স্বাধীনতা লাভের পর জাতীয় সরকার ভারতে উচ্চশিক্ষার সংস্কার ও অগ্রগতির জন্য ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করে।
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্মণ-এর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সদস্যরূপে ছিলেন—
ভারতীয় সদস্য :
- ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্মণ (Dr S Radhakrishnan)—সভাপতি,
- শ্রী নির্মল কুমার সিদ্ধান্ত (Sri Nirmal Kumar Sidhanta) সম্পাদক,
- ড. মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha),
- ড. এ লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়র (Dr A Lakshmanswami Mudaliar),
- ড. তারাচঁ।দ (Dr Tara Chand),
- ড. জাকির হােসেন (Dr Zakir Hussain),
- ড. করম নারায়ণ বহল (Dr Karm Narayan Bahl)
এ ছাড়া কমিশনে তিনজন বিদেশি শিক্ষাবিদকে সদস্যরূপে গ্রহণ করা হয়, যথা—
বিদেশি সদস্য:
- ড. জেমস এফ ডাফ (Dr James F Duff),
- ড. আর্থার মরগ্যান (Dr Arthur E Morgan),
- ড. টি গার্ট (Dr John J Tigert)।
গৃহীত কর্তব্য: স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সদস্যগণ বিভিন্ন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, বহু কলেজের কার্যপদ্ধতি পরিদর্শন করে এবং দেশের শিক্ষা সমস্যার নানাদিক পর্যালােচনা করে ৭৪৭ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি সুচিন্তিত রিপাের্ট পেশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন পেশ করার পর সুপারিশগুলি কার্যকর করার জন্য কমিশন নিজেও উদ্যোগী হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ (CABE)-এ সুপারিশগুলি নিয়ে আলােচনাও করা হয়। এরপর কমিশন নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করে—
(১) প্রশ্নপত্র রচনা ও প্রেরণ: কমিশন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নানান তথ্যসংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করে এবং ওই প্রশ্নপত্র দেশের প্রতিটি রাজ্যে উত্তরদানের অনুরােধ জানিয়ে পাঠানাে হয়। প্রশ্নপত্র পাঠাতে হয়—
- দেশের প্রতিটি রাজ্য সরকারের বিধানমণ্ডলীর সদস্যকে,
- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের,
- রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীদের,
- রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা,
- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,
- মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং
- প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানকে।
(২) রাশিবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে সংযােগসাধন: প্রশ্নপত্রের উত্তর সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের সংযােগসাধনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সংযােগসাধনের মূল উদ্দেশ্য তথ্যসংগ্রহ ও তথ্যবিশ্লেষণে প্রয়ােজনীয় সারবস্তু গ্রহণ।
(৩) সমীক্ষা ব্যবস্থা: প্রশ্নপত্র দ্বারা তথ্যসংগ্রহের পর কমিশনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিত হয়ে সমীক্ষা চালানাের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ ঘটে।
(৪) প্রতিবেদন প্রস্তুত: কমিশন পরােক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে সংগৃহীত তথ্যগুলি পর্যালােচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কমিশন সেই প্রতিবেদনটি সরকারের নিকট পেশ করে।
(৫) উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন: কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানােন্নয়ন করা। তাই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। শুধুমাত্র সংখ্যাগত বৃদ্ধি নয়, শিক্ষাকেন্দ্রগুলির গুণগত মান উন্নয়নের জন্য গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত ও গৃহীত হয়।
(৬) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কাঠামাের উন্নয়ন প্রচেষ্টা: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন উচ্চশিক্ষার কাঠামােগত উন্নয়নের জন্য ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে University Grants Commission বা ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ বা ‘UGC’ গঠন করে। UGC-এর উপর সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মহাবিদ্যালয়গুলির আর্থিক ও পরিকাঠামােগত উন্নয়নের দায়িত্বভার অর্পিত হয়।
(৭) বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার মানােন্নয়ন: কমিশনের সদস্যরা সাধারণধর্মী শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার মানােন্নয়নের কথা বলেন। উভয় বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধনের সুযােগ সৃষ্টির কথা বলা হয়।
(৮) গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ: কমিশনের গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশকে কার্যকর করার জন্য ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় গ্রামীণ উচ্চশিক্ষা সংসদ বা National Council of Rural Higher Education গঠন করা হয়। এই সংসদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ১৫টি সংস্থাকে গ্রামীণ উচ্চশিক্ষার সংস্থায় রূপান্তরিত করা হয়। এরকম একটি সংস্থা হল শ্রীনিকেতন।
Leave a comment