প্রশ্নঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে কি বুঝেন? এ ধরনের প্রতিকার অন্যান্য প্রতিকার থেকে কিভাবে আলাদা? এ প্রতিকার কিভাবে দেয়া হয়? কোথায় এ প্রতিকার দেয়া যায় না? স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার ও স্বত্বের প্রশ্নে কি কি প্রতিকারের বিধান আছে? ধারা উল্লেখপূর্বক আলােচনা করুন।


সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (Specific Relief) 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে এমন প্রতিকার বােঝায় যা পূর্বে ইংল্যান্ডে ইকুইটি আদালত মামলা দায়েরকারী ব্যক্তিগণকে দিত। বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে ঐ সকল প্রতিকারকে বােঝায় যা কোন ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধান মােতাবেক সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়ার অধিকারী। দেওয়ানী মামলায় দেওয়ানী কার্যবিধির আওতায় যে সাধারণ প্রতিকার দেয়া হয় তা হল ক্ষতিপূরণের অধিকার। কিন্তু সাধারণ অধিকার হিসেবে ক্ষতিপূরণের অধিকার অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারে। এ কারণেই সাধারণ প্রতিকারের বিপরীতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট  প্রতিকারের উদ্ভব হয়েছে।


সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের ধরণ ও প্রকারভেদঃ

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দু’ধরনের হতে পারে। 

প্রতিকার সম্বন্ধীয় (remedial)– কোন সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার (recovery of possession), চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন (specific performance of contract), পার্থক্যকরণ (variation), সংশােধন (rectification), রদ (rescission), নাকচ (cancellation), ঘােষণামূলক ডিক্রী ও রিসিভার নিয়ােগ, ইত্যাদি। 


রক্ষামূলক (preventive)- রক্ষামূলক বা বারণমূলক প্রতিকারের মধ্যে আছে নিষেধাজ্ঞা (injunction)।

 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার কিভাবে প্রদান করা হয়

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী এ প্রতিকার নিম্নলিখিত ০৫ (পাঁচ) প্রদান করা হয়।

(১) কতিপয় সম্পত্তির দখল গ্রহণ এবং উহার দাবিদারকে দখল অর্পণের মাধ্যমে। (২) কোন বিশেষ কার্য সম্পাদনে বাধ্য এমন কোন ব্যক্তিকে এ বিশেষ কার্যটি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে।

(৩) কোন বিশেষ কার্যসম্পাদন করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য এমন কোন ব্যক্তিকে উক্ত কার্য সম্পাদনে বিরত রাখার মাধ্যমে।

(8) ক্ষতিপূরণের রায় প্রদানের মাধ্যম ব্যতীত অন্য কোন প্রকারে পক্ষসমূহের অধিকার নির্ণয় এবং ঘােষণার মাধ্যমে; অথবা 

(৫) একজন রিসিভার নিয়ােগের মাধ্যমে।


কোথায় এ প্রতিকার দেয়া যায় না?

দেওয়ানী মামলায় সাধারণ প্রতিকার তথা ক্ষতিপূরণের প্রতিকারের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার ব্যবহৃত হয়। এই প্রতিকারসমূহ অধিকারবলে দাবী করা যায় না; আদালতের ইচ্ছার (dissertation) উপর নির্ভর করে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে  যে, শুধুমাত্র দন্ডমূলক আইন কার্যকরী করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা যাবে না। 


স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার ও স্বত্বের প্রশ্নে প্রতিকার


সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রথম অধ্যায়ে ৮ এবং ৯ ধারায় স্থাবর সম্পত্তির স্বত্বসহ। দখল পুনরুদ্ধারের প্রতিকার এবং ৯ ধারায় দখল পুনরুদ্ধার প্রতিকারের বিধান করা হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার (ধারা-৮)

সুনিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারায় বিধান করা হয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসারে উহা নির্ধারিত পন্থায় পুনরুদ্ধার করতে পারবে।


স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়ের (ধারা- ৯)

যথাযথ আইনগত পন্থা ব্যতীত যদি কোন ব্যক্তিকে তার সম্মতি ব্যতীত স্থাবর সম্পত্তি থেকে দখলচ্যুত করা হয় তাহলে সে বা তার মাধ্যমে দাবীদার কোন ব্যক্তি মামলা দায়েরের মাধ্যমে উহার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে, যদিও এরূপ মামলায় অন্য কোন স্বত্বেও প্রশ্ন উপস্থাপন করা যেতে পারে।


সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ৮ এবং ৯ এর মাঝে পার্থক্য


ধারা ৮

ধারা ৯

(১) ৮ ধারায় মামলাকারীকে উচ্ছেদের মামলা করতে হবে এবং স্বত্ব বা মালিকানা

প্রমাণ করে দখলের ডিক্রী লাভ করতে হবে। বাদী উক্ত সম্পত্তিতে তার স্বত্ব প্রমাণ করতে না পারলে কোন প্রতিকার পাবে না।  

(১) অন্যদিকে, ৯ ধারায় সংক্ষিপ্ত প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯ ধারায় মামলায় দখল পুনরুদ্ধারের জন্য বাদীকে সম্পত্তিতে তার কোন স্বত্ব প্রমাণ করার প্রয়ােজন নেই।

(২) ৮ ধারায় স্বত্ব ঘােষণা পূর্বক খাস দখল বা উচ্ছেদের মামলা দায়ের করা হয়।

(২)কিন্তু ৯ ধারায় শুধু দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করা হয়। 

(৩) ধারায় বাদীকে সম্পত্তির স্বত্ব বা মালিকানা প্রমাণ করতে হয়। বাদী

সম্পত্তিতে স্বত প্রমাণ করতে না পারলে কোন ডিক্রী পাবে না এবং মামলাটি খারিজ হবে। 

৩.অন্যদিকে, ৯ ধারা বিধান অনুসারে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য স্বত প্রমাণের প্রয়ােজন হয় না। বাদী সম্পত্তিতে দখলে ছিল এবং তার বিনা অনমতিতে অথবা বেআইনীভাবে তাকে দখলচ্যুত করা হয়েছে- এটুকু প্রমাণ

করলেই চলবে।

৪। ৮ ধারায় যে প্রতিকার দেয়া হয় তা একটি স্থায়ী প্রতিকার 

৪। কিন্তু ৯ ধারার প্রতিকার একটি সংক্ষিপ্ত বা অস্থায়ী ব্যবস্থা।

৫।(8) ৮ ধারায় দখল পুনরুদ্ধারের মামলা বেদখলের বা বিরুদ্ধ দখলের তারিখ থেকে

১২ বছরের মধ্যে দায়ের করতে হবে।

কিন্তু ৯ ধারায় দখল পুনরুদ্ধারের মামলা

বেদখলের তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে করতে হবে।

(৫)  ৮ ধারা স্বত ঘােষণাপূর্বক খাস দখলের মামলা সরকারের বিরুদ্ধে করা যায়।

কিন্তু ৯ ধারার মামলা সরকারের বিরুদ্ধে করা যায় না 

(৬) ৮ ধারার মামলায় আপীল বা review করা যায়।

কিন্তু ৯ ধারার কোন মামলায় প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল বা

review করা যাবে না। 

(৭) ৮ ধারার মামলায় মূল্যানুপাতিক (advalorem) কোর্ট ফি প্রদান করতে হয়।

কিন্তু ৯ ধারায় মামলা দায়ের করতে হলে মূল্যানুপাতিক কোট ফির অর্ধেক কোর্ট ফি প্রদান করতে হয়।



৯ ধারার মামলায় বাদীকে কি কি বিষয় প্রমাণ করতে হবে

৯ ধারার মামলায় বাদীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে প্রমাণ করতে হবেঃ