স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে যে সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে তা হল একবার স্বাক্ষর হওয়ার পর বয়স্ক ব্যক্তি শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার ফলে তারা পুনরায় নিরক্ষরতার অন্ধকারে চলে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে প্রবহমান শিক্ষা প্রকল্প।
প্রবহমান শিক্ষা বা ধারাবাহিক শিক্ষা কর্মসূচি (Continuing Educational Programme, CEP) হল একটি স্বনির্ভর ও জীবনব্যাপী শিক্ষাধারা। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি কার্যকর করা হয়। প্রবহমান শিক্ষা বলতে সেই বিশেষ ধরনের শিক্ষাকে বোঝায় যার দ্বারা নব্য স্বাক্ষর ব্যক্তির অর্জিত শিক্ষা ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রবাহমান শিক্ষা প্রকল্পের লক্ষ্য
প্রবহমান শিক্ষা প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল নব্য সাক্ষর এর অর্জিত শিক্ষার মান ধরে রাখা এবং তা এগিয়ে নিয়ে চলা। এ ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলি হল—
(১) শিক্ষিত সচেতন নাগরিক গড়ে তোলা: প্রবহমান শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষার মানকে ধরে রেখে সচেতন নাগরিক গড়ে তােলা।
(২) উৎপাদনক্ষম করে ভােলা : এই শিক্ষার মাধ্যমে নব্যসাক্ষরদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে উৎপাদনক্ষম করে তোলা হয়।
(৩) পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন : পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তােলা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের মনে ধারণা তৈরি করা।
(৪) জাতীয় সংহতিবােধ সৃষ্টি করা : নব্য সাক্ষর ব্যক্তিদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সম্পর্কে বােধ সৃষ্টি করা।
(৫) জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : এই শিক্ষার মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানকে আরও উন্নত করা।
(৬) পরিবার পরিকল্পনা : পরিবার পরিকল্পনা সুযোগ সম্পর্কে সচেতন করে তােলা।
(৭) সুস্থ সম্পর্ক তৈরি : সাংস্কৃতিক-অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বিনোদনমূলক আচরণ ইত্যাদির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সুস্থও সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করা।
(৮) শিক্ষিত সমাজ গড়ে তােলা : প্রবহমান শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনে ইচ্ছুক সকল মানুষজনের কাছে গ্রন্থাগারের পরিষেবা দানের মাধ্যমে পুস্তকের জোগান দেওয়া, ধীরে ধীরে শিক্ষিত সমাজ গড়ে তােলা। এই লক্ষ্যসমূহকে বাস্তব রূপ দিতে জেলা, ব্লক, গ্রাম, শহর, পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল, পাড়া, ক্লাব, মহিলা সমিতি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a comment