প্রশ্নঃ প্রমাণের দায়িত্ব বলিতে কি বুঝ? নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রমাণের দায়িত্ব কাহার উপরে? যে- কোন তিনটির উত্তর দাওঃ [What do you understand by burden of proof? On whom does the onus lie in the following cases? Answer any three of the followings]
(ক) খ, ক-এর আইন উপদেষ্টা । ক, খ-এর বিরুদ্ধে একটি দানপত্র রদরহিতের জন্য একটি মোকদ্দমা আনয়ন করে । ক-এর অভিযোগ খ তাহার উপর অন্যায় প্রভাব বিস্তার করিয়া উক্ত দানপত্র দলিল করাইয়া লইয়াছেন। খ বলেন উক্ত দানপত্র দলিল বৈধ।
(খ) ওয়াই, এক্স-এর দেহে অস্ত্রোপচারকারী একজন ডাক্তার। ভুল অস্ত্রোপচারের জন্য এক্স ওয়াই-এর বিরুদ্ধে একটি ক্ষতিপূরণ আদায়ের মোকদ্দমা করে। এক্স-এর অভিযোগ তাহার দেহে অস্ত্রোপচারের কোন প্রয়োজন ছিল না। শুধুমাত্র অর্থের লোভে তাহার দেহে অস্ত্রোপচার করা হইয়াছে। ওয়াই বলেন সে, এক্স-এর জীবন বাঁচানোর জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ছিল।
(গ) আয়েশা একজন পর্দানশীন স্ত্রীলোক ৷ আয়েশা দবিরের বিরুদ্ধে একটি বিক্রি দলিল রদরহিত করিবার জন্য একটি মোকদ্দমা আনয়ন করে। অভিযোগ যে, দবির তাহার উপর তঞ্চকতা করিয়া উক্ত দলিল করাইয়া লইয়াছে। দবির বলে যে, সে কোন তঞ্চকতার আশ্রয় গ্রহণ করে নাই, আইনসঙ্গতভাবেই উক্ত দলিল আয়েশা করিয়া দিয়াছে।
(ঘ) ই-র বিরুদ্ধে অভিযোগ ই, এফকে হত্যা করিয়াছে। ই-র বক্তব্য, যখন এফ-কে হত্যা করা হয় তখন ই অপ্রকৃতিস্থ ছিল।
উত্তরঃ প্রমাণের দায়িত্বঃ কোন বিচার্য বিষয় প্রমাণের দায়িত্ব সাধারণত: বাদী পক্ষের উপর থাকে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে তা বিবাদী পক্ষের উপরও বর্তায়ে থাকে। প্রমাণের এরূপ দায়িত্ব কখন কার উপর ন্যস্ত থাকে তা সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা হতে ১১৪ ধারায় বর্ণিত আছে।
যে পক্ষ ইতিবাচক বা কোন ঘটনার অস্তিত্বের দাবি করেন সে পক্ষকে তার বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষ্য উপস্থাপন করে প্রমাণ করতে হয়। এটাই হচ্ছে সাধারণ নিয়ম। কারণ ইতিবাচক বিষয়ে সরাসরি ও সহজে প্রমাণ দেয়া যায়। যে পক্ষ এ দাবি অস্বীকার করেন তার পক্ষে তার বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রদান করা সহজসাধ্য নয়। প্রমাণের ভার যার উপর ন্যস্ত তাকে অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তার স্বপক্ষে আদালতের রায় নিতে হবে, প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নয়।
উত্তর (ক): এক্ষেত্রে ‘ক’ এর আইন উপদেষ্টা হচ্ছে ‘খ’ এবং তাদের মধ্যে একটা আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান। সাক্ষ্য আইনের ১১১ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেখানে পক্ষগণের মধ্যে এক পক্ষের সক্রিয় আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান সেখানে উক্ত পক্ষগণের মধ্যে লেনদেনের ব্যাপারে সরল বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে যে পক্ষ সক্রিয় আস্থার দ্বারা সম্পর্কিত, সে পক্ষের উপর সরল বিশ্বাস প্রমাণের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। যেহেতু ‘ক’ তার আইন উপদেষ্টা ‘খ’ এর বিরুদ্ধে অন্যায় প্রভাবের অভিযোগ এনেছেন সেহেতু লেনদেনটিতে সরল বিশ্বাস প্রমাণ করার দায়িত্ব আইন উপদেষ্টা ‘খ’ এর উপর বর্তায়।
উত্তর (খ): সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারায় বিধান রয়েছে যে, কোন বিষয় যখন বিশেষভাবে কোন ব্যক্তির অবগতির মধ্যে থাকে, তখন সেই বিষয় প্রমাণ করার দায়িত্ব তার উপরই ন্যস্ত । ‘এক্স’ এর জীবন বাঁচানোর জন্য অস্ত্রোপচারের যে প্রয়োজন ছিল সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব অস্ত্রোপচারকারী ডাক্তারের উপর ন্যস্ত।
উত্তর (গ): আয়েশা একজন পর্দানশীন মহিলা। সে দবিরের বিরুদ্ধে তঞ্চকতার অভিযোগ এনে বিক্রি দলিল রদ করতে চায়। পর্দানশীন মহিলার ক্ষেত্রে ১১১ ধারাটি প্রযোজ্য হয় । এক্ষেত্রে দবিরের সাথে আয়েশার বিবাদ এবং দবিরের সাথে আয়েশার কোন আস্থার সম্পর্ক নেই। সেহেতু স্বাভাবিক পন্থায় আয়েশাকে প্রমাণ করতে হবে যে দবির তার উপর তঞ্চকতা করেছিলো।
উত্তর (ঘ): আসামীর মামলা যে ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে তা প্রমাণের দায়িত্ব ১০৫ ধারা অনুযায়ী সেই আসামীর উপর ন্যস্ত। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি একটি অপরাধে অভিযুক্ত হলে মামলাটি যাতে দণ্ডবিধিতে বর্ণিত সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহের মধ্যে পড়তে পারে অথবা দণ্ডবিধিতে বর্ণিত কোন বিশেষ ব্যতিক্রম বা এর কোন অংশে বর্ণিত কোন শর্তের মধ্যে পড়তে পারে বা উক্ত অপরাধ সম্পর্কিত অপর কোন আইনে বর্ণিত কোন শর্তের মধ্যে পড়তে পারে, এরূপ কোন পরিস্থিতির অস্তিত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর ন্যস্ত থাকে। তাই এই ধারার বিধান মোতাবেক ‘এফ’কে হত্যা করার সময় ‘ই’ যে অপ্রকৃতিস্থ ছিল তা প্রমাণ করার দায়িত্ব ‘ই’ এর উপর বর্তায়।
Leave a comment