পেরি অ্যান্ডারসন এবং জর্জ টমসন ধ্রুপদি যুগের গ্রিসের সমাজকে ‘Slave Society’ বা ‘দাস সমাজ’ বলে অভিহিত করেছেন।
[1] প্রাচীন গ্রিসের ক্রীতদাসদের পরিচিতি: প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে ক্রীতদাসপ্রথার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের কিছু পার্থক্য থাকলেও এর মূল কাঠামােটি সব জায়গায় একই রকম ছিল। এই সময়ের ক্রীতদাসরা এথেন্সে থিটিস, স্পার্টায় হেলট, থেসালিতে পেনেসটাই, সিসিলিতে কাইলিরি, ক্রীটে ক্ল্যারােটাই এবং পন্টিকায় ম্যারিয়ানডিনি নামে পরিচিত ছিল।
[2] ক্রীতদাস হওয়ার কারণ: প্রাচীন গ্রিসে বিভিন্ন কারণে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত। যুদ্ধবন্দি, পরাজিত জলদস্যু, ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তি, অপহৃত বা অভাবের তাড়নায় পিতা কর্তৃক বিক্ৰীত শিশু বা ক্রীতদাস-সন্তানদের বাধ্য হয়ে ক্রীতদাসে পরিণত হতে হত।
গ্রিসের অন্যতম নগর-রাষ্ট্র স্পার্টায় বসবাসকারী বাসিন্দারা প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। সেগুলি হল一
[1] স্প্যারটিয়েট: স্প্যাটিয়েটারা ছিল স্পার্টার স্বাধীন নাগরিক। এই শ্রেণির সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ছিল সবচেয়ে উপরে ইতিহাসবিদ অ্যান্টনি অ্যানড্রজের মতে, রাষ্ট্রের জমির একটি বড়াে অংশ এবং ভালাে জমিল্লুলি ছিল এই শ্রেণির হাতে। স্পার্টায় নাগরিকের মােট সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৩২ হাজার। তারা নিজেদের যাবতীয় কাজে ক্রীতদাসদের নিয়ােগ করে নিজেরা সুখে- স্বাচ্ছন্দ্যে এবং বিলাসিতায় দিন কাটাত।
[2] পেরিওকয়: স্পার্টায় স্প্যাটিয়েট’ নামে স্বাধীন নাগরিক এবং ‘হেলট’ নামে ক্রীতদাসদের মধ্যবর্তী স্তরে যে শ্রেণিটি অবস্থান করত তারা ‘পেরিওকয়’ নামে পরিচিত ছিল। এই ‘পেরিওকয়’ শব্দটির অর্থ হল ‘নিকটবর্তী বাসিন্দা (Dwellers Around)। অর্থাৎ পেরিওকয়রা তাদের নগর রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা ও সমুদ্রের উপকূল অঞ্চলের অধিবাসী ছিল। স্পার্টায় পেরিওকয়দের মােট জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। পেরিওকয়রা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তাদের হাতেও মােট জমির পরিমাণ যথেষ্টই ছিল। পেরিওকয়দের অধিকাংশই ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে এবং কেউ কেউ সামরিক কাজে যুক্ত ছিল। তবে স্পার্টার রাজনীতি ও প্রশাসনে এদের কোনােরকম অধিকার ছিল না।
[3] হেলট: স্পার্টার সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামােয় সর্বনিম্ন স্তরে ছিল হেলটদের অবস্থান। স্পার্টায় হেলটদের মােট সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ২৪ হাজার মােট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। অ্যানড্রুজ মনে করেন যে, “হেলটরা ছিল ষোলো আনাই ক্রীতদাস। হেলটদের সন্তানসন্ততিরাও উত্তরাধিকারসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হত। এরাই স্পার্টার প্রায় সমগ্র জমি চাষাবাদ করত এবং স্পার্টার সেনাবাহিনীতে হালকা অস্ত্রবাহী সেনা হিসেবে যুদ্ধ করত হেলটরা৷ সুদক্ষ থলবাহিনীও হেলটদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল। তবে হেলটরা ছিল স্পার্টার সর্বাপেক্ষা শােষিত শ্রেণি। স্পার্টার নাগরিকরা সর্বদা অত্যাচারিত হেলটদের বিদ্রোহের ভয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকত।
উপসংহার: প্রতিটি গ্রিক নগর-রাষ্ট্রেই যে নিষ্ঠুর ক্রীতদাসপ্রথার ব্যাপকতা ছিল, স্পার্টার হেলটরা ছিল তারই মূর্ত প্রতীক। তারা ছিল স্পার্টার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক উপাদান। ঐতিহাসিক অ্যানড্রজের মতে, শুধু স্পাটার নয়, ক্রীতদাস ব্যবস্থা গােটা গ্রিক সভ্যতারই একটি মৌলিক উপাদান ছিল।
Leave a comment