যে শিক্ষা ব্যক্তির প্রযুক্তিগত বিকাশসাধনের মাধ্যমে বিশেষ মানসিক ক্ষমতার প্রাধান্যে তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে বৃহত্তর কর্মকেন্দ্রিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রযুক্তিকে নিপুণ করে তােলে, সেই বিদ্যাই হল প্রযুক্তিবিদ্যা।

ব্যক্তিজীবন তথা সমাজ জীবনে প্রযুক্তি বিদ্যার ভূমিকা অসীম। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রযুক্তিবিদ্যা সাহায্য করে থাকে। প্রযুক্তিবিদ্যার বিশাল সাফল্যের মাঝেও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি হল ─

(১) আর্থিক দৈন্যতা: প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের মতাে গরিব দেশের পক্ষে তা সর্বজনীন করা সম্ভব নয়। আধুনিক যন্ত্রপাতির দাম চড়া হওয়ায় তা কেনা সম্ভব হয় না।

(২) চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্যতা : প্রযুক্তিবিদ্যায় চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।

(৩) দক্ষ শিক্ষকের অভাব : প্রযুক্তিবিদ্যার একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব।

(৪) প্রশিক্ষণের অভাব : কর্মরত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে নতুন নতুন যন্ত্র সম্বন্ধে অনেক অজানা জিনিস থেকে যায়। আধুনিক প্রযুক্তি সম্বন্ধে শিক্ষকরা অপরিচিত থাকেন বলে শিক্ষার্থীরা যথার্থ জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়।

(৫) ভাষাগত সমস্যা : আমাদের দেশে শিক্ষার মাধ্যম হল মাতৃভাষা। ফলে ইংরেজিতে লিখিত প্রযুক্তিবিদ্যার বইগুলিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অসুবিধার সম্মুখীন হয়।

(৬) আধুনিকীকরণের অভাব : আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা নেই, ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

প্রযুক্তিবিদ্যার উপস্থিতিতে সমস্যা

(১) মানবিক মিথস্ক্রিয়ার অভাব : প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা মানবিক মিথস্ক্রিয়ার অভাব দেখা যায়। প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষণে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পায় কি্তু শিক্ষক বা সহপাঠীদের মাঝে যে প্রশংসা, আনন্দদায়ক মুহূর্ত থাকে তা প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হয় না।

(২) সংবেদনশীলতার অভাব : সাধারণ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ-শিখন পরিস্থিতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ অনুযায়ী স্নেহপূর্ণ পরিবেশে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারেন। কিন্তু প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে শিখনে এরকম মানবিক সংবেদনশীলতার অভাব দেখা যায়।

(৩) সৃজনশীলতার অভাব : প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষায় প্রােগ্রাম নির্দিষ্ট করা থাকে। এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করে। ফলে এটি যান্ত্রিক ও গতানুগতিক প্রকৃতির। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় না।

(৪) ব্যয়বহুল : প্রযুক্তি ভিত্তিক শিখন ব্যয়বহুল। আমাদের মতাে গরিব দেশে প্রযুক্তির সাহায্যে শিখন বাস্তবক্ষেত্রে সবসময় সম্ভব নয়।

(৫) বিষয়বস্তু উপস্থাপনে অসুবিধা : প্রযুক্তির সাহায্যে বিষয়বস্তু উপস্থাপন অনেকক্ষেত্রেই সুবিধাজনক হলেও কিছু কিছু বিষয় যেমন- রসােপলব্ধিমূলক দীর্ঘ বিষয়, গল্প ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করা অসুবিধাজনক।

উপরােক্ত সমস্যাগুলি ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এইসব সমস্যাগুলির সমাধান করতে না পারলে ধীরে ধীরে আমরা এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে পড়ব।

আবার প্রযুক্তিবিদ্যার অতিরিক্ত ব্যবহারেও কুফল সৃষ্টি হয়, যা সংবেদনশীলতাকে হারিয়ে ক্রমশ যান্ত্রিকতাকে বাড়িয়ে তোলে।