উদ্দীপক দ্বারা সৃষ্ট উদ্দীপনা জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অন্তর্বাহী সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছেলে, আমাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের সংবেদনের সৃষ্টি হয়। সেই সংবেদন যখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ তুলে ধরে, তখন হয় প্রত্যক্ষণ। সংক্ষেপে বলা যায়, অর্থপূর্ণ সংবেদনই হল প্রত্যক্ষপ। যেমন, শব্দ শােনা সংবেদন কিন্তু শব্দের উৎস, প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান হল প্রত্যক্ষণ।
প্রত্যক্ষণের উল্লেখযােগ্য চারটি সংজ্ঞা হল-
-
ই. ফেনটিনাে এবং জি. এম. পিনোন্ডসের মতে, প্রত্যক্ষণ হল সংবেদনের সংব্যাখ্যাত রূপ।
-
স্টাউটের মতে, প্রত্যক্ষণ অনেকগুলি সংবেদনের সমন্বয়ে গঠিত।
প্রত্যক্ষণের মনােবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বেশ কয়েকটি স্তর অতিক্রম করার পর সংবেদন প্রত্যক্ষণের পর্যায়ে পোঁছােয়। এই স্তরপগুলিকে মােটামুটি পাঁচভাগে ভাগ করা যায়—
(১) পৃথক্করণ: পৃথক্করণ হল প্রত্যক্ষণের প্রথম স্তর। এই স্তরে সংবেদনকে পৃথক করা হয়।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা যদি কোনাে বস্তুকে কলম হিসেবে জানতে চাই তাহলে কলম নয় এমন সব বস্তু যেমন—পেনসিল, কম্পাস, রাবার, খাতা, বই ইত্যাদি থেকে সেটি যে আলাদা তা জানতে হবে।
(২) সদৃশকরণ: সদৃশকরণ হল প্রত্যক্ষণের দ্বিতীয় স্তর। এই স্তরটিতে কোনাে বস্তু সম্পর্কে বর্তমান সংবেদনের সঙ্গে পূর্বে গৃহীত সংবেদনগুলির সাদৃশ্য অনুসন্ধান করা হয়। এক টাকার কয়েনকে সঠিকভাবে জানতে হলে অতীতে যে সমস্ত কয়েন-এর অভিজ্ঞতা আছে তার সঙ্গে বর্তমান কয়েন-টির যে সাদৃশ্য আছে তা বুঝতে হয়। এইভাবে বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সদৃশকরণের প্রক্রিয়া।
(৩) অনুষঙ্গ ও পুনরুৎপাদন: এটি হল প্রত্যক্ষণের তৃতীয় স্তর। এই স্তরে মানুষের মনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার পুনরুৎপাদন ঘটে। পাশাপাশি পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতার অনুষঙ্গ স্থাপিত হয়। এক টাকার কয়েন’-এর প্রত্যক্ষণের জন্য আগে কয়েনটি দেখে যে ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার পুনরুৎপাদন এবং অনুষঙ্গ স্থাপনের মধ্য দিয়ে কয়েনটিকে সঠিকভাবে শনাক্ত করার দরকার হয়।
(৪) স্থান-কাল নির্দেশ: এটি প্রত্যক্ষণের চতুর্থ স্তর। এই স্তরে, সংবেদনটির স্থান এবং কাল নির্দেশ করা হয়। এক্ষেত্রে। সংবেদন বহির্জগতের কোথা থেকে এবং কখন উৎপন্ন হয়েছে, সে-বিষয়টি স্থির করা হয়।
(৫) বিশ্বাস: এটি প্রত্যক্ষণের শেষ স্তর। প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা হয়, সেই বিষয়ে প্রত্যয়ই হল প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস। সংবেদনকে প্রত্যক্ষণের পর্যায়ে নিয়ে যেতে গেলে এই বিশ্বাসের স্তরে পৌঁছােতে হবে।
ওপরের সংক্ষিপ্ত আলােচনা থেকে বােঝা যায়, উদ্দীপকের দ্বারা সৃষ্ট সংবেদনকে প্রত্যক্ষণের পর্যায়ে পোঁছােতে হলে মুহূর্তের মধ্যেই তাকে পরপর পৃথক্করণ, সদৃশকরণ, অনুষঙ্গ ও পুনরুৎপাদন, স্থান-কাল নির্দেশ এবং বিশ্বাস—এই পাঁচটি স্তর অতিক্রম করতে হয়।
Leave a comment