কোঠারি কমিশন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষালয়ের উদ্দেশ্যে বলেছে, স্থানীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেশের যেখানে সম্ভব এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুপারিশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কিছু অনুদান ও সাহায্য দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। বর্তমানে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম তিনটি বিদ্যালয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল—
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা যে স্থানে থেকে পড়াশোনা করে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলি ক্সেশ নামে পরিচিত। ক্সেশকে আংশিক হােস্টেল বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ছােটো শিশু বা শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত, তারা ক্রেশগুলিতে সারাদিনব্যাপী সময় কাটান, পড়াশোনা করা, খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা প্রভৃতি সমস্ত কাজই করে থাকে এবং এ কাজে অন্যের সাহায্য করেন, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই ক্সেশ নামক স্কুলে শিশুদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, বৌদ্ধিক প্রভৃতি সার্বিক অংশের উন্নয়নের উপর নজর প্রদান করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্সেশ-এর অন্তর্ভুক্ত থাকে।
➤ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল নার্সারি বিদ্যালয়।
➤ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের দুই ভগ্নী মার্গারেট ম্যাকমিলান ও ব্যাচেল ম্যাকমিলান লন্ডনে নার্সারি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
➤ এই ধরনের শিক্ষালয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনগ্রসর, দরিদ্র যাদের আর্থ সামাজিক মর্যাদা কম সেই সমস্ত পরিবারের শিশুদের শিক্ষাদান করে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা।
➤ সাধারণত ২-৪ বছরের শিশুরা এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এমন শিশুরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে।
➤ নার্সারি বিদ্যালয়গুলিতে ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়, এই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হল— খেলাধুলা, সংগীত, নাচ, ছবি আঁকা, ছড়া বলা ইত্যাদি।
সবশেষে বলা যায়, এই বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের এমন সব কার্যাবলি অনুসরণ করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা সমাজের একজন উপযুক্ত নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
➤ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মাদাম মারিয়া মন্তেসরি তার প্রচেষ্টায় একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যে বিদ্যালয়কে বলা হয় মন্তেসরি বিদ্যালয়। তার প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিদ্যালয়টির নাম ছিল “Casa Dei Bambini (House for Children)-এর অর্থ হল শিশুনিকেতন।
➤ বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক পেস্তালৎসী, রুশ, ফ্রয়েবেল। প্রমুখের শিক্ষা চিন্তা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
➤ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হল শিশুদের ইন্দ্রিয়গুলোকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে শিশুরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ব্যাপক জ্ঞান আহরণ করতে পারে।
➤ এই বিদ্যালয়গুলিতে সক্রিয়তা ও ইন্দ্রিয় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিশুরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে। বিভিন্ন প্রকারের শিক্ষা উপকরণের মাধ্যমে শিশু দুটি বস্তুর আকার, ওজন, রং ও তাপমাত্রার পার্থক্য বুঝতে পারবে। শিশুদের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, সংগীত, উদ্যান রচনা, হাতের কাজ ইত্যাদির আয়োজন এই বিদ্যালয়ে রয়েছে।
➤ ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা হয়। এক্ষেত্রে সাহায্যকারী ইন্দ্রিয় অনুশীলনের উপকরণগুলিকে ডাইভ্যাকটিক অ্যাপারেটাস (Didactic Apparatus) বলে। এই উপকরণগুলোর অন্তর্ভুক্ত হলো— লাল রঙের ঘনক, পিরামিড, গোলক, শঙ্কু, সিলিন্ডার, বিভিন্ন ওজনের কাঠের টেবিল ও ছোট ছোট ঘন্টার ইত্যাদি। এগুলোর সাহায্যে ভাষা এবং গণিত ও শেখানো যায়।
সবশেষে বলা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষালয় গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদ্যালয় হল মন্তেসরি বিদ্যালয়। তাই বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিদ্যালয় বহুল প্রচলিত।
Leave a comment