আধুনিককালে, শিক্ষার প্রস্তুতি পর্ব বা প্রারম্ভিক শিক্ষাকে বলা হয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কোঠারি কমিশন এই শিক্ষার কিছু উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল— 

(১) সুস্থ অভ্যাস: প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করা। তাই শিশুর সু-অভ্যাস গঠনে এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(২) ভাষার বিকাশ সাধন : মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হল ভাষা। সঠিক পদ্ধতির শিক্ষা শিশুকে নির্ভুল উচ্চারণ, শব্দ ও ভাষার যথাযথ ব্যবহার করতে দেখলে তা তার ভাষার বিকাশ সাধন ঘটায়।

(৩) সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটানো : শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ ইত্যাদি উপভোগ করতে সাহায্য করবে।

(৪) প্রক্ষোভিক পরিণমনে সহায়তা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করা। তাই শৈশবে শিশুর প্রাক্ষোভিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(৫) আত্মপ্রকাশে সহায়তা : কোঠারি কমিশনের মতে, শিশুদের মধ্যে সুপ্ত সম্ভাবনা আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেওয়াই হল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কাজ।

(৬) আর্থ সামাজিক পরিবর্তন : আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়ির বয়স্করা শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব নিত। সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিশুরা এই শিক্ষা অর্জন করত। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ছোট ছোট পরিবার, বাবা-মা, একটি বা দুটি সন্তান। বাবা-মা উভয়েই বেশিরভাগ চাকুরিরত হওয়ায় শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব বিদ্যালয়ের উপর এসে পড়েছে। তাই শিশুকে নিয়ন্ত্রিতভাবে এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।

(৭) প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তৈরি করে দেওয়া : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হল প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী স্তর। তাই কমিশন মনে করে, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিশুকে প্রস্তুত করে দেওয়া এই স্তরের প্রধান উদ্দেশ্য। ২ বছর থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার পর ৬+ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হবে। তাই এই স্তরের শিক্ষার অনিয়ন্ত্রিত না রেখে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মধ্যে আনা উচিত।

(১) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিকরণ : কমিশনের মতে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৫-৬ বছরের মধ্যে ৫% ছেলেমেয়ে এবং ৫-৬ বছরের ছেলেমেয়েদের 15% কে এই শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।

(২) সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়ােজনে সরকারি সাহায্য ও তদারকির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(৩) প্রাক-প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান : প্রতিটি রাজ্যে, রাজ্য শিক্ষা সংস্থার (State Institute of Education) একটি করে  প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।

(৪) পরিচালনা কেন্দ্র : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রত্যেক জেলায় শিক্ষা পরিচালনা, পরিদর্শন ও প্রসারের জন্য একটি করে কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার।

(৫) ক্রীড়া কেন্দ্র : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য সরকার রাজ্য ও জেলাস্তরে ক্রীড়া কেন্দ্র স্থাপন করবে।

(৬) উপযুক্ত পুস্তিকা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কমিশন কোনাে নির্দিষ্ট সার্বজনীন শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়নি। ফলে এই স্তরে কোনাে নির্দিষ্ট পাঠক্রম নেই। তাই কমিশন উল্লেখ করেছে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা ও উপযুক্ত পুস্তিকা প্রস্তুত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৭) শিশুদের ইন্দ্রিয় বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মসূচি নমনীয় হবে। প্রধানত নাচ, গান ও হাতের কাজের মাধ্যমে দেহ সালমান ও স্নায়বিক সমন্বয় শিক্ষা দিতে হবে এবং এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম শিক্ষণ পদ্ধতির বিকাশ সাধন করতে হবে। এ ছাড়া এই সকল কাজের মাধ্যমে শিশুদের ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে কমিশন।

(৮) শিশুদের মানসিক বিকাশ : এই শিক্ষার অপর উদ্দেশ্য হল, শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করা, তাদের কৌতূহলের নিবৃত্তি ঘটনে, শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ রচনা করা, তাই এক্ষেত্রে গবেষণাভিত্তিক পরীক্ষণকে উৎসাহ দিতে হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।