প্রত্যক্ষণ হল সংবেদনের অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা। অন্য দিকে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ হল সংবেদনের ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যা। অনেক মনােবিদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষপকে ‘মিথ্যা প্রত্যক্ষণ নামে অভিহিত করেছেন। হালকা অন্ধকারের মধ্যে রাস্তায় পড়ে থাকা দড়িকে অনেক সময় আমরা সাপ মনে করি—এটি হল ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ। কিন্তু আলােকিত অবস্থায় সেটিকে দড়ি হিসেবেই দেখি—এটি হল প্রত্যক্ষণ।

ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের কারণগুলিকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়

(১) শারীরিক কারণ: প্রতিধ্বনি এবং আয়নায় প্রতিবিম্ব এর উদাহরণ। প্রতিবিম্বকে আয়নার পিছনে বলে মনে করা হয়, কারণ পিছন থেকেই আলাে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে। প্রতিধবনিতে মনে হয় বহু দূরে কেউ একই শব্দ করছে। এর কারণ হল ওই স্থান থেকেই শব্দ প্রতিফলিত হয়ে আমাদের কানে আসছে।

(২) অভ্যন্তরীণ বা মানসিক কারণ: ভ্রান্ত প্রত্যক্ষপের অভ্যন্তরীণ কারণগুলি হল

  • ভয় বা উৎকণ্ঠা: ভয় বা উৎকণ্ঠার কারণে অনেক সময়ে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ ঘটে থাকে। অন্ধকারের মধ্যে হাঁটার সময়ে অনেকের মনে হয় যেন তার পেছনে কেউ হাঁটছে।

  • প্রত্যাশা: প্রত্যাশা মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ সৃষ্টি করে। যেমন, অনেকক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার সময়ে প্রশ্নপত্র পাওয়ামাত্রই কোনা একটি প্রশ্নের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের ফলে ভুল উত্তর লিখে ফেলে। এক্ষেত্রে ভুল উত্তর দানের পেছনে কাজ করে বিশেষ প্রশ্নটি পাওয়ার প্রত্যাশা।

  • অভ্যাস ও পরিচিতি: অভ্যাস এবং পরিচিতির কারণেও আমাদের মধ্যে অনেক সময় ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ ঘটে থাকে। নিজের ভুল লেখা তাই আমাদের চোখে পড়ে না।

  • সন্দেহ ও ঈর্ষা: ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের আর-একটি কারণ হল সন্দেহ এবং ঈর্ষা। সন্দেহের বশে অনেক সময় আমরা স্বাভাবিক কোনাে আলােচনাও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করি। এ ছাড়া ঈর্ষার কারণে আমরা শত্রুকে দেখলেই তার কুৎসিত রূপটি মনে করি।

  • ইন্দ্রিয়জনিত অসংগতি: অনেকক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের অসংগতির জন্য আমাদের ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ হয়। এই কারণে অনেক সময় জন্ডিস রােগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাদা রঙের ফুলকে হলুদ রঙের দেখে।

  • বৈপরীত্য: যদি দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী বস্তুকে পাশাপাশি রাখা হয়, তাহলেও আমাদের ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ ঘটতে পারে। যেমন, একটি লম্বা বস্তুর পাশে একটি অল্পদীর্ঘ বস্তু রাখলে, অল্পদীর্ঘ বস্তুটিকে তার প্রকৃত আকৃতির তুলনায় আরও বেশি অল্পদীর্ঘ বলে মনে হয়।