সংজ্ঞা : প্রকৃতির সহায়তায় মানুষ নিজের ও সমাজের প্রাথমিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান) পূরণে প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ, প্রতিপালন ও উৎপাদনভিত্তিক যেসব কাজ করে, তাকে প্রাথমিক বা প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলে। কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, বনজসম্পদ সংগ্রহ, পশুপালন ও শিকার বৃত্তি—এই পাঁচটি অর্থনৈতিক উদ্যোগকে এককথায় প্রাথমিক অর্থনৈতিক কাজ বলা হয়।
প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বৈশিষ্ট্য
(১) প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে মানুষ তার প্রাথমিক চাহিদা মেটানাের চেষ্টা করে।
(২) প্রকৃতি থেকে সরাসরি সম্পদ সংগ্রহ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
(৩) মানব সভ্যতার ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায় যে প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাগুলিতে মানুষ সর্বপ্রথম যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শিল্প বা ব্যাবসাবাণিজ্য শুরু করার অনেক আগে থেকেই মানুষ চাষবাস, মৎস্যশিকার, পশুপালন ইত্যাদি কাজ শুরু করেছে। তাই এটি প্রাচীনতম অর্থনৈতিক উদ্যোগ।
(৪) প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি। যেমন—উপযুক্ত তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মাটি, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদির সহায়তা পেলে তবেই কৃষিকাজ করা যায়।
(৫) পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
(৬) প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজ জমি-নির্ভর (land-centric)। কারণ জমি না থাকলে চাষাবাদ, পশুপালন করা যায় না।
(৭) প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজ গ্রামভিত্তিক। গ্রামকে কেন্দ্র করে প্রথম স্তরের অর্থনৈতিক কাজ গড়ে ওঠে।
(৮) এই ধরনের কাজকর্মে দৈহিক অর্থাৎ কায়িক শ্রম বেশি লাগে এবং সব কাজ ঘরের বাইরেই করতে হয়। কাজের প্রকৃতি বা ধরন এরকম হওয়ায় এই কাজে নিযুক্ত কর্মীদের Red-collar Workers (লাল কলার শ্রমিক) বলা হয়।
সংজ্ঞা : যেসব ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শক্তিসম্পদ ও সংস্কৃতির সাহায্যে মানুষ প্রাথমিক কর্মকাণ্ড থেকে উৎপন্ন দ্রব্যের আকৃতি ও গঠনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তার কার্যকারিতা, উপযােগিতা, গুণগতমান ও মূল্য বৃদ্ধি করে অধিক ব্যবহারােপযােগী ভােগ্যপণ্য উৎপাদন করে সেইসব ব্রিয়াকলাপকে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিয়াকলাপ বলে। যেমন—নির্মাণ কার্য ও শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন এই স্তরের কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
গৌণক্ষেত্রের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বৈশিষ্ট্য
(১) দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে মানুষ স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করে ও ভােগ্যপণ্যের চাহিদা মেটায়।
(২) দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজ সম্পদের মূল্য, মান, উপযােগিতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। যেমন—লােহা ও ইস্পাত শিল্পে আকরিক লােহা থেকে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়। ইস্পাতের মূল্য, মান, উপযােগিতা ও কার্যকারিতা আকরিক লােহার চেয়ে অনেক বেশি।
(৩) দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজ উন্নত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাই শিক্ষায়, গবেষণায়, কারিগরি ক্ষেত্রে যে দেশ যত উন্নত, সেই দেশ আলােচ্য অর্থনৈতিক কাজেও তত অগ্রণী।
(৪) দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজে জড়শক্তি (যেমন কয়লা, খনিজ তেল, তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি) সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
(৫) দ্বিতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজ সাধারণত নগরভিত্তিক। অর্থাৎ নগর বা শহরকে কেন্দ্র করে এই কাজ গড়ে ওঠে। যেমন-জামশেদপুরের লােহা ও ইস্পাত শিল্প, মুম্বাইয়ের কার্পাসবয়ন শিল্প।
(৬) এটি এক বিশাল পরিসরের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ। এই ধরনের কাজে দেশের অগ্রগতি দ্রুত বিকাশ লাভ করে। এই উৎপাদনমূলক কাজে নিযুক্ত কর্মীদের Blue-collar Workers (নীল কলার শ্রমিক) বলা হয়।
Leave a comment