম্পূর্ণরূপে নস্যাৎ হয়ে যায়। কারণ খ্রিস্টীয় চার্চগুলি পেগানদের সমস্ত দেবদেবীকেই ‘শয়তান’ বলে আখ্যা দেয়। ফলে যে সমস্ত দেবদেবীদের রােমানরা এতদিন পূজা করে আসছিল চার্চের একেশ্বরবাদী প্রচারে সেই বিশ্বাসে ক্রমে ভাটা পড়ে।

[5] সম্রটি কনস্টানটাইনের ভূমিকা: মিলডাইন ব্রিজের যুদ্ধ (৩০৭ খ্রি.)র পর রােমান সম্রাট কনস্টানটাইন মিলান ঘােষণার দ্বারা নিজে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই ধর্মকে জনপ্রিয় করার জন্য দেশে দেশে প্রচার চালান। তাঁর এই ভূমিকায় বহুত্ববাদের পতনের পথ প্রস্তুত হয়। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় কনস্টানটিয়াস আইনের প্রয়ােগ ঘটিয়ে পেগানদের শাস্তি দিতে শুরু করেন। তিনি পেগানধর্মকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলে ঘােষণা করেন। এভাবেই বহুত্ববাদের পতন ঘটে।