শিক্ষাবিদ জে. পি. নায়েক প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বাইরে সংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থাকে শিক্ষা বলে। কুম্বস্ এবং আহমেদ প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংজ্ঞায় বলেছেন一
-
এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রথাগত বিদ্যালয়ের বাইরে সংগঠিত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
-
এই শিক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট শিখন পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়।
-
এই শিক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট জনগণের (শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক) জন্য স্থির করা হয়।
প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় সেগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল一
(১) প্রাসঙ্গিকতা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কর্মসূচি প্রয়ােজনভিত্তিক এবং সকল বয়সের শিক্ষার্থীদের চাহিদার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়।
(২) নমনীয়তা: নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার কড়াকড়ি প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় একেবারেই নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা সময়, স্থান, ব্যাপ্তি, হাজিরা, পাঠ্যসূচি, পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন প্রভৃতি দিক থেকে অত্যন্ত নমনীয়।
(৩) ব্যবহারিক দিক: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় ক্ষেত্রের ওপর পাঠদান বা কর্মসূচি গ্রহণের ব্যবস্থা থাকে।
(৪) বিদ্যালয়ছুট শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় বিদ্যালয়ছুট শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
(৫) নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকে না। শিক্ষার্থী নিজের কাজের ফাকে যে-কোনাে সময়ে পড়াশােনা করতে পারে।
(৬) বয়সসীমা না থাকা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে। কোনাে নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকেনা।
(৭) নির্দিষ্ট শিক্ষালয় না থাকা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার পঠনপাঠন চার দেয়ালে ঘেরা কোনাে নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয় না।
(৮) কম খরচে শিক্ষার সুবিধা: প্রথাগত শিক্ষার তুলনায় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার খরচ অনেক কম।
(৯) পাঠক্রম নির্বাচনে স্বাধীনতা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা নিজের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী আলাদা আলাদা পাঠক্রম নির্বাচন করতে পারে।
(১০) মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার নমনীয়তা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে কঠোর নয়। একসঙ্গে সব পত্রের পরীক্ষায় না বসলেও চলে।
(১১) জীবনব্যাপী জ্ঞানলাভের সুবিধা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় যেহেতু শিক্ষার্থীর বয়সজনিত কোনাে বাধা নেই, শিক্ষার্থী তাই জীবনব্যাপী পড়াশােনা করতে পারে এবং এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে সারাজীবন ধরে নতুন নতুন তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের সুযােগ পায়।
(১২) নির্দেশভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় স্টাডি মেটিরিয়াল বিশেষভাবে প্রস্তুত করে এবং বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়ে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠানাে হয়।
(১৩) বিশেষ ধরনের সাহায্যদান: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কোনাে কারণে কোনাে শিক্ষার্থী প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণে অপারগ হলে, এই শিক্ষাপদ্ধতি তাদের শিক্ষাগ্রহণে সাহায্য করে।
প্রথাগত বা বিধিবদ্ধ শিক্ষার সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রথাবহির্ভূত বা প্রথামুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও এই শিক্ষাব্যবস্থাও সম্পূর্ণ দুটিমুক্ত নয়। তবে সমাজের বিস্তৃত অংশের মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ায় এই শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।
Leave a comment