উনিশ শতকের বাংলা নাট্যসাহিত্যের একটি বিশিষ্ট শাখা প্রহসন। বাংলা প্রহসন এদেশের লেখকদের নিজস্ব সৃষ্টি, এ জাতীয় রচনা পাশ্চাত্য সাহিত্যে দেখা যায় না। নানাবিধ সামাজিক সমস্যা এবং প্রাচীনপন্থি ও নব্য সমাজের মানুষদের চারিত্রিক অসঙ্গতিই প্রহসনের বিষয়। উনিশ শতকের গদ্যসাহিত্যে যে ব্যঙ্গাত্মক নকশা জাতীয় রচনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, মনে হয় নাটকের আঙ্গিকে সেই জাতীয় বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা থেকেই প্রহসনের জন্ম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত দু’খানা প্রহসন রচনা করেন। যথা:
ক. একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০)
খ. বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০)
মধুসূদনের প্রহসন দুটি সমকালীন সামাজিক দুর্নীতির বাস্তব আলেখ্য। তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের সাহায্যে তিনি সমাজ- জীবনের বিভিন্ন অনাচার ও অসঙ্গতির প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’য় ‘ইয়ং বেঙ্গল’ দলের সদস্যদের মদ্যপ্রীতি ও অন্যান্য ত্রুটির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনে তৎকালীন সমাজের ভণ্ড ব্যক্তিদের চরিত্রহীনতার প্রতি তীব্রভাবে কটাক্ষ করা হয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই প্রহসন দুটি পরবর্তীকালে রচিত বিভিন্ন প্রহসনের আদর্শ হিসেবে কাজ করেছে। প্রহসনের সংলাপ ও রচনারীতির যে বৈশিষ্ট্য, মধুসূদন তা অনায়াসে ধরতে পেরেছেন; ফলে তার প্রহসন দুটি সম্পূর্ণ নিখুঁত ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে প্রহসনের স্বতন্ত্রতা নির্দেশ করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment