প্রশ্নঃ প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতির ফলে এবং পুলিশ অফিসারের নিকট অপরাধ স্বীকারোক্তির আইনগত ফলাফল কি? 

প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা স্বীকারোক্তি আদায়ঃ প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা স্বীকারোক্তি আদায় করা হলে সাক্ষ্য আইনের ২৪ ও ২৮ ধারামতে তা অপ্রাসঙ্গিক ও অগ্রহণীয় হবে। ২৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির দ্বারা প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দানের ফলে আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি করেছে এবং আদালত যদি মনে করেন যে, এর ফলে আসামী পার্থিব কোন সুবিধা পাবে বা কোন অসুবিধা এড়াতে পারবে বলে আসামীর ধারণা হওয়ার যথেষ্ট কারণ ঘটেছিল তবে আসামীর সেই স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দানের ফলে সৃষ্ট ধারণা আদালতের মতে পূর্ণভাবে অপসারিত করা হয়, তবে তা প্রাসঙ্গিক হবে।

পুলিশ অফিসারের নিকট স্বীকারোক্তিঃ সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারামতে, পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি গ্রহণীয় নয়। তবে এরূপ স্বীকারোক্তি আসামীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করা না গেলেও তার পক্ষে করা যায়। এই আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে কোন ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলে তা যদি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে না হয়, তবে তা ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না। কিন্তু তার স্বীকারোক্তির ফলে কোন বিষয় উদঘাটিত হলে সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারামতে স্বীকারোক্তির ঐ অংশটুকু প্রমাণ করা যেতে পারে।

স্বীকৃতিকারীর বিপক্ষে স্বীকৃতি প্রমাণ করা যায় কিন্তু পক্ষে নয়—এই বিধির ব্যতিক্রমঃ সাক্ষ্য আইনের ২১ ধারায় বিবৃত সাধারণ বিধি হচ্ছে এই যে, স্বীকৃতি যখন স্বীকৃতিকারীর স্বার্থ-বিরুদ্ধ হয় তখন তা আদালতে গ্রহণযোগ্য, তার স্বার্থের অনুকূলে হলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এই নীতির ব্যতিক্রম হচ্ছে নিম্নরূপ যেক্ষেত্রে স্বীকৃতিকারীর স্বার্থের অনুকূলে হলেও তা গ্রহণযোগ্য।

ব্যতিক্রমঃ 

(১) বিবৃতিকারীর মৃত্যু হলে বা নিখোঁজ হলে ৩২ ধারার বিধানমতে যেগুলি গ্রহণীয় করা হয়েছে।

উদাহরণঃ চট্টগ্রামে একটি অপরাধ করার দায়ে ক অভিযুক্ত হয়েছে। ঢাকা হতে ঐ তারিখে তার লেখা এবং ঐ তারিখে ঢাকায় ডাক চিহ্ন দেয়া একটি চিঠি সে উপস্থাপন করলো। চিঠির তারিখের অন্তর্গত বিবৃতি গ্রহণযোগ্য। কারণ, ক এর মৃত্যু হলে ৩২ (২) ধারা অনুসারে তা গ্রহণযোগ্য হবে।

(২) স্বীকৃতি যখন মনের ও দেহের অবস্থা বর্ণনা করে এবং আচরণ যে অবস্থাকে সমর্থন করে তখন তা গ্রহণীয়। 

উদাহরণঃ অচল মুদ্রা বলে জানা সত্ত্বেও প্রতারণামূলক অচল মুদ্রা নিজ দখলে রাখার দায়ে ক অভিযুক্ত হলো। সে প্রমাণ করতে চায় যে ঐ মুদ্রা অচল কি-না সন্দেহ হওয়ায় এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ একজন লোককে সে ইহা পরীক্ষা করতে বলেছিল এবং সে ব্যক্তি তা পরীক্ষা করে বলেছিল যে এটা খাঁটি । ‘ক’ এটা প্রমাণ করতে পারে।

(৩) স্বীকৃতি যখন অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক হয়।

উদাহরণঃ চোরাই মাল জানা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করার জন্য ক অভিযুক্ত হয়েছে। সে প্রমাণ করতে চায় যে, ঐ মালের বাজার দর হতে কম মূল্যে সে বিক্রয় করতে অস্বীকার করেছিল। এরূপ বিবৃতি স্বীকৃতি হলেও সে তা প্রমাণ করতে পারে। কারণ এগুলির মধ্যে বিচার্য বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত আচরণের ব্যাখ্যা রয়েছে।